City of Education

Uncategorized

Notice, Uncategorized

8. পারফরমেন্স বেজড গ্র্যান্টস ফর সেকেন্ডারি ইন্সটিটিউশনস (পিবিজিএসআই) স্কিমের আওতায় উপজেলা/থানা শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী পুরষ্কার (UBSA)” এবং “উচ্চ মাধ্যমিক সমাপনী পুরষ্কার (HSCA)” প্রদানের লক্ষ্যে সকল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদশে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন উপজেলাসমূহের নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি-এর একাউন্ট খোলা প্রসঙ্গে।

Download now

Uncategorized

অনলাইন জন্ম নিবন্ধন কি ও কেন

&&& অনলাইন জন্ম নিবন্ধন কি ও কেন &&&& ১. জন্ম নিবন্ধন কী? (এ সংক্রান্ত আইন/ নীতিমালা) জন্মের পর সরকারি খাতায় প্রথম নাম লেখানোই জন্ম নিবন্ধন। একটি শিশুর জন্ম নিজ দেশকে, বিশ্বকে আইনগতভাবে জানান দেয়ার একমাত্র পথ জন্মের পর জন্মনিবন্ধন করা। নবজাতকের একটি নাম ও একটি জাতীয়তা নিশ্চিত করতে এটি হচ্ছে প্রথম আইনগত ধাপ। জন্ম নিবন্ধন প্রতিটি শিশুসহ বয়স্কদেরও একটি অধিকার। এটি নাগরিক অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। পৃথিবীতে একটি শিশু জন্মানোর পর রাষ্ট্র থেকে প্রথম যে স্বীকৃতি সে পায় সেটি হলো জন্ম নিবন্ধন। দেশের অন্যান্য নাগরিকের সাথে সে সমান অধিকারে এক কাতারে সামিল হয় এই জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে। প্রথম জন্ম নিবন্ধনের অধিকার জাতিসংঘের শিশু সনদে (Convention on the Rights of the Child – CRC) স্পষ্ট উল্লেখ আছে। জন্ম নিবন্ধনের মধ্যদিয়ে একটি শিশু একটি ‘নাম’ লাভ করে যা সারাজীবন তাকে একটি পরিচিতি দেয়। জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে একটি শিশু প্রথম নাগরিকত্বও লাভ করে। জন্মসনদ অত্যাবশ্যকীয় করার লক্ষ্যে সরকার নতুন করে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন ২০০৪ প্রণয়ন করে। জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, শিশু অধিকার সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে আইনটি ৩ জুলাই. ২০০৬ থেকে কার্যকর করা হয়েছে। জন্ম নিবন্ধন আইনে বলা হয়েছে, বয়স, জাতি-গোষ্ঠি, ধর্ম-কিংবা জাতীয়তা সকল নির্বিশেষে বাংলাদেশে জন্ম গ্রহণকারী প্রত্যেকটি মানুষের জন্য জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষে জন্মনিবন্ধন কর্তৃপক্ষ নিবন্ধনকারীকে একটি সার্টিফিকেট দেবেন। সরকার ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক জন্মনিবন্ধন কৌশল প্রণয়ন করেছে যা চলতি ২০১০ সালের শেষ নাগাদ চূড়ান্ত হয়ে যাবে। ২. জন্মনিবন্ধনের গুরুত্ব কী? কেন জন্ম নিবন্ধন করতে হবে? জন্মনিবন্ধনের গুরুত্বঃ ২০০৯ সাল থেকে ১৬টি মৌলিক সেবা পেতে জন্মসনদ প্রয়োজন হবে। বয়স প্রমানের জন্য নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রে জন্ম সনদ বা উহার সত্যায়িত ফটোকপি ব্যবহার করতে হবে। এর মধ্যে আছে- ০১ পাসপোর্ট ইস্যু; ০২ বিবাহ নিবন্ধন; ০৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি; ০৪ সরকারী, বেসরকারী ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগদান; ০৫ ড্রাইভিং রাইসেন্স ইস্যু; ০৬ ভোটার তালিকা প্রণয়ন; ০৭ জমি রেজিষ্ট্রেশন; ০৮ ব্যাংক একাউন্ট খোলা; ০৯ আমদানী বা রপ্তানী বা উভয় লাইসেন্স প্রাপ্তি; ১০ গ্যাস, পানি, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তি; ১১ করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) প্রাপ্তি; ১২ ঠিকাদারী লাইসেন্স প্রাপ্তি; ১৩ বাড়ির নক্সা অনুমোদন; ১৪ গাড়ি রেজিষ্ট্রেশন; ১৫ ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি; ১৬ জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি; জন্মসনদ থাকলে বাল্যবিবাহের সুযোগ থাকবে না। শিশুশ্রম বন্ধ হবে। ১ জানুয়ারি, ২০০৯ থেকে উল্লি­খিত যে কোন সেবা পেতে জন্মসনদ দেখাতে হচ্ছে। [বি: দ্র: এই আইনের বিধান বা তদধীন প্রণীত বিধি লংঘনকারী নিবন্ধক বা কোন ব্যক্তি অনধিক ৫০০.০০ (পাঁচশত) টাকা অর্থদন্ডে অথবা অনধিক দুইমাস বিনাশ্রম কারাদন্ডে অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন। – ধারা-২১, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪] কেন জন্ম নিবন্ধন করতে হবেঃ জন্ম নিবন্ধনের একটি তাৎপর্য আছে। জন্ম নিবন্ধন হলো একটা মানুষের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। রাষ্ট্র এইভাবে স্বীকার করছে যে, হ্যাঁ,তুমি শিশু রূপে এ রাষ্ট্রের একজন ভবিষ্যৎ নাগরিক হয়ে এসেছো। তোমাকে এ রাষ্ট্রের স্বীকৃত নাগরিকের মর্যাদা ও সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। তোমাকে স্বাগতম। সুতরাং ভবিষ্যতে রাষ্ট্র থেকে যেকোনো সুযোগ-সুবিধা পেয়ে পূর্ণাঙ্গ ও প্রতিষ্ঠিত মানুষ হওয়ার প্রয়োজনে জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন রয়েছে। জন্ম নিবন্ধন না করালে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া যায় না। মর্যাদা পাওয়া যায় না। সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না। আইনগত সমস্যার সমাধান করা যায় না ইত্যাদি । এসব কারণে জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। ৩. জন্ম নিবন্ধন করলে কী কী সুবিধা হয়? না করলে কী কী অসুবিধা হয়? জন্ম নিবন্ধন করলে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে সুবিধা হয়ঃ জন্ম নিবন্ধন করা থাকলে একজন শিশু বা একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ বহু ধরনে সুবিধা পেতে পারেন। চাহিদামতো প্রকৃত বয়স প্রমাণ করা যায় জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র দিয়ে। যেমন- শিশুদের স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় প্রকৃত বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র জমা দিতে হয়। না হলে স্কুলে ভর্তি করানো যায় না। বিদেশ ভ্রমন করতে হলে আমাদের পাসপোর্ট করতে হয়। পাসপোর্ট করতে গেলেও প্রকৃত বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র জমা দিতে হয়। না হলে পাসপোর্টই করা যায় না। নতুন ভোটার হতে হলে বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হয়। এ বয়স প্রমাণের জন্যও জন্মনিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। সরকারী-বেসরকারী সব ধরনের চাকুরীর ক্ষেত্রে বয়স প্রমাণের জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। বিয়ে করতে গেলেও জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। কারণ ছেলের বয়স ২১ বছর ও মেয়ের ১৮ বছর পূর্ণ না হলে কাজী বিয়ে পড়ান না। সেটা আইনসঙ্গতও নয়। সুতরাং জন্ম নিবন্ধন সনদ না হলে বিয়েতেও বাধা আসে। শিশুর প্রকৃত বয়স নির্ণয় করা যায় শুধুমাত্র তার জন্ম নিবন্ধন সনদ থেকে। তাই আদালতেও অনেক সময় শিশুদের বিরম্নদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ থেকে সহজে খালাস করা যায় একমাত্র জন্ম নিবন্ধন সনদের সাহায্যে। মৌলিক জনসংখ্যা তথ্য জানা যায় জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রমের ফলাফল থেকে। তাই জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ও এগুলোর মনিটরিং এর ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ যথেষ্ট সহায়তা করে। শিশুসহ সকল নাগরিকের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র থাকা একটি মর্যাদার বিষয়। এ সনদ একজন মানুষকে রাষ্ট্রের গর্বিত নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং পারস্পরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতেরও ব্যবস্থা করে। জন্ম নিবন্ধনকৃত শিশুরা রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে বেড়ে উঠতে পারে এবং দারিদ্র্য মুক্তির পথ খুঁজে পায়। তারা অন্যায়ভাবে কোনো ব্যক্তিবিশেষ বা সমাজের কোনো গোষ্ঠি দ্বারা শোষণ, লাঞ্জনা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বা পাচার থেকে রেহাই পায়। জমি-জমা ক্রয় ও বিক্রয়ের সময়ও জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়। জটিল কোনো চিকিৎসা দেয়ার সময়ও (অপারেশন, থেরাপি), জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়। সরকারী সুযোগ-সুবিধা যেমন শিশু খাদ্য, ফ্রি চিকিৎসা, বয়স্ক ভাতা, খাসজমি ও জলমহল বরাদ্দ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। ব্যবসা বাণিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও একজন ব্যবসায়ীর জন্ম সনদ প্রয়োজন হয়। জন্ম নিবন্ধন না করলে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে সমস্যা বা অসুবিধা হয় জন্ম নিবন্ধন না করালে আধুনিক রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে যেসব সমস্যা হয় তা নিম্নরুপঃ- শিশু হিসেবে শিশুদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয়। যেমন- মেধাবী হওয়া সত্বেও ভালো একটা স্কুলে ভর্তি হওয়া যায় না। সঠিক সময়ে সঠিক ও উন্নতমানের চিকিৎসা পাওয়া যায় না। নিরাপত্তাসেবা থেকে বঞ্চিত হতে হয় শিশুদের। আদালতে মিথ্যা অভিযোগ প্রমাণের জন্যও প্রকৃত বয়স প্রমাণ করতে না পারার কারণে অনেক শিশুকে বছরের পর বছর জেল বা হাজতে থাকতে হয়। পাসপোর্ট করা যায় না। তখন প্রয়োজন সত্বেও বিদেশে যাওয়া যায় না। ভোটার হওয়া যায় না। তখন রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি নির্বাচনে নিজের পছন্দ/ অপছন্দ প্রয়োগ করা যায় না। যোগ্যতা সত্বেও ভালো চাকুরীতে যোগদান করা যায় না। বিয়ের মতো সামাজিক কাজেও বাধা আসে। রাষ্ট্র জনগণের জন্য প্রয়োজনমত সেবা দিতে পারে না। জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকায় শিশুরা লেখাপড়া থেকে দূরে ছিটকে পড়ে বিপদগামী হয়। পরে সমাজের বোঝা হয়ে পড়ে। জটিল চিকিৎসা নেয়া যায় না। তখন অনেক সময় জীবনহানিও ঘটে। জমি-জমা ক্রয়-বিক্রয় করা যায় না। সরকারী-বেসরকারী সেবা ও সম্পদের বরাদ্দ পাওয়া যায় না। ব্যবসা-বাণিজ্য ভালোভাবে করা যায় না। ৪. কখন জন্ম নিবন্ধন করতে হয়? আইন অনুসারে সদ্যজাত শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে

Uncategorized

স্মার্ট দেশের স্বপ্ন ছোঁয়ার আকাঙ্ক্ষায় রূপান্তর

ড. এম তারিক আহসান স্মার্ট দেশের স্বপ্ন ছোঁয়ার আকাঙ্ক্ষায় রূপান্তরহাজার বছরের বৈশ্বিক ইতিহাসে শিক্ষাধারার বড় বড় রূপান্তরের প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় যুগে যুগে। এসব রূপান্তরের পেছনে কাজ করেছে বিভিন্ন ভূরাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব। কখনো এ রূপান্তর ঘটেছে পুরো পৃথিবীতে, কখনো হয়তো কোনো নির্দিষ্ট ভূখন্ডে। বর্তমান বিশ্ব শিক্ষাধারার একটি বড় রূপান্তরের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা রূপান্তর কার্যক্রম বৈশ্বিক পরিবর্তনেরই অংশ। বৈশ্বিক পরিবর্তনের আলোকে বাংলাদেশের শিক্ষায় রূপান্তরকে নিজেদের মতো করে বাস্তবে রূপ দিতে হলে চাই অতীতকে ফিরে দেখা, বর্তমানকে উপলব্ধি করা এবং ভবিষ্যৎকে অনুধাবন করা। বাংলাদেশ যে স্বপ্ন ছোঁয়ার আকাক্সক্ষা ধারণ করেছে, তা বাস্তবে রূপ দিতে শিক্ষাব্যবস্থার রূপান্তরের এখনই সঠিক সময়! কারণ ২০২৩-এ যে শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হলো, সে হবে ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশে ২৪ বছরের স্মার্ট নাগরিক। বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা রূপান্তর কার্যক্রম নিজেদের মতো করে সাজানোর প্রয়োজনে প্রথমেই শিকড়ের অনুসন্ধান করে দেখা যাক। বাংলায় মানব বসবাসের ইতিহাস হাজার বছরের। প্রাচীন বাংলার শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো গড়ে উঠে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর ভিত্তি করে। তবে সেই শিক্ষা কাঠামো শুধু ধর্মীয় শিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হয়নি। প্রাচীন বাংলার মানুষ পরিচালিত শিক্ষা কাঠামোতে পরাবিদ্যা/অধ্যাত্মবাদ ও অপরাবিদ্যা/পার্থিব বৈষয়িক শিক্ষা প্রচলিত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে সম্রাট অশোকের সময়ে এসে বৌদ্ধধর্মের ব্যাপক প্রসারের সময় বাংলার স্তরভিত্তিক গণশিক্ষা কাঠামো গড়ে ওঠার প্রমাণ মেলে যেখানে প্রাথমিক (০-১৬ বছর) ও পঞ্চবিদ্যার (১৬ বছরের ওপরের শিক্ষার্থী) প্রসার ঘটে। পরে সেন আমল, মুসলিম সুলতানি ও মুঘল আমলে শিক্ষায় যুগের চাহিদা পূরণে নতুন নতুন বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি এবং ধীরে ধীরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার স্তরবিন্যাস করা। প্রাচীন বাংলার শিক্ষার কাঠামো হিসেবে টোল, গুরুগৃহ, পাঠশালা, গুরুকুল, মক্তব, মাদ্রাসার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছিল এলাকাভিত্তিক। ছিল না কোনো বয়সের বাধা, সময়ের বাধা কিংবা সুনির্দিষ্ট শিক্ষাক্রম। শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী মিলে শিক্ষাক্রম নির্ধারণ করতেন, তা হতো এলাকার চাহিদাভিত্তিক ও কর্মমুখী এবং এলাকার মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণে এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হতো। সুখময় সেনগুপ্ত তার বঙ্গদেশীয় ইংরেজি শিক্ষা বইয়ে বাংলায় ধর্ম প্রচারক উইলিয়াম ওয়ার্ডের (১৮০৩) রিপোর্ট অনুযায়ী বলেন, ‘বাংলার সব গ্রামেই সাধারণ বিদ্যালয় খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।’ প্রাচীন বাংলার শিক্ষা কাঠামো এবং তার রূপান্তর প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ কাঠামো অনেক নমনীয়, জীবনমুখী, প্রয়োগমুখী, এলাকাভিত্তিক, অংশগ্রহণমূলক এবং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তনধর্মী ছিল। এরকম একটি শিক্ষা কাঠামো বাংলার মানুষের উন্নয়নে কেমন ভূমিকা রাখতে পেরেছে? বাংলার শিক্ষা মডেল বিশ্বকে ব্রহ্মগুপ্ত, আর্যভট্টর মতো গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ উপহার দিয়েছে। এই শিক্ষা মডেল যেহেতু এলাকাভিত্তিক এবং জীবনমুখী ছিল তাই বাংলার মানুষ সামাজিক মূল্যবোধ চর্চার পাশাপাশি মসলিন, কটন, ই¯পাত, কৃষিপণ্য, অলংকার, লবণ ইত্যাদি রপ্তানি করত এবং এ কারণে বাংলার সঙ্গে বৈশ্বিক যোগাযোগ ছিল প্রাচীনকাল থেকে। এখানে বলা প্রয়োজন যে, প্রাচীন ভারতের কর্মকা- বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রায় ৩০ শতাংশ অবদান রাখত, যার অর্ধেক আসত বাংলা থেকে। কাজেই প্রাচীন বাংলার শিক্ষা কাঠামো বাংলাকে একটি সমৃদ্ধ জনপদ হিসেবে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ব্রিটিশ উপনিবেশ দুইশ বছর শাসন করে যখন বাংলা ছেড়ে যায় তখন বাংলার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৈশ্বিক বিবেচনায় মাত্র ৩ শতাংশে নেমে আসে। ব্রিটিশ উপনিবেশ বাংলাকে দুইশ বছর শাসন করার মতো পরিবেশ তৈরি করার জন্য শুরুতেই শিক্ষা কাঠামোতে রূপান্তরের কাজে হাত দেয়। বাংলার সমৃদ্ধ শিক্ষা কাঠামো ভেঙে ব্রিটিশ কলোনিয়াল পাবলিক এডুকেশন মডেল স্থাপনের উদ্দেশ্যে অ্যাডাম রিপোর্ট (১৮৩৫); উড এডুকেশন ডেসপাচ (১৮৫৪) এবং হান্টার কমিশন রিপোর্ট (১৮৬২) প্রভৃতির মাধ্যমে প্রাচীন বাংলার শিক্ষা কাঠামোর নমনীয়তা, এলাকাভিত্তিক মডেল এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনানুষ্ঠানিক স¤পর্ক নিয়ে তীব্র সমালোচনা করা হয়। শিল্প বিপ্লবের সময়কালীন ব্রিটিশ সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় জনশক্তি তৈরি এবং ঔপনিবেশিক আমলের অনুগত মানুষ তৈরির উদ্দেশ্যে এমন একটি জনগোষ্ঠী প্রয়োজন ছিল যারা তাদের এলাকাভিত্তিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ভুলে যাবে, প্রশ্ন করবে না, বিতর্ক করবে না, যুক্তি দেবে না, নিজের মত প্রকাশ করবে না। কাজেই তারা সেই লক্ষ্য সামনে নিয়েই একটি নিয়মে আবদ্ধ, কেন্দ্রপরিচালিত, বইনির্ভর, মুখস্থনির্ভর, পরীক্ষাভিত্তিক, নম্বরভিত্তিক একটি শিক্ষাব্যবস্থা দেশব্যাপী চালু করল। ব্রিটিশ শিক্ষা রূপান্তর ছিল বাঙালি জাতিসত্তার ওপর বড় ঔপনিবেশিক আঘাত। বিগত কয়েক শতকে উন্নয়নশীল দেশগুলো শিল্পবিপ্লবের সময় ও ঔপনিবেশিক শিক্ষা মডেলই অনুসরণ করে এসেছে, মূলত শ্রমবাজারকে সামনে রেখে, শ্রমিক ও ভোক্তা হিসেবে মানুষকে তৈরি করাই ছিল যার মূল উদ্দেশ্য। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের অধীনে পূর্ব বাংলার শিক্ষা কাঠামোর রূপান্তর প্রচেষ্টা ছিল বাঙালি জাতিসত্তার ওপর নব্য ঔপনিবেশিক আঘাত। এ রূপান্তরে মূল আদল অর্থাৎ ঔপনিবেশিক শিক্ষা মডেল ঠিক রেখেই তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল এ ভূখন্ডের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ভাষাগত বৈশিষ্ট্য দুর্বল করে দিয়ে এবং বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারকে সংকুচিত করে একটি পশ্চাৎপদ ও অধীন জাতিগোষ্ঠীতে রূপান্তরিত করা। বাঙালি জাতিসত্তার অস্তিত্ব পুনরুদ্ধারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশ হওয়ার শুরু থেকেই পূর্ব বাংলা নাম প্রস্তাবের মাধ্যমে এ ভূখন্ডের মানুষের পরিচিতি ও অধিকারের দাবি নিয়ে সোচ্চার হন। পরে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, পশ্চিম পাকিস্তানের কূটকৌশল আরও ¯পষ্ট করে। এ জাতিকে শিক্ষাবিমুখ করা এবং বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে যাতে গড়ে না ওঠে, সেই উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৫৮ সালে শরিফ কমিশন রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়, যার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও কলা ইত্যাদি বিভাগ বিভাজনের সূচনা হয়। এরপর থেকেই বিজ্ঞান শিক্ষায় শহর-গ্রাম বৈষম্য, জেন্ডার বৈষম্য এবং তথাকথিত মেধাবী-অমেধাবী বৈষম্যর সূচনা হয়। এর ফলে ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম দাবি ছিল একমুখী শিক্ষাধারা ফেরত আনা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটার পরই তিনি প্রথমেই যে কাজটিতে মনোনিবেশ করেন সেটি হলো শিক্ষা রূপান্তর। ড. কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন (১৯৭৪) রিপোর্টের মাধ্যমে পুনরায় বিভাগ বিভাজন তুলে দিয়ে একমুখী শিক্ষা প্রবর্তন করে একটি বিজ্ঞানমনস্ক জাতি তৈরি করা, মুখস্থনির্ভর শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ার বদলে অংশগ্রহণমূলক, অনুসন্ধানী শিখনের মাধ্যমে সৃজনশীল জাতি তৈরি, শহর-গ্রামের বৈষম্য দূর করার জন্য প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণ, উচ্চশিক্ষায় মুখস্থনির্ভরতা ও সার্টিফিকেটমুখী কমিয়ে গবেষণার পরিবেশ তৈরির জন্য ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স জারি করে মুক্তবুদ্ধি ও সৃজনশীলতার চর্চার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের শিক্ষা রূপান্তর প্রক্রিয়া আর আলোর মুখ দেখেনি। ১৯৭৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশে বেশ কিছু শিক্ষা কমিশন এবং শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণীত হয়। এগুলোর মাধ্যমে শিক্ষায় ছোট ছোট সংস্কার করার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু শিক্ষায় রূপান্তরের মতো কোনো প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়নি। মূলত ঔপনিবেশিক শিক্ষা মডেলকে ঠিক রেখেই শিক্ষার্থীদের গভীর চিন্তন প্রক্রিয়ার উন্নয়ন ঘটানোর জন্য বহুনির্বাচনী প্রশ্ন, কাঠামোবদ্ধ সৃজনশীল প্রশ্ন চালু করা হয়, কিংবা স্বল্প নম্বরের বিদ্যালয়ভিত্তিক মূল্যায়ন চালু করে মুখস্থনির্ভর লিখিত পরীক্ষার বিধান চালু করা হয়। যার ফলে প্রায় দুইশ বছর আগের ঔপনিবেশিক আমলে প্রতিষ্ঠিত সেই নিয়মে আবদ্ধ, কেন্দ্রপরিচালিত, বইনির্ভর, মুখস্থনির্ভর, পরীক্ষাভিত্তিক, নম্বরভিত্তিক শিক্ষাব্যাবস্থারও কোনো মৌলিক পরিবর্তন ঘটেনি। বাংলাদেশে ঔপনিবেশিক শিক্ষা মডেলকে পরিচালনা করে গুণগতভাবে আমরা আসলে কী অর্জন করছি? সরকারের প্রাথমিক পর্যায়ে জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়ন (২০২২) রিপোর্ট অনুযায়ী প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ৫০ শতাংশ বেশি ভাষা ও যোগাযোগ যোগ্যতা এবং দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী গাণিতিক যোগ্যতা অর্জন

Uncategorized

MPO মানে কি? MPO ভুক্ত হলে কি কি সুবিধা পাওয়া যায় ?

MPO হচ্ছে Monthly Pay order । MPO ভুক্ত করনের মাধ্যমে বেসরকারি পর্যায়ের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় বিভিন্ন ধরনের নিয়োগ, পদোন্নতি এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের মাসিক বেতন কার্যকর করা হয়। মান্থলি পেমেন্ট ওর্ডারে (এমপিও) অন্তর্ভূক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা বেতন-ভাতাদির সুবিধা পান না। MPO ভুক্ত করণের সুবিধাঃ -এমপিও ভুক্ত হলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা তাঁদের মূল বেতনের পুরোটাই সরকারি কোষাগার থেকে প্রাপ্ত হবেন। – এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা অন্যান্য সরকারী কর্মচারীদের মত মহার্ঘ্যভাতা, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও উৎসবভাতা পাবেন। – যে সকল প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্ত হবে সেসকল প্রতিষ্ঠানের কমকর্তা ও কর্মচারীরা পর্যায়ক্রমিক ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হওয়ার বেতন কাঠামোর আওতায় আসবে। – কেবল মাত্র এমপিও ভুক্ত হবার পরেই চাকরির স্থায়িত্ব নিশ্চিত হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যমান এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ প্রতি মাসে রাষ্ট্রের ব্যয় হয় ৬০০ কোটির কিছু বেশি টাকা। নতুন স্কেলে বেতন দেয়া হলে প্রতি মাসে আরও প্রায় ৪০০ কোটি টাকা লাগবে। নতুন স্কেল পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হলে এমপিওভুক্ত কলেজের একজন প্রভাষকের মূল বেতন হবে ২২ হাজার টাকা (নবম গ্রেড)। বর্তমানে তাঁরা ১১ হাজার টাকা পাচ্ছেন। সহকারী অধ্যাপকরা পাবেন ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা (ষষ্ঠ গ্রেড)। এখন পাচ্ছেন ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। আর অধ্যক্ষদের হবে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এখন পাচ্ছেন ২৫ হাজার ৭৫০ টাকা। আর বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের মূল বেতন হবে দশম গ্রেডে ১৬ হাজার টাকা। এখন পাচ্ছেন ৮ হাজার টাকা। জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকের বেতন হবে ২২ হাজার টাকা (নবম গ্রেড)। এখন পান ১১ হাজার টাকা।

Uncategorized

Liakat

Lorem Ipsum is simply dummy text of the printing and typesetting industry. Lorem Ipsum has been the industry’s standard dummy text ever since the 1500s, when an unknown printer took a galley of type and scrambled it to make a type specimen book. It has survived not only five centuries, but also the leap into electronic typesetting, remaining essentially unchanged. It was popularised in the 1960s with the release of Letraset sheets containing Lorem Ipsum passages, and more recently with desktop publishing software like Aldus PageMaker including versions of Lorem Ipsum.

Uncategorized

নতুন শিক্ষাক্রম ও অভিভাবকদের অস্বস্তি : প্রসঙ্গ কথা

সকালে অফিসে প্রবেশের একটু পরেই দুজন শিক্ষার্থী নতুন শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে প্রচারণার অংশ হিসেবে আমার কাছে এলেন। তারা একটি ছাত্র সংগঠনের সদস্য। আমি কৌতুহল থেকেই বর্তমান শিক্ষাক্রম সম্পর্কে তাদের ধারণাগুলো স্পষ্ট করতে বললাম। তাদের একটাই বক্তব্য, এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করবে। শিক্ষাক্রমে কী কী বিষয় আছে যা ক্ষতিকর এবং শিক্ষার্থীদের কী কী ক্ষতি হবে তার একটি তালিকা আমাকে দিলে সেটি সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবো বলে একটি রাইটিং প্যাড ও কলম এগিয়ে দিয়ে তাদের জন্য চা আনতে বললাম। তারা লিখতে রাজি নয়,তাই আমি নিজে লিখবো বলে কলম তুলে নিলেও পরীক্ষা তুলে দেয়া হয়েছে এবং গ্রামের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়বে এটা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারলো না। নতুন কারিকুলামের আওতায় লেখা বইগুলো দেখেছে কিনা আমার এমন প্রশ্নবাণে উৎকন্ঠিত ওরা ঘামতে লাগলো। কাজের তাড়া দেখিয়ে একরকম দৌড়ে আমার রুম থেকে চলে গেলো। হতভম্ব আমি ওদের কাছে না বলা কথাগুলো নিজের সাথেই বলতে শুরু করলাম। পঞ্চাশোর্ধ্ব জীবনে যখন পেছন ফিরে যখন তাকাই, তখন উপলব্ধি করি, আমার শৈশব, কৈশোর ও যৌবনে আমি কখনোই শিক্ষার্থী ছিলাম না, ছিলাম পরীক্ষার্থী মাত্র। ছাত্র হিসেবে আমার প্রধান কর্তব্য ছিলো পাঠ্যবইয়ের পাতার পর পাতা মুখস্থ করা, তৈরি প্রশ্নের উত্তর গলাধঃকরণ ও যথারীতি পরীক্ষার হলে খাতায় সেগুলো বমি করা। আমার পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ খাতায় উগরে দেয়া সেই বমিগুলোই পরিমাপ করতেন। বমির পরিমাণ, গন্ধ, রং বৈচিত্র এগুলোই তাদের বিচার্য বিষয় ছিলো। আর আমরাও দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য খাতায় নানান কালি, মার্জিন ও রং ব্যবহার করে উগরে দেয়া তথ্যগুলোকে নানান অলংকরণে সাজিয়ে দিতাম। এই প্রক্রিয়ায় আমার সহপাঠী বন্ধুরাই ছিলো আমার প্রতিযোগী। বার্ষিক পরীক্ষার আগে ছোট ফুফু দাঁড়িয়ে থেকে শেখাতেন কিভাবে একটি লাইন লিখেই সেটি প্রশ্নের নীচে ঢেকে ফেলতে হয়, যাতে আশেপাশের কেউ দেখতে না পারে। পরীক্ষার পরবর্তী সময়ের আনন্দ আগের ক্লাসের পজিশন ধরে না রাখতে পারার আশংকায় ম্লান হয়ে যেতো। ফলাফলের দিন সবাই মিলে আনন্দ করতে পারিনি। কখনও আমি জিতেছি, কখনওবা আমার অন্য বন্ধুরা। শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর শিক্ষকতা পেশায় আসার পর নিজেও সেই বমি ঘাঁটাঘাটির প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে গেছি। চোখের সামনেই দেখেছি কিভাবে অসহায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তথাকথিত স্বপ্ন পূরণের আশায় আমার সহকর্মী শিক্ষকদের পেছনে হন্যি হয়ে ছুটছেন। আমাদের সময়ে প্রযুক্তির প্রসার না ঘটায় নিয়মের বেড়াজাল এড়িয়ে উপভোগের অনেক সময় অবশিষ্ট থাকতো। কিন্তু নিজে এখন দুটি সন্তানের অভিভাবক হিসেবে শিক্ষা বাণিজ্যের আগ্রাসী সম্প্রসারণ এর কদর্য চেহারা প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষক কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় নিজের সন্তানকে নিয়ে আমার হেনস্থার বহুমূখী অভিজ্ঞতা আর সকলের মতো একই হবে। এইতো কদিন আগেও আমাদের অভিভাবকগণ কোচিং বাণিজ্য আর গাইডবুক বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সারাখন উচ্চকিত ছিলেন। সুযোগ পেলেই সরকারকে তুলোধূনো করতে পিছপা হতেন না। আমরা যারা শিক্ষকতার পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের সাথে যুক্ত, তারা গত একযুগ ধরেই শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দঘন, জীবনমুখী একটি শিক্ষাক্রমের স্বপ্ন দেখেছি। উন্নত ও স্বল্পোন্নত ডজনখানেক দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে তুলনা করে দেখেছি, আমাদের কারিকুলামে জ্ঞানের কচকচানি অনেক বেশি। কিন্তু এটি শিক্ষার্থীর সক্ষমতা আর দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে তেমন কোনো ইতিবাচক ছাপ ফেলে না। অথচ আজকের বিশ্বে ‘কী জানেন’ এটি নয়, ‘কী পারেন’ এটিই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কোচিং ও গাইড বই নির্ভর এই শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য আমাদের অভিভাবকদের মানসিকতাও কম দায়ী নয়। আমরা সন্তানদের স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্য এসবের দিকে লক্ষ্য না করে তাদের আমাদের ইচ্ছা পূরণের পুতুল ভাবতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই আমাদের স্বপ্নের নীচে সন্তানদের স্বপ্ন চাপা পড়ে যায়। যেই ছেলেটি ফুটবলে লাথি মেরে বিখ্যাত হবার জন্য জন্ম নিয়েছিল,বা একটি সিনেমা বানিয়ে জগৎ বিখ্যাত হতে পারেতো, অংকে বা ভূগোলে সে একটু কাঁচা থাকলে পৃথিবীর কোনো ক্ষতি হতো না। কিন্তু তাকে সব বিষয়ে পটু বানাতে গিয়ে আমরা একদিকে একজন কীর্তিমানকে হারিয়ে ফেলি অন্যদিকে একজন মধ্যম বা নিম্নমানের পেশাজীবী তৈরি করি। অসফল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার, শিক্ষক বা অন্য কোনো পেশাজীবির চাইতে সফল একজন শিল্পী, কবি, কারিগর বা উদ্যোক্তা জীবনকে অনেক সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারে এই সত্যটা আমরা ভুলে থাকতে চাই। সন্তানের অনাগত ভবিষ্যতকে নিরাপদ করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই তাকে জীবনব্যপী মানসিক প্রতিবন্ধিতার দিকে ঠেলে দেই। নতুন শিক্ষাক্রমে “অভিজ্ঞতা নির্ভর শিক্ষা”কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আমি লক্ষ্য করেছি, প্রাথমিকের পরিবর্তন নিয়ে অভিভাবকরা অতটা উচ্চকিত নন। যত আলোচনা ষষ্ঠ ও সপ্তমের পাঠ্যপুস্তক নিয়ে। এর কারণ প্রত্যাশার চাপটা এই শ্রেণীর শিক্ষার্থী থেকেই শুরু হয়। ফলে তারা অবচেতনেই শিক্ষা বাণিজ্যের শিকারে পরিণত হয়। তাদের কৈশোরের সোনালী সময়গুলো এক অসহনীয় শারিরীক ও মানসিক চাপের মধ্যে পার হয়ে যায়। এর দীর্ঘ মেয়াদি শারিরীক ও মানসিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে এদেশে তেমন কোনো গবেষণা নেই, তবে উন্নত দেশে আছে বলেই তারা শিক্ষক কেন্দ্রিক পরীক্ষা নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছে। অনুন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছে যাওয়া আমাদের দেশ আজ সেই পথে হাঁটার সক্ষমতা অর্জন করেছে। আমাদের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া সন্তানরা সকালে কোচিং এর পর স্কুল অথবা স্কুল এর পর কোচিং করে একরাশ ক্লান্তি নিয়ে ঘরে ফিরছে না। বিশ্রাম না নিয়েই আবারও বই নিয়ে মুখস্থের কসরত অথবা টিউশন টিচারের কাছে পড়তে বসছে না। বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিছে, ভাই বোনদের সাথে গল্পে মেতে উঠেছে। মুখস্থের পরিবর্তে স্কুলের অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে নানা উপকরণ তৈরি করছে। ওদের চোখে ক্লান্তি আর প্রতিযোগিতা নিয়ে দুঃশ্চিন্তার ছাপ দেখতে না পেয়ে অনভ্যস্ত অভিভাবকগণ সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে আরো বেশি দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। এই দুঃশ্চিন্তার মূল কারণ প্রতিযোগিতায় সন্তানের হেরে যাবার আশংকা। কিন্তু তার সন্তান ইতোমধ্যেই জেনে গেছে ক্লাসের সহপাঠীদের সাথে তার সম্পর্ক প্রতিযোগিতা নয়, সহযোগিতার। ফলে তারা সবাই মিলে শিখছে। এই শেখা শিক্ষার্থী ভেদে কম বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। সরকার ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক (বিএনকিউএফ) বাস্তবায়ন শুরু করেছে। ৮ম শ্রেণী থেকে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট লেভেলে জাতীয় দক্ষতা মান অর্জন করবে। এতে করে শিক্ষার্থী একাডেমিক সনদের পাশাপাশি একটি দক্ষতা সনদও অর্জন করবে। ফলে যে কোনো স্তরে শিক্ষায় ছেদ পড়লেও অর্জিত দক্ষতা তাকে কর্মক্ষেত্রে অসহায় করে তুলবে না। আর একাডেমিক শিক্ষা হবে জীবনব্যপী; যখনই সুযোগ হবে যে কেউ আবারও পড়াশোনায় ফিরে আসতে পারবে। আমাদের শিক্ষার্থীরাও পরিবারের বোঝা না বাড়িয়ে উন্নত বিশ্বের মতো নিজেরাই উপার্জন ও অধ্যয়ন এক সাথেই চালিয়ে যাবার সুযোগ পাবে। অভিভাবকদের আরেকটি আশংকা, নতুন কারিকুলামে অধ্যয়নরত আমাদের সন্তানরা উচ্চশিক্ষা ও চাকুরীর বাজারে পিছিয়ে যাবে। আসলে এই কারিকুলাম সম্পন্ন হবার সাথে সাথে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি পদ্ধতি ও চাকুরির ইন্টারভিউতেও ব্যপক পরিবর্তন আসবে। একাডেমিক সার্টিফিকেট নয়, যোগ্যতা সনদের দিকেই চাকুরিদাতাদের নজর থাকবে। কোন বিষয়ে কী ফলাফল নিয়ে পাশ দিয়েছে তা নয়, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাজের ক্ষেত্রগুলোতে অবদান রাখার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা রয়েছে কিনা সেটিরই মূল্যায়ন হবে। গুগল, মেটা, অ্যামাজন,অ্যাপেল এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সার্টিফিকেটধারী নয়, তাদের প্রত্যাশা পুরনের সক্ষমতাসম্পন্ন দক্ষ মানুষদের খুঁজে বের করে চাকুরি দিচ্ছে। বিশ্বায়নের যুগে এই ঢেউ আমাদের দেশেও ছড়িয়ে পড়তে সময় নেবে না। তাই আমাদের সন্তানদের কেবল শিক্ষা সনদ নয়, জাতীয়

Scroll to Top