City of Education

Author name: Naryan Ch. Das

Uncategorized

শিখন-ক্ষেত্ৰ (Learning areas)

শিক্ষাক্রমের দশটি মূল যোগ্যতা অর্জনে যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য শিক্ষার্থীদের শিখনের দশটি ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীর বিকাশের ক্ষেত্র, পূর্বে নির্ধারিত নীতি, মূল্যবোধ, মূল যোগ্যতা ও দক্ষতা, পরিস্থিতি বিশ্লেষণমূলক গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল এবং জাতীয় পর্যালোচনাসমূহের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ শিখন- বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে শিখন-ক্ষেত্র নির্বাচন করা হয়েছে। এই নির্বাচনের সময় স্থানীয় ও বৈশ্বিক বিভিন্ন চাহিদা ও প্রেক্ষাপট যেমন বিবেচনা করা হয়েছে, একই সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে একাডেমিক অগ্রাধিকার এবং উচ্চশিক্ষা ও কর্মজগতের বর্তমান ও ভবিষ্যত পরিপ্রেক্ষিত। যোগ্যতাগুলো অর্জনকল্পে শিক্ষাক্রমে যেসকল শিখন-ক্ষেত্র নির্বাচন করা হয়েছে, সেগুলো হলো : ১. ভাষা ও যোগাযোগ (Language & Communication ) ২. গণিত ও যুক্তি (Mathematics & Reasoning) ৩. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (Science & Technology) ৪. ডিজিটাল প্রযুক্তি (Digital Technology) ৫. পরিবেশ ও জলবায়ু (Environment & Climate) ৬.সমাজ ও বিশ্বনাগরিকত্ব (Society & Global Citizenship) ৭. জীবন ও জীবিকা (Life & Livelihood) ৮. ধর্ম, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা (Religion, Values & Morality) ৯. শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা (Physical & Mental Health and Protection) ১০. শিল্প ও সংস্কৃতি (Arts & Culture) ===000=== তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Uncategorized

শিখন-ক্ষেত্রভিত্তিক যোগ্যতা (Learning areawise competencies)

শিক্ষাক্রমে যে দশটি শিখন-ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি শিখন-ক্ষেত্র এবং তার চাহিদা ও ব্যাপ্তি বিবেচনা করে শিখন-ক্ষেত্রভিত্তিক যোগ্যতার বিবরণী প্রণয়ন করা হয়েছে। সেগুলো হলো- শিখন-ক্ষেত্র শিখন-ক্ষেত্রভিত্তিক যোগ্যতার বিবরণী ১. ভাষা ও যোগাযোগ   একাধিক ভাষায় শোনা, বলা, পড়া ও লেখার মৌলিক দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে ভাব গ্রহণ ও প্রকাশ করতে পারা, সাহিত্যের রস আস্বাদনে সমর্থ হওয়া; বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে সৃজনশীল ও শৈল্পিকভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারা এবং পরমতসহিষ্ণুতার সঙ্গে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কার্যকর ও কল্যাণমুখী যোগাযোগে সমর্থ হওয়া। ২. গণিত ও যুক্তি   সংখ্যা ও প্রক্রিয়া (Operation), গণনা, জ্যামিতিক পরিমাপ এবং তথ্য বিষয়ক মৌলিক দক্ষতা অর্জন ও তা ব্যবহারের মাধ্যমে ক্রমপরিবর্তনশীল ব্যক্তিগত, সামাজিক, জাতীয় ও বৈশ্বিক সমস্যা দ্রুত মূল্যায়ন করে এর তাৎপর্য, ভবিষ্যৎ ফলাফল ও করণীয় জেনে যথাযথ মাধ্যম ব্যবহার করে কার্যকর যোগাযোগ করতে পারা। এছাড়াও সৃজনশীলতার সঙ্গে গাণিতিক দক্ষতা প্রয়োগ করে যৌক্তিক, কল্যাণকর সমাধান ও সিদ্ধান্ত নিতে পারা এবং উদ্ভাবনী সক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারা। ৩. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি   বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, ধারণা, দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতি ব্যবহার করে ভৌত বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ভূ-বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-সংশ্লিষ্ট প্রপঞ্চ, ঘটনা ও ঘটনা প্রবাহ ইত্যাদি ব্যাখ্যার আলোকে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ দ্রুত মূল্যায়ন ও সমাধান করতে পারা। এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ ফলাফল, তাৎপর্য ও করণীয় নির্ধারণ এবং যথাযথ মাধ্যম ব্যবহার করে সৃজনশীল, যৌক্তিক ও কল্যাণকর সিদ্ধান্ত নিতে পারা এবং উদ্ভাবনী দক্ষতা প্রদর্শন ও বাস্তবায়ন করতে পারা। ৪. ডিজিটাল প্রযুক্তি   তথ্য অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ, যাচাই ও ব্যবস্থাপনা; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির নিরাপদ, নৈতিক, যথাযথ, পরিমিত, দায়িত্বশীল ও সৃজনশীল ব্যবহারের মাধ্যমে কার্যকর যোগাযোগ, সমস্যা সমাধান এবং নতুন উদ্ভাবনে ভূমিকা রাখতে পারা; ডিজিটাল প্রযুক্তির সক্ষমতা অর্জন করে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বাস্তব সমস্যার অভিনব ডিজিটাল সমাধান উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও বিস্তরণ; এবং বর্তমান ও ভবিষ্যত বিশ্বের প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল নাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করে তুলতে পারা। ৫. সমাজ ও বিশ্বনাগরিকত্ব   নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও লালন করে ভিন্নতা ও বৈচিত্র্যকে সম্মান করতে পারা। প্রেক্ষাপট অনুযায়ী নিজের ও অন্যের মতামত বিবেচনা করে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করে নিরাপদ বাসযোগ্য পৃথিবী তৈরিতে ভূমিকা রাখা । ৬. জীবন ও জীবিকা   ক্রমপরিবর্তনশীল স্থানীয় ও বৈশ্বিক কর্মবাজারের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ও টেকসই প্রাক-কর্ম যোগ্যতা অর্জন করা এবং তার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারা। কর্মের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের মাধ্যমে দৈনন্দিন কর্ম-দক্ষতা অর্জন ও উৎপাদনমুখীতা প্রদর্শন করে নিজ জীবনে তার প্রয়োগ করতে পারা। পেশাদারি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে সৃজনশীল কর্মজগতের উপযোগী ও উপার্জনক্ষম করে গড়ে তুলতে পারা এবং কর্মজগতের ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জন করে নিজ ও সকলের জন্য সুরক্ষিত, নিরাপদ কর্মজীবন তৈরিতে অবদান রাখতে পারা। ৭. পরিবেশ ও জলবায়ু   পরিবেশের উপাদান, পরিবেশ দূষণ ও প্রতিকার, পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কিত ধারণার আলোকে প্রকৃতি ও জীবজগতের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করা। জলবায়ুর ধারণা, জলবায়ু পরিবর্তন ও দূর্যোগের কারণ, ব্যক্তি, পরিবেশ ও সামাজিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব সম্পর্কে জেনে, বিভিন্ন কৌশল অনুসরণ করে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিরাপদ বাসযোগ্য পৃথিবী বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারা। ৮. ধর্ম, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা   নিজ নিজ ধর্মসহ সকল ধর্ম ও বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা প্রদর্শন করে সততা, ন্যায়পরায়ণতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা, বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান, শুদ্ধাচার, সাংস্কৃতিক নীতিবোধ, মানবিকতাবোধ, মানুষ-প্রকৃতি-পৃথিবীর প্রতি ভালোবাসা ইত্যাদি মূল্যবোধের গুরুত্ব জেনে তা চর্চার মাধ্যমে একটি নিরাপদ ও অসাম্প্রদায়িক পৃথিবী সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করা। ৯. শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা   শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য, পরিবর্তন ও এর প্রভাব এবং ঝুঁকি সম্পর্কে জেনে যথাযথ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার মাধ্যমে সুস্থ, নিরাপদ ও সুরক্ষিত জীবনযাপনে সক্ষম হয়ে উৎপাদনশীল নাগরিক হিসাবে অবদান রাখার যোগ্যতা অর্জন করা। নিজের ও অন্যের অবস্থান, পরিচিতি, প্রেক্ষাপট ও মতামতকে সম্মান করে ইতিবাচক যোগাযোগের মাধ্যমে পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে সক্রিয় নাগরিক হিসেবে অবদান রাখা । ১০. শিল্প ও সংস্কৃতি   শিল্পকলার বিভিন্ন সৃজনশীল ধারা (চারু ও কারুকলা, নৃত্য, সংগীত, বাদ্যযন্ত্র, আবৃত্তি, অভিনয়, সাহিত্য ইত্যাদি) ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ, শিল্পকলার বিভিন্ন ধারার রস আস্বাদন করতে পারা, চর্চায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটানো; সংবেদনশীলতা ও নান্দনিকতার বিকাশ এবং নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধারণ ও লালন করে অন্য সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা এবং শিল্পকলাকে উপজীব্য করে কর্মমুখী ও আত্মনির্ভরশীল হতে উদ্বুদ্ধ হওয়া । ===000=== তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Uncategorized

শিখন সময় ও শিখন সময়ের বিষয়ভিত্তিক বণ্টন (Learning time and its subjectwise distribution)

যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমে শিখন-শেখানো কার্যক্রমের মূল কৌশল হচ্ছে অভিজ্ঞতাভিত্তিক সক্ৰিয় শিখন – যা শুধু শ্রেণিকক্ষে পাঠদান প্রক্রিয়া বা সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় । শিক্ষার্থী বিভিন্ন কৌশলে শ্রেণিকক্ষে, বিদ্যালয়ে, বাড়িতে, নিকট পরিবেশে বিভিন্ন কার্যক্রম ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিখন সম্পন্ন করে নির্ধারিত যোগ্যতাসমূহ অর্জন করে। এরূপ নানাবিধ শিখন-শেখানো কার্যক্রম সুচারুরূপে পরিচালনা করতে হলে পর্যাপ্ত শিখন সময় থাকা প্রয়োজন তবে তা শুধু শ্রেণিকক্ষভিত্তিক নয়। বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রমে শিখন সময়কে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। ইউনেস্কোর শিক্ষাক্রম পরিভাষায় শিখন সময়ের বিভিন্ন পরিভাষা ও তার ব্যাখ্যা প্ৰদান করেছে। যেমন : কনট্যাক্ট পিরিয়ড (Contact period) বলতে শ্রেণিকক্ষ ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সক্রিয় শিখন-শেখানো সময়কে ধরা হয়েছে। ইন্সট্রাকশনাল টাইম (Instructional time ) বলতে সেই নির্দিষ্ট সময়কে বোঝানো হয়েছে যেখানে শ্রেণিকক্ষে বা ভার্চুয়াল পরিবেশে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কাছ থেকে সরাসরি শিখনের জন্য সহায়তা পেয়ে থাকে। আবার শিখন সময় (Learning time) বলতে সেই নির্দিষ্ট সময়কে বিবেচনা করা হয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে কোনো শিখন-সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত থাকে অথবা কার্যকর শিখনে নিবিষ্ট থাকে । যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমে যোগ্যতা অর্জনের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে যেহেতু বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে এবং এই অভিজ্ঞতা সব সময় বিদ্যালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে বিধায় শিক্ষাক্রম রূপরেখায় শিখন সময়কে শ্রেণিকক্ষ ও শ্রেণিকক্ষের বাহিরে সক্রিয় শিখনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সময়কে বিবেচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ, শিক্ষার্থী একক বা পারস্পরিকভাবে সব মিলিয়ে শিখন কার্যক্রমে যে সময়টুকু ব্যয় করবে তার পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নে বাস্তব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে শিখন সময়ের একটি পরিকল্পনা দেয়া হলো । মোট ছুটি = ৭৬ দিন + ১০৪ দিন (শুক্রবার ও শনিবার) = ১৮০ দিন সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন ধরে মোট কর্মদিবস ৩৬৫ দিন – ১৮০ দিন সাপ্তাহিক ছুটি ২দিন (শুক্রবার ও শনিবার) ধরে শিখন সময় প্রাক্কলন শ্রেণি মোট শিখন ঘণ্টা প্রাক-প্রাথমিক 500 ১ম – ৩য় 630 ৪র্থ – – ৫ম 840 ৬ষ্ঠ – ৮ম 1030 ৯ম – ১০ম 1100 ১১শ-১২শ 1150 উল্লেখ্য যে, OECD ও এর সহযোগী দেশের ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত গড় শিখন ঘণ্টা ৭৯৯ এবং ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত গড় শিখন ঘন্টা ৯১৯ ঘন্টা। উপরিউক্ত হিসেব অনুযায়ী বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সপ্তাহে দুইদিন ছুটি বিবেচনায় নিয়েও যথাযথ শিখন সময় বরাদ্দ করা সম্ভব। প্রচলিত ছুটির হিসেবকে বিবেচনায় রেখে মোট কর্মদিবস ১৮৫ দিন প্রাক্কলন করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শুক্রবার ও শনিবার দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে। এছাড়া শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন, স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, জাতীয় শোক দিবস এবং বিজয় দিবস এই ৫টি জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপনের জন্য এই দিনগুলো কর্মদিবস হিসেবে ধরা হয়েছে। ওইসিডি (OECD) ও এর সহযোগী দেশসমূহের বাৎসরিক গড় স্কুল দিবস হলো ১৮৫ দিন এবং ইউরোপের ২৩টি দেশের বাৎসরিক গড় স্কুল দিবস হলো ১৮১ দিন। প্রতিবেশি দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে স্কুল কর্মদিবস বিভিন্ন, যেমন মেঘালয়ে ১৯২ দিন আবার মহারাষ্ট্রে ২০০ দিন। এই প্রেক্ষিতে সপ্তাহে দুইদিন ছুটি হিসেব করে প্রস্তাবিত মোট কর্মদিবস ও শিখন সময় আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ । (বছরে শুক্রবার ও শনিবার মোট ১০৪ দিন এবং মোট বার্ষিক ছুটি ৭৬ দিন ধরে কর্মদিবস হিসেব করা হয়েছে।) শিখন সময়ের বিষয়ভিত্তিক বণ্টন ওইসিডি (OECD) ও এর সহযোগী দেশসমূহের ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ার প্রায় ৪৬টি দেশের মোট শিখন সময়ের বিষয়ভিত্তিক বণ্টনের শতকরা হার নিম্নের গ্রাফে দেখানো হয়েছে। উপরিউক্ত গ্রাফ অনুযায়ী ওইসিডি (OECD) ও এর সহযোগী দেশসমূহে গড়ে প্রাথমিক স্তরে মাতৃভাষা, গণিত ও শিল্পকলা বিষয়ে মোট শিখন সময়ের ৫২% সময় বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু, মাধ্যমিক স্তরে মাতৃভাষা, বিদেশি ভাষা ও গণিত বিষয়ের জন্য মোট শিখন সময়ের ৪২% সময় বরাদ্দ থাকে। বিভিন্ন দেশের শ্রেণি অনুযায়ী বিষয়ভিত্তিক সময়বণ্টন পর্যালোচনা, বাংলাদেশের বিষয়ভিত্তিক সময়বণ্টনের প্রেক্ষিত বিবেচনা করে, সেই সঙ্গে প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম রূপরেখার চাহিদার প্রেক্ষিতে বিষয়ভিত্তিক সময়বণ্টনের কাঠামো নিম্নরূপ : বিষয়ভিত্তিক শিখন সময়ের শতকরা হার * প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ের প্রত্যাশিত যোগ্যতাসমূহ গণিত ও বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ের মাধ্যমে এবং জীবন ও জীবিকা বিষয়ের প্রত্যাশিত যোগ্যতাসমূহ ইতিহাস ও সামজিক বিজ্ঞান, এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ অন্যান্য বিষয়ের মাধ্যমে অর্জিত হবে। সুতরাং ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং জীবন ও জীবিকা বিষয়ের জন্য নির্ধারিত শিখন সময় আলাদা করে দেখানো হয়নি। বিদ্যালয়ের প্রারম্ভিক সময়ে মাতৃভাষা, গণিত, এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে শিশুদের অধিক সময় বরাদ্দ করা হয়েছে যা প্রাক-প্রাথমিকে মোট স্কুল শিখন সময়ের প্রায় ৬০% এবং প্রাথমিক স্তরে বাংলা, গণিত, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে প্রায় ৫৬% শিখন সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পক্ষান্তরে, মাধ্যমিক পর্যায়ে ৯ম-১০ম শ্রেণিতে মোট শিখন সময়ের প্রায় ৪৫% সময় বরাদ্দ করা হয়েছে ইংরেজি, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, এবং বিজ্ঞান বিষয়ের জন্য । মোট শিখন ঘণ্টার বিষয়ভিত্তিক বণ্টন নিম্নরূপ * প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ের প্রত্যাশিত যোগ্যতাসমূহ গণিত ও বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ের মাধ্যমে এবং জীবন ও জীবিকা বিষয়ের প্রত্যাশিত যোগ্যতাসমূহ ইতিহাস ও সামজিক বিজ্ঞান, এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ অন্যান্য বিষয়ের মাধ্যমে অর্জিত হবে। সুতরাং ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং জীবন ও জীবিকা বিষয়ের জন্য নির্ধারিত শিখন সময় আলাদা করে দেখানো হয়নি। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আবশ্যিক বিষয়সমূহের জন্য মোট শিখন সময়ের ২৫% সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নৈর্বাচনিক ৩টি বিশেষায়িত বিষয়মূহের জন্য মোট শিখন সময়ের ৭৫% সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া একটি ঐচ্ছিক প্রায়োগিক বিষয়ের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আলাদা করে সময় বরাদ্দ করবে। প্রতিটি স্তরের জন্য মোট শিখন সময়কে সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে । এই শিখন সময়কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার প্রয়োজন মতো ব্যবহার করতে পারবে। আবার যেসব বিষয় ও শিখন-ক্ষেত্রে স্কুল সময়ের বাহিরের পরিবেশে যোগ্যতা অর্জনের প্রাধান্য রয়েছে সেসব ক্ষেত্রেও এই শিখন সময়কে ব্যবহার করা হবে। ===000=== তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Uncategorized

শিক্ষার্থীর কাঙ্ক্ষিত মূল্যবোধ

মূল্যবোধ হচ্ছে এক ধরনের নীতি বা বিশ্বাস (Guiding principles / beliefs) যা যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত, সমাধান বা অগ্রাধিকার নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, জাতীয় এবং বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা ও বিশ্বাসের দীর্ঘ দিনের চর্চার মধ্য দিয়ে মূল্যবোধ গড়ে ওঠে যা পরবর্তীকালে অনুসৃত হয়। জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়নের সঙ্গেও মূল্যবোধ ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতাও বিদ্যমান। ধরন অনুযায়ী মূল্যবোধকে বিভিন্নভাবে গুচ্ছবদ্ধ করা যায় যেমন- ব্যক্তিগত, সামাজিক, মানবিক, ধর্মীয় ইত্যাদি। শিক্ষায় মূল্যবোধের চর্চা, অনুসরণ ও উন্নয়ন জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ক্রমেই গুরুত্ব পাচ্ছে। যেহেতু মূল্যবোধ সকল ধরনের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপকেই প্রভাবিত করতে পারে সেহেতু শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে নিজ দেশ ও সংস্কৃতি থেকে উৎসারিত ইতিবাচক মূল্যবোধ তৈরি, চর্চা, অনুসরণকে উৎসাহিত করা হবে। – যা শিক্ষাক্রমের রূপকল্প অর্জনে ভূমিকা রাখবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতে হলে সেগুলো অর্জন করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সম্পর্কিত মূল্যবোধের চর্চার মাধ্যমে। এই মূল্যবোধের উৎস হলো বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পরিচয় ও ইতিহাস, সংস্কৃতি, ধর্মীয় বিশ্বাস ও চর্চা, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট এবং বৈশ্বিক মূল্যবোধ । এই পরিপ্রেক্ষিতে যেসব মূল্যবোধ চর্চার বিষয় এই শিক্ষাক্রম উন্নয়নে বিবেচিত হয়েছে, সেগুলো হলো : সংহতি : এক হয়ে থাকার মানসিকতা । ভিন্নতা, বৈচিত্র্য ও শ্রেণিভেদ সত্ত্বেও ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও অগ্রাধিকারকে পেছনে রেখে কতগুলো সামষ্টিক ইচ্ছা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং মানবিক মূল্যবোধের পরিপ্রক্ষিতে সকলে মিলে বড় কোনো লক্ষ্য অর্জনে কাজ করা।( মানুষের জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে তার সক্ষমতা বা যোগ্যতায় রূপান্তরিত হয় এবং এই উপাদানগুলো আন্তঃসম্পর্ক স্থাপন করে কীভাবে আচরণের দ্বারা প্রকাশ পায়, এই বিষয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে ও মানব উন্নয়নে বহুল ব্যবহৃত একটি তত্ত্ব (The theory of planned behavior – Icek Ajzen, 1991) প্ৰচলিত আছে । মানুষের জনতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য (যেমন : বয়স, লিঙ্গ) নির্বিশেষে অর্জিত জ্ঞান (Knowledge) ও এর প্রয়োগ অভিজ্ঞতা (Application Experience) তিন ধরনের বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব ঘটায় : সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সুনির্দিষ্ট আচরণ করার দৃষ্টিভঙ্গি (Attitude) তৈরি করে; নিজের কাজ করা বা সমস্যা সমাধানের সক্ষমতার ওপরে আত্মবিশ্বাস (Self-efficacy Belief) প্রস্তুত করে; রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক, পারিবারিক ও গোষ্ঠীগত আদর্শ (Norm) বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তার মাঝে মূল্যবোধ ও আদর্শগত বিশ্বাস (Normative Belief) তৈরি হয়। জ্ঞান ও প্রয়োগ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যদি এই তিনটি উপাদানের মাঝে আন্তঃসম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব হয়, তবে মানুষের মাঝে পরিস্থিতি অনুযায়ী সঠিক আচরণ প্রকাশের সামষ্টিক বিশ্বাস তৈরি হয় এবং তা সঠিকভাবে প্রয়োগের চর্চা করার সক্ষমতাও পরিলক্ষিত হয়।) দেশপ্রেম : ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে নিজ দেশের সার্বিক কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখাই হচ্ছে দেশপ্রেম । সম্প্রীতি : ভিন্নতা, বৈচিত্র্য ও শ্রেণিভেদের মধ্যেও বিদ্যমান দৃঢ়তাসমূহের সম্মিলনে সর্বোচ্চ ঐক্য প্ৰদৰ্শন এবং বজায় রাখাই হচ্ছে সম্প্রীতি। পরমতসহিষ্ণুতা : ভিন্নমত বা ভিন্ন চিন্তাধারাকে সূক্ষ্ম চিন্তন দক্ষতা প্রয়োগের মাধ্যমে গ্রহণ বা বর্জনের স্বাধীনতা এবং এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সহনশীলতা প্রদর্শন হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা। বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা ও ধর্মের অনুসারীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা প্রদর্শন হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা। শ্রদ্ধা : স্থায়িত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ সহাবস্থানে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষসহ সকল মানুষের বৈশিষ্ট্য, স্বাতন্ত্র্য ও গুণাবলির আলোকে পারস্পরিক ইতিবাচক অনুভূতির প্রকাশই শ্রদ্ধা বা সম্মান । সহমর্মিতা : অন্যের মনের অবস্থা ও অনুভূতি আন্তরিকভাবে অনুধাবন করে তার সঙ্গে একাত্ম হওয়া । শুদ্ধাচার : শুদ্ধাচার মানে নিজের কাছে দায়বদ্ধ থেকে যেকোনো পরিস্থিতিতে নৈতিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক কোনো পরীবিক্ষণ ছাড়াই নিজ দায়বদ্ধতা থেকে নৈতিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেয়াই শুদ্ধাচার। চেতনা ও মূল্যবোধ বিমূর্ত অনুভূতি, বোধ বা ধারণা। এগুলোর অনুসরণ ও চর্চা হলো কিনা তা বোধগম্যতার সূচক হল মানুষের মাঝে কী কী গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্য অর্জিত হল তা পর্যবেক্ষণ ও অনুধাবন করা। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা সমাপনান্তে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিক গুণাবলি প্রত্যাশা করা হয়েছে যা অর্জন করলে চেতনা ও মূল্যবোধের চর্চার প্রতিফলন অনুভব করা যাবে। গুণাবলি বর্ণনা সততা একটি নৈতিক গুণ যা সত্যবাদিতা ও ন্যায়পরায়ণতার চর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করে উদ্যম দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ও মানসিক কর্মক্ষমতা গণতান্ত্রিকতা পরমতসহিষ্ণু এবং সকলের মত প্রকাশের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন ও শ্রদ্ধাশীল অসাম্প্রদায়িকতা নিজ সম্প্রদায়সহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষের বিশ্বাস, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল উদ্যোগ কোনো কাজ বা সমস্যা সমাধানে আগ্রহী হওয়া ও শেষ পর্যন্ত অনুপ্রাণিত থাকা ইতিবাচকতা কোনো কাজ, কথা, ঘটনা বা বিষয়ের ভাল দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেয়া নান্দনিকতা সৃজনশীল কাজের সৌন্দর্য উপলব্ধি করে তার চর্চা করার মননশীল মনোভাব পোষণ করা মানবিকতা   মানুষ ও সৃষ্টি জগতকে ভালবাসা, পরিচর্যা করা, সংরক্ষণ করা ও নিরাপত্তা প্রদানে সচেষ্ট হওয়া দায়িত্বশীলতা সকল দায়িত্ব ও কাজ সময়মত, গুরুত্ব সহকারে ও যথাযথভাবে সম্পাদন করা ===000=== তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Uncategorized

শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায় ও স্তরের উদ্দেশ্য  (Objectives of different stages and levels of education)

শিক্ষার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য শিক্ষার প্রতিটি স্তরের কিছু সার্বজনীন এবং কিছু নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে। সার্বজনীন উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক, আবেগিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, ভাষিক, নান্দনিক তথা সার্বিক বিকাশ— যা শিক্ষার সব স্তরেই গুরুত্ব পায়। তবে প্রাক-শৈশব, শৈশব, কৈশোর এবং কৈশোর-পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীর বয়স, আগ্রহ, পরিপক্বতা ও মিথষ্ক্রিয়ার ধরন ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তাদের বিকাশ ও শিখনের চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হয়। তাই শিক্ষার নির্দিষ্ট পর্যায়ের মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর বিকাশের পর্যায় অনুযায়ী একেকটি নির্দিষ্ট চাহিদাকে কেন্দ্র করে বিবেচনা করা হয়। এর পাশাপাশি নির্দিষ্ট স্তরের উদ্দেশ্য নির্ধারণে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটও বিবেচনায় নেয়া হয়, যা ধাপে ধাপে শিক্ষার মূল লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। যেমন : প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের মূল উদ্দেশ্য থাকে বাড়ির চেনা পরিবেশ থেকে বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম যা শিশুর সার্বিক বিকাশের ধারণাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। আবার প্রাথমিক স্তরে মূলত গুরুত্ব আরোপ করা হয় পড়তে, লিখতে ও গুণতে শেখার মতো মৌলিক বা ভিত্তিমূলক দক্ষতা অর্জনের উপর যা ব্যবহার করে শিশু পরবর্তী স্তরে নানাবিধ যোগ্যতা অর্জন ও স্বশিখন অব্যাহত রাখতে পারে। মাধ্যমিক স্তরে এসে শিক্ষার্থী একদিকে যেমন ভিত্তিমূলক দক্ষতা দৃঢ় করার মাধ্যমে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন অব্যাহত রাখবে, তেমনি সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় অধিকতর গুরুত্ব আরোপের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করবে যা তাকে সমাজের বৃহত্তর পরিসরে ক্রমশ ক্রিয়াশীল হতে সহায়তা করবে। উচ্চ মাধ্যমিক ও তৎপরবর্তী সময়ে সে বিশেষায়িত ক্ষেত্রে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে পেশাগত প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। উক্ত শিক্ষাক্রমে ব্যক্তিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর বিকাশের ধরন ও চাহিদার পাশাপাশি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে স্তরভিত্তিক যে উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা নিচের চিত্রে উপস্থাপিত হলো। এখানে আবারও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, প্রতিটি স্তরে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের উপর অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুত্ব দেয়া হলেও, এই স্তরভিত্তিক উদ্দেশ্যসমূহ শুধু সংশ্লিষ্ট স্তরেই অর্জিত হবে এমন নয়, বরং প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সকল স্তরেই তা নিহিত থাকবে। ===000=== তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Uncategorized

শিক্ষাক্রমের অ্যাপ্রোচ (Approach of the curriculum)

বাংলাদেশের শিশুদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থায় অভিষেক ঘটে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তির মাধ্যমে। এখান থেকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য প্রস্তুত হয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা সম্পন্ন করে একজন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণ করে বা কর্মজীবনে প্রবেশ করে । বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলা প্রয়োজন । কী কী যোগ্যতা অর্জন করলে শিক্ষার্থীরা এ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠবে সেগুলোকে বিবেচনার কেন্দ্রে রেখে প্রাক-প্রাথমিক হতে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের যথাযথ উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষার একটি পরিপূর্ণ ধারণায়ন (conceptualisation) বা ধারণা তৈরি করা জরুরি। যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষার সংজ্ঞার্থ, বৈশিষ্ট্য, কৌশল ও গুরুত্ব সম্পর্কে জেনে এবং অনুধাবন করে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তার যথাযথ প্রতিফলন ঘটানোর জন্য এ সংক্রান্ত বৈশ্বিক সংজ্ঞার্থ এবং দেশীয় পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাকে নিম্নলিখিতভাবে ধারণায়ন করা হয়েছে। যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধারণাকে যেভাবে দেখা হয়েছে : শিখন পরিবেশ যেখানে শিক্ষার্থী নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে শিখন অভিজ্ঞতা এবং উপায় অনুসন্ধানের মাধ্যমে যোগ্যতাসমূহ অর্জন করে এবং নিজের মতো তার প্রয়োগ ও প্রদর্শন করে প্রতিনিয়ত ক্ষমতায়িত হতে পারে। শিখন সহায়তা   যেখানে শিক্ষার্থী তার নিজস্ব শিখন চাহিদা অনুযায়ী সময়মত পৃথক বা সমন্বিত সহায়তা প্রাপ্তির মাধ্যমে কার্যকরী শিখন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যোগ্যতাসমূহ অর্জন করতে পারে। শিখন অংশগ্রহণ যেখানে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থী বিভিন্ন পথে এবং ভিন্ন ভিন্ন গতিতে শিখতে পারে। শিখন অগ্রগতি   যেখানে শিক্ষার্থীর অগ্রগতির ভিত্তি তার পারদর্শিতার রেকর্ড, শিখন সময় বা অংশগ্রহণের ধরন নয়। শিখন মূল্যায়ন   যেখানে মূল্যায়ন শিক্ষার্থীর জন্য ইতিবাচক ও অর্থপূর্ণ শিখন অভিজ্ঞতা যা সময়মতো শিখন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমভিত্তিক পারদর্শিতার প্রমাণের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। শিখন সমতা   যেখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমতা নিশ্চিত করার বিষয়টি শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষাক্রম ও তার বাস্তবায়ন এবং মূল্যায়নের মধ্যে নিবিড়ভাবে বিদ্যমান থাকে । শিখন প্ৰত্যাশা স্বচ্ছ, সুনির্দিষ্ট, পরিমাপ ও রূপান্তরযোগ্য। যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষার্থী যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়…. যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষার সফল বাস্তবায়নের অনুঘটকসমূহ : শিক্ষা থেকে প্রত্যাশা স্বচ্ছ, সুনির্দিষ্ট, পরিমাপযোগ্য করা যেন উন্নত-শিখন সংস্কৃতি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা ===000=== তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Uncategorized

শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও উন্নয়ন প্রক্রিয়া(Curriculum revision and development process)

শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও উন্নয়ন করার বহুল প্রচলিত ধাপ রয়েছে। এনসিটিবি শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও উন্নয়ন করার ক্ষেত্রে এই ধাপগুলো অনুসরণ করে থাকে । ধাপসমূহ হলো : ধাপ ১- গবেষণা, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং চাহিদা নিরুপণ শিক্ষাক্রম পরিমার্জনের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে প্রচলিত শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য বিস্তৃত পরিসরে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষায় প্রচলিত শিক্ষাক্রমের কার্যকারিতা, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং শিখন চাহিদা নিরূপনের উদ্দেশ্যে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল ব্যাপী বিস্তৃত পরিসরে চারটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়। গবেষণার পাশাপাশি শিক্ষার বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও চাহিদা নিরূপণের জন্য বিভিন্ন কারিগরি কর্মশালা, ইস্যুভিত্তিক আলোচনা ইত্যাদি পরিচালিত হয়। উক্ত গবেষণাসমূহে সরকারের লক্ষ্য, পরিকল্পনা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পর্যালোচনা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা, বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রম, তথ্য ও দলিল ইত্যাদি পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করা হয়। এসকল গবেষণার সুপারিশসমূহ বিবেচনা করে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষাক্রম কেমন হবে তা নির্ধারণ করা হয় । ধাপ ২- জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উন্নয়ন প্রচলিত প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাক্রমের ভিত্তি, গঠন ও প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন। উল্লিখিত গবেষণাসমূহে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাক্রমের ভিন্ন ভিন্ন অ্যাপ্রোচের পরিবর্তে একই অ্যাপ্রোচে শিক্ষাক্রম প্রণয়নের অপরিহার্যতার উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়। এ ক্ষেত্রে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের সাম্প্রতিক ধারণা বিবেচনায় নিয়ে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়। এমতাবস্থায় শিক্ষার বিভিন্ন স্তর ও পর্যায়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত একটি নিরবিচ্ছিন্ন (seamless) শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করার উদ্দেশ্যে একটি জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার পরিকল্পনা করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক এই জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়নের কাজটি সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটি (Curriculum Development and Revision Core Committee- CDRCC) গঠন করা হয়। দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বিষয় বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এই কমিটি গঠন করা হয় । পরবর্তী সময়ে সিডিআরসিসির পরামর্শক্রমে শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ, শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, এনসিটিবির কর্মকর্তা এবং বিষয় বিশেষজ্ঞগণের সমন্বয়ে একটি কার্যসম্পাদন কমিটি (Working Committee) গঠন করা হয়। এই কমিটি জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উন্নয়নে কারিগরি ও নিয়মতান্ত্রিক কাজসমূহ সম্পাদনসহ সিডিআরসিসিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে। কার্যসম্পাদন কমিটি একাধিক কর্মশালা ও সভার মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার উপর একটি ধারণা প্রণয়ন করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ও উপমন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীসহ দুই মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের উপস্থিতিতে আয়োজিত সভায় উক্ত ধারণা অনুযায়ী প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত একটি সিমলেস বা নিরবিচ্ছিন্ন শিক্ষাক্রম উন্নয়নের উদ্দেশ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উন্নয়নের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। তদানুযায়ী সিডিআরসিসির তত্ত্বাবধানে কার্যসম্পাদন কমিটি বিষয় বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ, শ্রেণি শিক্ষক, শিখন বিশেষজ্ঞগণকে নিয়ে একাধিক কর্মশালা ও কারিগরি সভার মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা প্রণয়নের কাজ শুরু করে। সিডিআরসিসি ও কার্যসম্পাদন কমিটির মাধ্যমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়গণের প্রত্যক্ষ নিদের্শনায় ও অন্যান্য নীতি নির্ধারকদের পরামর্শে ১৫টির বেশি কারিগরি কর্মশালা ও শতাধিক ভার্চুয়াল সভার মাধ্যমে ৩৩টি সংস্থার ১৫৬ জন বিশেষজ্ঞের সরাসরি অংশগ্রহণে এ শিক্ষাক্রম রূপরেখার প্রথম খসড়া প্রণয়ন করা হয় । গবেষণার মাধ্যমে প্রচলিত শিক্ষাক্রম এর পরিস্থিতি বিশ্লেষণ কার্যকারিতা যাচাই এবং চাহিদা নিরূপণ (২০১৭-২০১৯) থিমেটিক কর্মশালা ও সভার মাধ্যমে জাতীয় সমন্বিত স্কিল ফ্রেমওয়ার্ক উন্নয়ন (২০১৮-২০১৯) প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাক্রম রূপরেখার ধারণা উন্নয়ন (২০১৯) শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটি (CDRCC) গঠন ( ২০২০ )  (CDRCC)-কে সহায়তা করার জন্য কার্যসম্পাদন কমিটি গঠন কার্যসম্পাদন কমিটির সহায়তায় সংশ্লিষ্ট বিষয় বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাক্রম রূপরেখার খসড়া প্রণয়ন (২020) মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং বোর্ডের সাথে মতবিনিময় ( ২০২০ ) খসড়া রূপরেখার উপর ৮০০ জনের অধিক অংশীজনের মতামত গ্রহণ অংশীজনের মতামত বিশ্লেষণ এবং তদানুযায়ী খসড়া হালনাগাদকরণ শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটি কর্তৃক হালনাগাদকৃত খসড়া অনুমোদন বিভিন্ন পর্যায়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের সাথে একাধিক সভায় খসড়া সম্পর্কে মতামত গ্রহণ সর্বসাধারণের মতামত গ্রহণের উদ্দেশ্যে ওয়েবসাইটে উন্মুক্তকরণ প্রাপ্ত মতামত পর্যালোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত খসড়া উন্নয়ন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক চূড়ান্ত খসড়া NCCC-তে প্রেরণের জন্য অনুমোদন প্রদান মন্ত্রণালয় কর্তৃক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনার জন্য প্রেরণ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নীতিগত অনুমোদন পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাইয়ের জন্য উপদেষ্টা কমিটিতে প্রেরণ এবং কমিটির মতামতের প্রেক্ষিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ এর খসড়া চূড়ান্তকরণ NCCC কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদন এই ধারাবাহিকতায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বিশেষজ্ঞগণের সরাসরি পরিচালনায় ১৩টি দলের মাধ্যমে খসড়া শিক্ষাক্রম রূপরেখার উপর ৮০০-এর অধিক অংশীজনের মতামত গ্রহণ করা হয়। অংশীজনদের মধ্যে রয়েছেন নীতি নির্ধারক (মাননীয় মন্ত্রীমহোদয়গণ, মাননীয় সংসদ সদস্যগণ, সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ); প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ; শিক্ষা সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা (বেসরকারি উদ্যোক্তা); শিক্ষা বিশেষজ্ঞ (বিজ্ঞান শিক্ষা, গণিত শিক্ষা, সামাজিক বিজ্ঞান শিক্ষা, ভাষা শিক্ষা, বিশেষ শিক্ষা, ব্যবসায় শিক্ষা, একীভূত শিক্ষা), শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ, শিক্ষা প্রশাসক, শিক্ষক প্রশিক্ষক (নায়েম, নেপ, এইচএসটিটিআই, পিটিআই, টিটিসি, টিটিটিসি, বিএমটিটিআই); অভিভাবক (প্রাথমিক, মাধ্যমিক, বৃত্তিমূলক); শিক্ষক (প্ৰাথমিক, মাধ্যমিক, বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, শিক্ষা); শিক্ষার্থী (প্রাথমিক, মাধ্যমিক, বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, শিক্ষা); বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক (বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, কারিগরি, মেডিকেল, প্রকৌশল, কৃ ষি, পরিবেশ, সামাজিক বিজ্ঞান); পেশাজীবী (প্রযুক্তিবিদ, ডাক্তার, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, কৃষিবিদ, পরিবেশবিদ, উন্নয়ন কর্মী); নিয়োগকর্তা (ইন্ডাস্ট্রি, পিএসসি, এনজিও, উদ্যোক্তা, মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন সেক্টর – আইসিটি, কৃষি, গার্মেন্টস, গণমাধ্যম, সৃজনশীল মিডিয়া); মাদ্রাসা (শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ); কারিগরি (শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ); এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন সদস্য। অংশীজন পরামর্শের মাধ্যমে প্রাপ্ত সুনির্দিষ্ট মতামতগুলোর যথাযথ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে পরবর্তীকালে খসড়া শিক্ষাক্রম রূপরেখাটি পরিমার্জন করা হয়। এ পর্যায়ে খসড়া জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখাটি ১৩.০১.২০২০ তারিখে সিডিআরসিসি সভায় উপস্থাপন করা হয় যা কমিটি কর্তৃক পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য অনুমোদন করা হয় । সিডিআরসিসি’র সুপারিশ অনুযায়ী সর্বসাধারণের মতামতের উদ্দেশ্যে খসড়া রূপরেখাটি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করা হয়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ খসড়া রূপরেখাকে আরও সমৃদ্ধ করে । ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিত এনসিটিবির ৬৮৪ তম জরুরি বোর্ড সভার ০১ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খসড়া জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখাটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির নিকট প্রেরণ করা হয়। এমতাবস্থায়, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার উপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় নির্দেশনা কামনা করেন। তদানুযায়ী জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয় । ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে একটি ভার্চুয়াল সভার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উপস্থাপনা করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা প্রদান করেন এবং উপস্থাপিত জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এই সভার মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদন লাভ করে। ১২ অক্টোবর ২০২১ তারিখে জাতীয় শিক্ষাক্রম সম্পর্কিত উপদেষ্টা কমিটির সভায় জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখাটি উপস্থাপন করা হলে

Uncategorized

শিক্ষাক্রম উন্নয়নের ভিত্তি (Foundations of curriculum development)

নতুন শিক্ষাক্রম উন্নয়নের ক্ষেত্রে পাঁচটি ভিত্তিকে বিবেচনা করা হয়েছে। সেগুলো হলো : দার্শনিক ভিত্তি (Philosophical foundation) মনোবৈজ্ঞানিক ভিত্তি (Psychological foundation) ঐতিহাসিক ভিত্তি (Historic foundation) জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকার (Global and national priorities) এবং প্রমাণনির্ভর ভিত্তি (Evidence based Foundation) দার্শনিক ভিত্তি (Philosophical foundation) শিক্ষাক্রমের একটি দার্শনিক ভিত্তি থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত দার্শনিক ভিত্তিকে কেন্দ্র করে শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য প্রভৃতি নির্ধারিত হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত দার্শনিক তত্ত বিশ্লেষণ করে সেগুলোর ভিত্তিতে নতুন শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়েছে। যুগের পরিক্রমায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রথাগত অনেক দার্শনিক মতবাদ (যেমন- Perennialism, Essentialism, ইত্যাদি) প্রাসঙ্গিকতা হ্রাস পেয়েছে। বিভিন্ন তত্ত্বের মধ্যে প্রগতিবাদ (Progressivism) কে এই শিক্ষাক্রমে বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এই মতবাদ অনুযায়ী শিক্ষাক্রমের মূল উদ্দেশ্য হলো দৈনন্দিন জীবন এবং সমস্যা নিয়ে শিক্ষার্থীর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি গঠন এবং আগ্রহ সৃষ্টি করা। এই বিবেচনায় শিক্ষার্থীর শিখন হতে হবে আন্তঃবিষয়ক (interdisciplinary), সমন্বিত (integrative) এবং প্রক্রিয়া হবে মিথস্ক্রিয়ামূলক (integrative)। শিক্ষাবিজ্ঞানে সাম্প্রতিক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হল গঠনবাদ এবং পুনর্গঠনবাদ। গঠনবাদ অনুযায়ী শিখনের মূল উদ্দেশ্য হল পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সাথে অভিযোজনের জন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করা। আর পুনর্গঠনবাদের ( Reconstructivism) দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শিক্ষার্থী অভিযোজনের জন্য সামাজিক শিখন পরিবেশের সাথে প্রতিনিয়ত মিথষ্ক্রিয়া ঘটায় এবং এর ফলে শিক্ষার্থী ও শিখন পরিবেশ উভয়ের মাঝেই পরিবর্তন ঘটে। পরিবর্তনের এই অভিজ্ঞতাই শিক্ষার্থীর শিখনের ভিত্তি তৈরি করে। প্রগতিবাদ এবং পুনর্গঠনবাদকে মূল দার্শনিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করে প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম রূপরেখার কাঠামো ও কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অন্যান্য মতবাদের প্রাসঙ্গিক ধারণাসমূহ প্রগতিবাদ এবং পুনর্গঠনবাদের আলোকে রূপান্তর ঘটিয়ে এই শিক্ষাক্রমে বিবেচনা করা হয়েছে। মনোবৈজ্ঞানিক ভিত্তি (Psychological foundation ) শিক্ষাক্রমের মনোবৈজ্ঞানিক ভিত্তি শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ার ধরন কেমন হবে তার নির্দেশনা প্রদান করে। এই ভিত্তিটি তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের শিখন মতবাদের ধারণাসমূহ বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে। আচরণবাদী (Behaviourist) মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন শিখন একটি ধারাবাহিক পূর্ব নির্ধারিত প্রক্রিয়া এবং এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ধাপে ধাপে শিখন-শেখানো প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে শিখন নিশ্চিত করতে হবে। অপর দিকে বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশ তত্ত্বের (Cognitive Development Theory) অনুসারী মনোবিজ্ঞানীগণ মনে করেন শিখন নির্ভর করে শিক্ষার্থীর তথ্য বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ার প্রতি মনোযোগ এবং চিন্তন প্রক্রিয়ার চর্চার ওপর । কাজেই এই মতবাদ অনুযায়ী শিখন-প্রক্রিয়া লুকিয়ে আছে বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে একটি সমস্যা সমাধানমূলক চর্চার ওপর যা চিন্তন প্রক্রিয়াকে স্বজ্ঞাত, সৃষ্টিশীল এবং প্রতিফলনমূলক উপায়ে চর্চার মাধ্যমে অর্জিত হয়। অপরদিকে সামগ্রিকতাবাদে (Gestalt Theory) বিশ্বাসী মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন শিখন নির্ভর করে সমস্যাকে সামগ্রিকভাবে বিশ্লেষণ করে তা সমাধানের পথ বের করার ওপর, এই প্রক্রিয়ায় সমস্যার চারপাশের পরিবেশের উপাদান ও তার প্রভাব বিশ্লেষণ অতীব জরুরি একটি প্রক্রিয়া। কাজেই সামগ্রিকতাবাদ অনুযায়ী শিক্ষাক্রমের সঙ্গে সমাজ ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন নিশ্চিত করতে পারলেই প্রকৃত শিখন ঘটে। এই সামগ্রিকতাবাদের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীকালে সামাজিক গঠনবাদ (Social Constructivism) নামে একটি নতুন মনোবৈজ্ঞানিক ধারণার উদ্ভব ঘটেছে। এই মতবাদ শিক্ষার্থীর বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে সমস্যা সমাধানের জন্য উপযোগী পরিবেশ এবং পারস্পরিক যোগাযোগ তৈরির মাধ্যমে সৃষ্টিশীল সমাধান বের করার কৌশল নির্ধারণকে উৎসাহিত করে। পরিবেশ ও প্রতিবেশের সঙ্গে মানুষের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে যে সহাবস্থান তার ওপরে ভিত্তি করে মানুষের শিখন প্রক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করে আরেকটি মতবাদ প্রবর্তিত হয়েছে, যা ব্রর্নফেনব্রেনারের ইকলজিকাল সিস্টেম থিওরি (Ecological System Theory) নামে পরিচিত। বর্তমান প্রেক্ষাপটে, ডিজিটাল টেকনোলজি প্রয়োগের ফলে মানুষের শিখনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিনির্ভর স্বাধীনতা (শিক্ষার্থীর প্রবণতা ও প্রেষণা অনুযায়ী শিখনের সময়, বিষয়বস্তু, শিখনের স্থান, উদ্দেশ্য ও শিখনের প্রক্রিয়াতে বহুমাত্রিক নমনীয়তা নিশ্চিত করা) এবং শিক্ষার্থীর মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ স্থাপন করার ভিত্তিতে এক নতুন শিখন ধারণার উদ্ভব ঘটেছে, যা সংযোগবাদ (Connectivism) নামে পরিচিত (Siemens, 2004)। এই শিক্ষাক্রম রূপরেখায় সামাজিক গঠনবাদ মতবাদ এবং এর ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা মতবাদসমূহকে মূল মনোবৈজ্ঞানিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, এবং এর সঙ্গে Howard Gardner (১৯৮৩)-এর বহুমুখী বুদ্ধিমত্তার তত্ত্ব (Multiple Intelligence Theory) যা সামাজিক গঠনবাদের ভিত্তির ওপরেই গড়ে উঠেছে; এবং যা ধারণা দেয় যে, মানুষের বুদ্ধিমত্তার বহুমুখী মাত্রা রয়েছে এবং একজন মানুষ এক বা একাধিক মাত্রার বুদ্ধিমত্তায় পারদর্শী হতে পারে, তাও এখানে বিবেচিত হয়েছে। সর্বোপরি এই রূপরেখায় প্রয়োজনভেদে অন্যান্য মতবাদেরও সীমিত ও যৌক্তিক চর্চা নিশ্চিত করা হয়েছে। ঐতিহাসিক ভিত্তি (Historic foundation) এ উপমহাদেশে প্রথম শিক্ষা কমিশন গড়ে উঠে ১৮৮২ সালে Sir William Wilson Hunter এর নেতৃত্বে যা হান্টার কমিশন নামে পরিচিতি লাভ করে। হান্টার কমিশন ১৮৮৩ সালে তার রিপোর্টে সর্বপ্রথম কোর্স এ (সাহিত্য) ও কোর্স বি (কারিগরি শিক্ষা) নামে দু’টি ধারার শিক্ষাব্যবস্থা প্রস্তাব করে। এর মাধ্যম ব্রিটিশ ভারতে সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে একই ধারার শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন হয় এবং ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত তা বহাল থাকে । ১৯৪৯ সালে গঠিত মওলানা আকরাম খান শিক্ষা কমিটি’র রিপোর্ট অনুযায়ী যুক্তফ্রন্ট সরকার একটি সার্বজনীন বিজ্ঞানভিত্তিক একই ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চেয়েছিল (Islam, S., 2012)। ১৯৫৭ সালে আতাউর রহমান শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনও তার রিপোর্টে একই ধারার শিক্ষার কথা বলে। কিন্তু ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসক আইয়ুব খান ক্ষমতা দখল করার পর শরীফ খান শিক্ষা কমিশন গঠন করে এবং ১৯৫৯ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থায় নবম শ্রেণি থেকে সাধারণ শিক্ষাকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা নামে তিনটি ধারায় বিভক্ত শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তিত হয় (Department of Education, Government of Pakistan, 1959)। আজ পর্যন্ত সেই ব্যবস্থাই প্রচলিত আছে। তবে স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয় এবং হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭২ সালে এই শিক্ষা কমিশন উদ্বোধন করেন । উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন যে, তিনি এমন একটি শিক্ষাকাঠামো চান যার মাধ্যমে একটি সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে যার ভিত্তি হবে সমতা । তাঁর দিক নির্দেশনা অনুযায়ীই এই কমিশন ১৯৭৪ সালে সার্বজনীন বিজ্ঞানভিত্তিক একই ধারার সাধারণ শিক্ষার কথা সুপারিশ করেছিল (Government of the People’s Republic of Bangladesh, 1974) । এই শিক্ষাক্রম রূপরেখাটি ঐতিহাসিক এ প্রেক্ষাপট ও নির্দেশনাকে সামনে রেখে উন্নয়ন করা হয়েছে। ===000=== তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Uncategorized

শিক্ষাক্রম উন্নয়নের পটভূমি(Background of curriculum development)

মানুষ একটি পরিপূর্ণ জীবন প্রত্যাশা করে। সেই জীবন হবে নান্দনিক ও আনন্দময়। পাশাপাশি মানুষ পারিবারিক, সামাজিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নিজের অর্থপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে চায়। শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য জীবনকে নান্দনিক, আনন্দময়, ও অর্থবহ করে তোলা, এবং সেই সাথে শিক্ষার্থীকে জীবিকা অর্জনের উপযোগী যোগ্য, সৃষ্টিশীল ও মানবিক মানুষে পরিণত করা। একইসঙ্গে পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীকে একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাও শিক্ষার উদ্দেশ্য। পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে মানুষের জীবন ও জীবিকা বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রযুক্তির উত্তোরোত্তর উৎকর্ষের কারণে পরিবর্তনের গতিও হয়েছে অনেক দ্রুত। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই বিশ্বের সঙ্গে মানুষের অভিযোজনের কোনো বিকল্প নেই। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাত্রা পৃথিবীর ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে এগিয়ে চলেছে অভাবনীয় গতিতে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব পর্যায়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ মানুষের কর্মসংস্থান এবং জীবনযাপন প্রণালিতে যে পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে, তার মধ্য দিয়ে যন্ত্র ও মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক আরো নিবিড় হচ্ছে। এর ফলে বর্তমান সময়ের কর্মজগতের অনেক কিছুই ভবিষ্যতে যেমন থাকবে না, তেমনি অনেক নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে যা এই মুহূর্তে অনুমান করা প্রায় অসম্ভব । বিশ্বায়নের কারণে যেমন দেশে-দেশে, সমাজে-সমাজে ভৌগোলিক দূরত্ব ঘুচে যাচ্ছে, তেমনি আবার অবিমিশ্র নগরায়ণ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্দেশিক অভিবাসন আমূল পাল্টে ফেলছে সনাতন জীবন ও সংস্কৃতি। পৃথিবী জুড়েই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটলেও যেমন তার সুষম বণ্টন হয়নি, তেমনি সামাজিক উন্নয়নও তাল মেলাতে পারছেনা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতির সঙ্গে । যার ফলে এখনও পৃথিবীতে রয়ে গেছে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষার মত মৌলিক সমস্যাবলি। ঘনীভূত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ুদূষণ, অভিবাসন বা জাতিগত সহিংসতাজনিত সমস্যাসমূহ। দেখা দিচ্ছে কোভিড ১৯-এর মতো মহামারি যা সারা বিশ্বের জীবনযাত্রা এবং অর্থনীতিকে থমকে দিয়েছে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় সংযোজিত হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং মাত্রা। এসব চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তার টেকসই ও কার্যকর সমাধান এবং সম্ভাবনার পূর্ণ সুফল গ্রহণের জন্য জ্ঞান, দক্ষতা ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন দূরদর্শী, সংবেদনশীল, অভিযোজন-সক্ষম, মানবিক এবং যোগ্য বিশ্ব-নাগরিক প্রড়িজন। একবিংশ শতাব্দীর তথ্য ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেরকম নাগরিক তৈরিতে হিমশিম খাচ্ছে সনাতনী শিক্ষাব্যবস্থা। কারণ এই সনাতন মুখস্থ ও পরীক্ষানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল আজ থেকে তিনশত বছর আগের তৎকালীন সমাজের জীবন ও জীবিকার প্রয়োজন মেটানোর জন্য, এরপর শিক্ষা-কাঠামোর গুণগত পরিবর্তন হয়েছে খুব কমই। এখন প্রয়োজন এমন শিক্ষাব্যবস্থা, যা নমনীয়, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সক্ষম এবং উদ্ভূত আর্থসামাজিক প্রয়োজনের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন চলমান পুরোন সমস্যার টেকসই সমাধান, আর নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার চেষ্টা ও আত্মবিশ্বাস। এই সামগ্রিক বৈশ্বিক আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পদার্পনের লক্ষমাত্রা অর্জনে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এই অভিলক্ষ্য পূরণের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার শিক্ষা। আর সেজন্য শিক্ষার আধুনিকায়ন অপরিহার্য। আর এই আধুনিকায়নের শুরুটা হতে হবে অবশ্যই একটি কার্যকর যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম উন্নয়নের মাধ্যমে যা সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-এর একটি নিয়মিত এবং গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম । সর্বশেষ ২০১২ সালে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয় । সময়ের পরিক্রমায় পরিবর্তনশীল পৃথি বীর সাথে তাল মিলাতে নতুন শিক্ষাক্রম উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এই উদ্দেশ্যে শিক্ষার বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং শিখন চাহিদা নিরূপণের জন্য ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালব্যাপী বিভিন্ন গবেষণা এবং কারিগরি অনুশীলন পরিচালিত হয়। তারই উপর ভিত্তি করে প্রেক্ষাপট, প্রয়োজন এবং নতুন বিশ্বপরিস্থিতিতে টিকে থাকার মতো যোগ্য প্রজন্ম গড়ে তুলতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণির অবিচ্ছিন্ন শিক্ষাক্রম উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ===000=== তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Uncategorized

যোগ্যতার ধারণা

একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম নাগরিক সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ দেশই যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম অনুসরণ করছে। বাংলাদেশেও শিক্ষাক্রম রূপরেখাটি যোগ্যতার ধারণাকে কেন্দ্র করেই উন্নয়ন করা হয়েছে। সাধারণভাবে বলা যায়, জ্ঞান, দক্ষতা এবং ইতিবাচক মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি সমন্বিতভাবে অর্জিত হলে শিক্ষার্থীর মাঝে যোগ্যতা গড়ে উঠে। উদাহরণস্বরূপ, একটি গাড়ি কীভাবে চালনা করতে হয় তা যখন বই পড়ে বা শুনে বা দেখে একজন শিক্ষার্থী জানতে পারে, তার জ্ঞান অর্জিত হয়। ঐ শিক্ষার্থী যদি গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশগুলো হাতে-কলমে পরিচালনা করতে শেখে অর্থাৎ গাড়ি সামনে, পেছনে, ডানে বা বামে চালাতে পারে কিংবা ব্রেক করতে পারে, তবে তার দক্ষতা তৈরি হয়। আর যদি সে গাড়ি চালিয়ে নিজের ও রাস্তার সকল মানুষ, প্রাণী ও সম্পদের নিরাপত্তা রক্ষা করে গন্তব্যে পৌঁছানোর সক্ষমতা অর্জন করে, তবে ঐ শিক্ষার্থীর গাড়ি চালনা বিষয়ে যোগ্যতা অর্জিত হয়। এখানে জ্ঞান, দক্ষতা এবং মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি সমন্বিতভাবে কাজ করেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের ধারণা জনপ্রিয়তা পেলেও ‘যোগ্যতা’র সুনির্দিষ্ট বা একক কোনো তত্ত্ব বা সংজ্ঞার্থ গড়ে ওঠেনি যার মাধ্যমে প্রচলিত সকল ধারণাকে একটি অভিন্ন ফ্রেমে বাঁধা যায় (Winterton et al., 2005)। প্রেক্ষাপট যোগ্যতার ধারণাকে প্রভাবিত করে বলেই বিভিন্ন দেশের যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমে যোগ্যতাকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আবার শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে, কিংবা বিভিন্ন পেশাগত ক্ষেত্রে যোগ্যতা সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা ব্যবহার করা হয়েছে (Kennedy D & Hyland A, 2009)। এমনকি নাম ব্যবহারের ক্ষেত্রেও রয়েছে ব্যাপক বৈচিত্র্য, কেননা কোনো শিক্ষাবিদ বা গবেষক ‘যোগ্যতা’ বোঝাতে ব্যবহার করেছেন সক্ষমতা, আবার অনেকেই ব্যবহার করেছেন দক্ষতা বা Capacity, Capability, Performance Standard ইত্যাদি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যোগ্যতাকে খুবই সংকীর্ণ অর্থে, অর্থাৎ, যোগ্যতা আর দক্ষতাকে প্রায় সমার্থক করে দেখা হয়েছে। (Adam 2004, Brown and Knight 1995)। অন্যদিকে ECTS (Europian Credit Transfer System) Users’ Guide 2009 সংজ্ঞা অনুযায়ী ব্যক্তিগত এবং পেশাগত উন্নয়নের প্রয়োজনে শিক্ষা বা কর্মক্ষেত্রে জ্ঞান, দক্ষতা এবং ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পদ্ধতিগত সক্ষমতা প্রয়োগের প্রমাণিত ক্ষমতাই যোগ্যতা। নার্সিং পেশায় সেবা দেয়ার সময় জ্ঞানমূলক, আবেগীয় ও মনোপেশিজ দক্ষতাসমূহ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারাই যোগ্যতার পরিচায়ক (Miller et al, 1988) । পেশাগত ক্ষেত্রে যোগ্যতা হলো জ্ঞান, মনোভাব এবং আচরণের এমন এক প্যাটার্ন যা একত্রে কোনো কাজ সম্পাদনের সামর্থ্য তৈরি করে (Neary, 2002)। শুধু জ্ঞান আর দক্ষতা নয় বরং মূল্যবোধ, সূক্ষ্ম চিন্তন, পেশাগত বিচার-বিবেচনা, মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমাজ ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্বের সন্নিবেশনও অনেক ক্ষেত্রে যোগ্যতার অন্তর্ভুক্ত। একইভাবে দেশভেদেও যোগ্যতার ধারণায় পার্থক্য দেখা যায়। The Higher Education and Training Awards Council of Ireland (HETAC)-এর মতে, বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতিতে জ্ঞান ও দক্ষতার সৃজনশীল ও কার্যকর প্রদর্শন এবং প্রয়োগ করতে পারাকেই যোগ্যতা বলে। এ কাউন্সিল আরো মনে করে যে, শিক্ষার্থীর নিজের দুর্বলতা নিজেই চিহ্নিত করতে পারা এবং সে অনুযায়ী নতুন কিছু শিখতে পারাও যোগ্যতা। ২০০০ সালে Tuning Educational Structures in Europe নামক প্রকল্প ইউরোপের শিক্ষার ক্ষেত্রে যোগ্যতার সংজ্ঞার্থ নির্ধারণ করতে গিয়ে উল্লেখ করেছে যে, যোগ্যতা হচ্ছে জ্ঞান, অনুধাবন, দক্ষতা এবং সক্ষমতার এক সমন্বয়। আবার ইংল্যান্ডে কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে যোগ্যতাকে কর্মসম্পাদন ও পেশাগত ভূমিকা পালনের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যোগ্যতা বলতে দক্ষতা, জ্ঞান ও ব্যক্তির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যেমন : প্রবণতা, মনোভাব, আত্ম-ধারণা প্রভৃতিকে বোঝানো হয়েছে (Van der Klink and Boon, 2002)। অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষাক্রমে যোগ্যতাকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘Capability’ হিসেবে। এই শিক্ষাক্রমে ধরে নেয়া হয়েছে জ্ঞান, দক্ষতা, আচরণ আর স্বভাব বা অন্তর্গত বিন্যাস (Dispositions)-এর সম্মিলনে গড়ে ওঠে যোগ্যতা। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এবং বিদ্যালয়ের বাইরে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যখন জটিল ও পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কার্যকর ও যথার্থভাবে জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োগ করে তখন যোগ্যতা অর্জন করে। জার্মানিতে যোগ্যতাকে গ্রহণ করা হয়েছে প্রেক্ষাপট অনুযায়ী কোনো নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার জন্য অর্জিত জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রের পুনর্বিন্যাস করার সক্ষমতাকে। অন্যদিকে, এস্তোনিয়া তার শিক্ষাক্রমে যোগ্যতার সাধারণ ধারণাকে (অর্থাৎ জ্ঞান, দক্ষতা, মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গি, এবং মূল্যবোধ-সংস্কৃতি) নিজস্ব প্রেক্ষাপট অনুযায়ী গ্রহণ করেছে (Estonia, 2014)। ভিন্ন ভিন্ন ধারণায়নের মধ্যেও যোগ্যতা সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে, তা হলো, শিক্ষার্থী যদি কোন প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা ও মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, নৈতিকতা প্রভৃতির সন্নিবেশ ঘটিয়ে কর্মসম্পাদনে পারদর্শিতা প্রদর্শন করতে পারে তবে তাকে ঐ বিশেষ প্রেক্ষাপটে যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ বলা যায় (Kennedy D & Hyland A, 2009)। যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম উন্নয়ন করার ক্ষেত্রে যে ধারণাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো নিজস্ব প্রেক্ষাপট বিবেচনা। কেননা শিক্ষার্থীদেরকে নিজস্ব প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সংযুক্ত করা না হলে তাদের মধ্যে যেকোনো যোগ্যতা গড়ে তোলাই দুরূহ হয়ে যেতে পারে (Klieme E. et al. 2008) । উপযুক্ত বিশ্লেষণে এটা স্পষ্ট যে, যোগ্যতার ধারণাসমূহের ভেতর কিছু উপাদান সার্বজনীন; যেমন : জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ প্রভৃতি, আবার কিছু উপাদান বিভিন্ন দেশ নিজস্ব প্রেক্ষাপট অনুযায়ী সংযুক্ত করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যোগ্যতাকে চারটি উপাদানের সমন্বয়ে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সেগুলো হলো : মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি, দক্ষতা ও জ্ঞান । মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে অভিযোজনের জন্য জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে অর্জিত সক্ষমতাকে এই শিক্ষাক্রম রূপরেখায় যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে, বিবৃত উপাদানগুলোর আন্তঃসম্পর্ক সরলরৈখিক নয় বরং জটিল বহুমাত্রিক । যোগ্যতার সংজ্ঞা উপরোক্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে যোগ্যতা হলো পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে অভিযোজনের জন্য জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ, ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বিত সক্ষমতা অর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্বত রাখা যোগ্যতার ধারণার আলোকে তার উপাদানসমূহকেও সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যেন তা ভালোভাবে উপলব্ধি করে শিক্ষাক্রমের মূল যোগ্যতা, শিখনক্রম, শিখন-শেখানো কৌশল, শিখন-শেখানো সামগ্রী ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে প্রতিফলিত করা যায় । তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Scroll to Top