City of Education

Author name: Naryan Ch. Das

Uncategorized

ধারণায়নঃ ডিজিটাল প্রযুক্তি (Digital Technology)

বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতার বিবরণী জীবনের সকল ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথাযথ, নিরাপদ, নৈতিক, সৃজনশীল ও দায়িত্বশীল ব্যবহার করতে পারা এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি সক্ষমতা অর্জন করে প্রত্যাশিত ভবিষ্যত গড়ে তোলার লক্ষ্যে তৈরি হওয়া। বিষয়ের ধারণায়ন ডিজিটাল প্রযুক্তি শিক্ষা বিষয়ের ধারণায়নের সময় এই বিষয়ের ব্যাপ্তি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি। বরং বিষয়ের ধারণায়ন এমনভাবে করা হয়েছে যে, শিক্ষার্থী শুধু তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারকারীই হবে না বরং সে ডিজিটাল সাক্ষরতা অর্জন করবে, ও তার সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে নিজের এবং পারিপার্শ্বিক সমস্যা সমাধানের জন্য নিজস্ব ডিজিটাল সলিউশন উদ্ভাবন করতে পারবে। এর ফলে আইসিটি সক্ষমতার পাশাপাশি তার মাঝে ডিজিটাল প্রযুক্তির সক্ষমতাও তৈরি হবে যা তাকে দক্ষ ডিজিটাল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাক্রম রূপরেখায় ডিজিটাল প্রযুক্তি শিক্ষা বিষয়টির ধারণায়নের কেন্দ্রে রাখা হয়েছে ডিজিটাল সাক্ষরতা, তথ্য সাক্ষরতা যার মূল অনুষঙ্গ। ডিজিটাল সাক্ষরতা ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা সুসংবদ্ধ চিন্তন দক্ষতা অর্জন করবে যার সাহায্যে তারা নিজস্ব ডিজিটাল সলিউশন সৃষ্টি করতে পারবে। এক্ষেত্রে যে চিন্তনদক্ষতাসমূহকে এই ধারণায়নে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সেগুলো হল : কম্পিউটেশনাল চিন্তন, ডিজাইন চিন্তন ও সিস্টেম চিন্তন। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীরা সমস্যা সমাধান, যোগাযোগ ও সহযোগিতা, সৃজনশীল উদ্ভাবনের যোগ্যতা অর্জন করবে যা তার আইসিটি সক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। দক্ষ ডিজিটাল নাগরিক গড়ে তোলার লক্ষ্যে আরো যে দুটি বিষয়ে ধারণা অর্জন করতে হবে তা হল : আইসিটির নিরাপদ, নৈতিক ও দায়িত্বশীল ব্যবহার, এবং বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রেক্ষাপট। আইসিটি সক্ষমতা ও ডিজিটাল প্রযুক্তি সক্ষমতা দুইক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীকে এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তি শিক্ষা বিষয়ের ধারণায়নে উঠে আসা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিতভাবে নিচে আলোকপাত করা হল । ডিজিটাল সাক্ষরতা : বর্তমান সময়ের প্রযুক্তি নির্ভর সমাজের উপযুক্ত সদস্য হিসেবে জীবনধারণ করতে ডিজিটাল সাক্ষরতা অত্যাবশ্যক। ডিজিটাল সাক্ষরতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ তথ্য সাক্ষরতা, তবে এর পরিধি আরো ব্যাপক। সুক্ষ্ম চিন্তন দক্ষতা ব্যবহার করে বিভিন্ন ডিজিটাল প্রযুক্তির কার্যকারিতা যাচাই করতে পারা, বিভিন্ন প্রয়োজনে দক্ষতার সঙ্গে উপযুক্ত প্রযুক্তির যথাযথ, সৃজনশীল ও দায়িত্বশীল ব্যবহার করতে পারা, এবং নিজস্ব কনটেন্ট তৈরি ও উপস্থাপনও ডিজিটাল সাক্ষরতার অংশ। তথ্য সাক্ষরতা সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিতভাবে নিচে আলোকপাত করা হল : তথ্য সাক্ষরতা বলতে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য খুঁজে বের করা, তথ্যের নিরাপদ ও দায়িত্বশীল ব্যবহার ও সংরক্ষণ করা, তথ্য ও তথ্যের উৎসের নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করাসহ তথ্য ব্যবস্থাপনার সকল দিককে বোঝায়। তথ্য সাক্ষরতা সকল মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে আলোচনা করে, এখনকার সময়ে মিডিয়া লিটারেসি বা মিডিয়া সাক্ষরতা এর অন্যতম অনুষঙ্গ। ডিজিটাল মিডিয়ার বিশাল তথ্যভাণ্ডার এখন মানুষের কাছে উন্মুক্ত, মানুষের পছন্দ, অপছন্দ, মতামতের ওপর স্পষ্ট প্রভাব পড়ছে এসব ডিজিটাল মিডিয়ার। কাজেই যেকোনো মিডিয়া থেকে তথ্য নেবার আগে উৎস ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, বিশ্বাসযোগ্যতা ইত্যাদির নির্মোহ বিশ্লেষণ করা জরুরি। একই সঙ্গে দরকার তথ্য ব্যবহার বা শেয়ার করার আগে সম্ভাব্য ঝুঁকি ও ইস্যুসমূহ বিবেচনা করে দায়িত্বশীল আচরণ চর্চা করা। তাছাড়া ডিজিটাল মিডিয়াকে শুধু তথ্য গ্রহণের মাধ্যম হিসেবে না নিয়ে নিজস্ব কনটেন্ট তৈরি ও শেয়ারের প্রায়োগিক দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে ডিজিটাল প্রযুক্তি যেহেতু দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এসব প্রযুক্তি সম্পর্কে সম্যক ধারণা ও ব্যবহারিক দক্ষতা ছাড়া তাই তথ্য সাক্ষরতা অর্জন করা কঠিন । অন্য দিকে একবিংশ শতকে প্রযুক্তি ব্যবহারকারী হিসেবে শুধু নয়, বরং ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীরা যাতে উদ্ভাবকের ভূমিকা নিতে পারে সেটাও বিবেচ্য। আর বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সৃজনশীল চিন্তা ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা যাতে কার্যকর ডিজিটাল সলিউশন উদ্ভাবন করতে পারে সেজন্যেও ডিজিটাল সাক্ষরতা প্রয়োজন। এসব বিবেচনায় শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে যাতে ডিজিটাল সাক্ষরতা অর্জন করতে পারে এবং জীবনব্যাপী এই দক্ষতা যাতে কাজে লাগাতে পারে সেই অনুযায়ী অর্জন উপযোগী যোগ্যতা নির্ধারিত হয়েছে। ডিজিটাল সাক্ষরতা ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা যেসব যোগ্যতা অর্জন করবে তাদের নিচের ডাইমেনশনগুলোতে ব্যাখ্যা করা যায় : যোগাযোগ ও সহযোগিতা : তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবীকে এখন বলা হচ্ছে গ্লোবাল ভিলেজ, যেখানে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বসে যে-কেউ অন্য প্রান্তের কারো সঙ্গে মুহূর্তেই যোগাযোগ করতে পারে। ব্যক্তিগত প্রয়োজন ছাড়াও সমস্যা সমাধানের জন্য হোক বা অন্য যেকোনো সৃজনশীল কাজের জন্য হোক প্রযুক্তিনির্ভর এই পৃথিবীতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যোগাযোগের সক্ষমতা যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি হচ্ছে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে এক সঙ্গে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন। এই ক্ষেত্রে শুধু আইসিটি ব্যবহারের দক্ষতাই যথেষ্ট নয়, বরং নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে নির্দিষ্ট টার্গেট গ্রুপের জন্য উপযুক্ত যোগাযোগের মাধ্যম নির্ধারণ করে যোগাযোগের দক্ষতা এখানে গুরুত্বপূর্ণ । সমস্যা সমাধান : ব্যক্তিগত বা সামষ্টিক প্রয়োজনে বা কোনো সমস্যা সমাধানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথাযথ ও সৃজনশীল ব্যবহার করতে পারার সক্ষমতা অর্জন করার উপরে এই রূপরেখায় বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়েছে । শুধু তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার নয়, বরং যেকোনো সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সবগুলো ধাপে যথাযথভাবে উপযুক্ত ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে শিক্ষার্থীদের সক্ষম করে তোলার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন : সমস্যা সমাধানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সৃজনশীল ব্যবহারই শুধু নয়, বরং নিজস্ব কনটেন্ট তৈরি থেকে শুরু করে সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনী ক্ষমতার প্রয়োগ করে ডিজিটাল সমাধান সৃষ্টি এই ধরনের যোগ্যতার অন্তর্গত। কম্পিউটেশনাল চিন্তন : ডিজিটাল প্রযুক্তির সক্ষমতা অর্জনের জন্য মূল যেই দক্ষতাগুলো প্রয়োজন তার মধ্যে অন্যতম হল কম্পিউটেশনাল চিন্তন। এটি মূলত সমস্যা সমাধানের একটি সুসংবদ্ধ গাণিতিক চিন্তন প্রক্রিয়া, যার মধ্যে রয়েছে জটিল সমস্যাকে ছোট ছোট অংশে ভেঙে আলাদা করা, তথ্য উপাত্ত যৌক্তিকভাবে সাজানো, সমস্যা সমাধানের ধাপগুলোকে ধারাবাহিকভাবে ক্রম অনুযায়ী বিন্যস্ত করা, প্যাটার্ন খুঁজে বের করা ইত্যাদি। ডিজাইন চিন্তন : ডিজাইন চিন্তন ডিজিটাল প্রযুক্তি সক্ষমতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ডিজাইন চিন্তন বলতে মূলত বোঝায় কোন সমস্যার সৃজনশীল, অভিনব ও কার্যকরী সমাধান উদ্ভাবন এবং তা যৌক্তিক মানদণ্ডের বিচারে যাচাই-বাছাই করার সুবিন্যস্ত প্রক্রিয়া । সিস্টেম চিন্তন : সিস্টেম চিন্তন বলতে মূলত বোঝায় কোনো সুনির্দিষ্ট সমস্যা ও তার প্রস্তাবিত সমাধান, সংশ্লিষ্ট সিস্টেমের প্রকৃতি এবং পারিপার্শ্বিক সামাজিক প্রেক্ষাপটের আন্তঃসম্পর্ক উদ্ঘাটনের জন্য একটা সমন্বিত প্রয়াস । ডিজিটাল সিস্টেম কীভাবে কাজ করে, এর বিভিন্ন উপাদান ও তাদের মিথস্ক্রিয়া কীভাবে গোটা সিস্টেমকে প্রভাবিত করে, এবং ডিজিটাল সিস্টেমসমূহের পরিবর্তন সমাজ, অর্থনীতির উপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে সেসবও এখানে বিবেচ্য বিষয়। উপরে উল্লেখিত ডাইমেনশনগুলোতে যোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে যে দুটি বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠতে হবে তা হল : আইসিটির নিরাপদ, নৈতিক ও দায়িত্বশীল ব্যবহার এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট । আইসিটির নিরাপদ, নৈতিক ও দায়িত্বশীল ব্যবহার : তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে যোগাযোগ অভাবনীয় সহজ হয়ে গিয়েছে, কিন্তু উল্টো দিকে সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন ঝুঁকি । এসব ঝুঁকি সম্পর্কে জানাই শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য যথেষ্ট নয়, বরং এই ঝুঁকিসমূহ মোকাবেলায় তথ্যপ্রযুক্তির নিরাপদ ও নৈতিক ব্যবহারের দক্ষতা থ াকাও জরুরি। মেধাস্বত্ব রক্ষার নৈতিক ও আইনি কাঠামো, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ ও সামাজিক কাঠামোতে এর নানা প্রভাব সম্পর্কিত আইন ও নৈতিক কাঠামো সম্পর্কে জ্ঞান থাকা তাই দরকার। একই সঙ্গে প্রয়োজন ব্যক্তিগত পরিচয়, গোপনীয়তা এবং অনুভূতি, রীতি-নীতি

Uncategorized

বিষয়ের ধারণায়নঃ বিজ্ঞান (Science)

বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতার বিবরণী প্রকৃতি ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে কৌতুহলী হয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে এর রহস্য উদ্ঘাটন করা ও এর অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য উপলব্ধি করা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে জীবনমানের উন্নয়ন করা এবং জাতীয় ও বৈশ্বিক কল্যাণে ইতিবাচক অবদান রাখা । বিষয়ের ধারণায়ন বিজ্ঞান সমাজ বা প্রকৃতির বাইরে কোন পৃথক বিষয় নয়, বরং প্রকৃতির ঘটনাবলিকে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে বুঝতে চেষ্টা করা বিজ্ঞান শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য। কাজেই এই রূপরেখায় বিজ্ঞান শিক্ষাকে শুধু তত্ত্ব ও তথ্য এবং পরীক্ষাগারে নির্ধারিত কিছু পরীক্ষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি বরং বৈজ্ঞানিক সাক্ষরতা অর্জনের উপর জোর দেয়া হয়েছে— যা শিক্ষার্থীর মধ্যে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বিজ্ঞানভিত্তিক জীবনাচরণের অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। শিক্ষাক্রমের বিষয় হিসেবে বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য, গুরুত্ব এবং সংশ্লিষ্ট শিখন-ক্ষেত্রসমূহ বিবেচনায় নিম্নলিখিতভাবে এর ধারণায়ন করা হয়েছে- বিজ্ঞান অনুসন্ধানমূলক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বিশ্বপ্রকৃতির রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালায়। এই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য স্কেল, অনুপাত ও পরিমাণের ধারণার প্রয়োজন পড়ে। কোন সিস্টেমে ঘটে চলা ঘটনাবলি ব্যাখ্যা করার জন্য ওই সিস্টেমকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়, বিবেচনায় নিতে হয় সিস্টেম ও এর উপাদানসমূহের গঠন ও আচরণ, তাদের স্থিতি ও পরিবর্তন, এবং সিস্টেমের ভেতরে চলতে থ াকা বস্তু ও শক্তির মিথস্ক্রিয়া। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান থেকে প্রাপ্ত প্রমাণনির্ভর তথ্যের ভিত্তিতে এসব ঘটনার প্যাটার্ন ও কার্যকারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত জ্ঞান বারবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর একটা সময় বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। সময়ের সঙ্গে উদ্ঘাটিত বৈজ্ঞানিক তথ্য, তত্ত্বের সমন্বয়ে বয়ে চলা বিজ্ঞানের মূল স্রোত থেকে ক্রমান্বয়ে তিনটি বিশেষায়িত ক্ষেত্র উন্মোচিত হয় : ভৌতবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান এবং পৃথিবী ও মহাকাশবিজ্ঞান । এই তিনটি বিশেষায়িত ক্ষেত্রের বাইরেও আরেকটি আলোচনার ক্ষেত্র গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, তা হল বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সমাজ। বিজ্ঞানের তথ্য দিয়ে ভারাক্রান্ত করে নয়, বরং অনুসন্ধানমূলক শিখনের মধ্য দিয়ে বিজ্ঞানের দর্শন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ইত্যাদির উপর সম্যক ধারণা নিয়ে শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞানভিত্তিক জীবনাচরণে অভ্যস্ত করে তোলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। এর ফলে ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের সমন্বয়ে বৈজ্ঞানিক সাক্ষরতা গড়ে উঠবে। একই সঙ্গে তারা দৈনন্দিন জীবনে বৈজ্ঞানিক দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করে বাস্তব সমস্যার সমাধান করতে পারবে ও বিজ্ঞানলব্ধ সামাজিক (Socio-scientific) মূল্যবোধ ধারণ করে ব্যক্তিগত ও সামগ্রিক ক্ষেত্রে দায়িত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল আচরণ করবে । বিজ্ঞান বিষয়ের ধারণায়নে উঠে আসা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিতভাবে নিচে আলোকপাত করা হল । বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান : প্রতিটি ব্যক্তি জন্মগতভাবে অনসুন্ধানী মন নিয়ে জন্ম নেয়। সমাজ এবং প্রকৃতির বিভিন্ন বস্তু এবং ঘটনা তাঁর কৌতুহলী মনকে আরো বেশি নাড়া দেয়। সে জানতে চায় এর কারণ কী? এর পেছনের ঘটনা কী? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যে পদ্ধতির আশ্রয় নিতে হয় তা হল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান । বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান হল কিছু কৌশলের সমন্বয়ে একটি সুসংহত পদ্ধতি, যার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণযোগ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রকৃতির রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করা হয়। এ পদ্ধতি আয়ত্ত করতে হলে শিক্ষার্থীকে একটি যৌক্তিক, নিয়মতান্ত্রিক ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় যা তাঁকে বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলে । সঠিকভাবে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পরিচালনার জন্য কিছু বৈজ্ঞানিক দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি আয়ত্ত করা প্রয়োজন : বৈজ্ঞানিক দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি : বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন হয় একটি কৌতুহলী মনের যা প্রতিটি শিশুর মধ্যে বিদ্যমান। পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের পদ্ধতি আয়ত্ত করার জন্য শিক্ষার্থীর মধ্যে কিছু প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতা থাকা অত্যাবশ্যক, যা তাঁর অনুসন্ধান প্রক্রিয়াকে আরো বেশি শাণিত করে। আর এ দক্ষতাগুলোকেই বৈজ্ঞানিক দক্ষতা হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে । যেহেতু বিজ্ঞানের তত্ত্ব ও তথ্যসমূহ শুধুমাত্র প্রমাণের ভিত্তিতেই গৃহীত হতে হয়, কাজেই নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতার মত কিছু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করাও সঠিকভাবে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পরিচালনার পূর্বশর্ত। স্কেল, অনুপাত ও পরিমাণ : যেকেনো বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে মাইক্রো বা ম্যাক্রো স্কেলের শর্তাবলি বিবেচনা করা জরুরি, কারণ অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় কী কী বিষয় প্রাসঙ্গিক তা অনেক সময় এই শর্তাবলির সাপেক্ষে ভিন্ন হতে পারে। অন্য দিকে, এই অনুসন্ধান পরিচালনা করতে বিভিন্ন পরিমাণ সম্পর্কে জ্ঞান, তাদের মধ্যকার সম্পর্ক এবং বিভিন্ন ধরনের পরিমাণ পরিমাপ করার দক্ষতা প্রয়োজন পড়ে। আবার এই স্কেল, অনুপাত ও পরিমাণের ভিন্নতা প্রকৃতির বস্তু বা ঘটনার উপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে তাও বিজ্ঞানের আলোচনার বিষয়। তাই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের জন্য এবং বিজ্ঞানের তত্ত্ব ও ধারণাসমূহ অনুধাবন করার জন্য স্কেল, অনুপাত ও পরিমাণের ধারণা থাকা প্রয়োজন । সিস্টেম : শিক্ষার্থী তাঁর অনুসন্ধানী চোখে দেখতে পায় তাঁর চারপাশ থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রাকার অণু পরমাণু এবং বৃহদাকার বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সবকিছুই এক একটি সিস্টেম, প্রতিটি বৃহৎ সিস্টেম আবার অসংখ্য সাবসিস্টেমের সমষ্টি। যেকোনো সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ সজীব এবং অজীব বস্তুসমূহের গঠন ও আচরণ, এর মধ্যকার বস্তু ও শক্তির মিথষ্ক্রিয়া, সিস্টেম ও এর উপাদানসমূহের স্থিতি ও পরিবর্তন ইত্যাদির প্যাটার্ন ও কার্যকারণ সম্পর্ক খুঁজে বের করাই বিজ্ঞানের কাজ। ■ গঠন ও আচরণ : প্রকৃতির সজীব ও অজীব বস্তুসমূহের গঠন বিশ্লেষণ, এবং তার ভিত্তিতে তাদের আচরণ ও কার্যাবলি পর্যালোচনা। বস্তু ও শক্তির মিথস্ক্রিয়া : কোন সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ বস্তু ও শক্তির পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া এবং তা কীভাবে সিস্টেমকে প্রভাবিত করে তার অনুসন্ধান । ■ স্থিতি ও পরিবর্তন : প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম সিস্টেমের স্থিতাবস্থায় থাকার শর্তাবলি এবং এর বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন বা বিবর্তনের অনুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ । প্যাটার্ন : প্যাটার্ন হচ্ছে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে কোন বিষয় বা প্রাকৃতিক ঘটনার বার বার পুনরাবৃত্তি। প্রকৃ তির বস্তু ও ঘটনাবলির প্যাটার্ন তাদের ধরন অনুযায়ী শ্রেণিবদ্ধ করতে সাহায্য করে। নির্দিষ্ট প্যাটার্ন অনুসন্ধানের মাধ্যমে এসব ঘটনার পারস্পরিক সম্পর্ক উদ্ঘাটন করা যায়। কার্যকারণ সম্পর্ক : যেকোনো প্রাকৃতিক ঘটনার পেছনের কার্যকারণ সম্পর্ক খুঁজে বের করা বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রকৃতিতে কোন ঘটনা কেন ঘটে, কী ধরনের মিথস্ক্রিয়া এর পেছনে কাজ করে তার পরীক্ষালব্ধ ব্যাখ্যা বিশ্বপ্রকৃতি কীভাবে কাজ করে তা বুঝতে সাহায্য করে। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রাকৃতিক ঘটনাবলি ব্যখ্যা করতে গিয়ে ক্রমান্বয়ে তিনটি বিশেষায়িত ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়। এর মধ্যে – অগ্রযাত্রায় বিজ্ঞানের নানাবিধ প্রয়োগ, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার প্রভাব – এখানে মুখ্য আলোচ্য বিষয়। উপর্যুক্ত আলোচনার ক্ষেত্রগুলো ঘিরে বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষাক্রম আবর্তিত হবে। অনুসন্ধানমূলক শিখনের ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রমান্বয়ে বৈজ্ঞানিক সাক্ষরতা গড়ে তোলা এই শিক্ষাক্রমের প্রধান উদ্দেশ্য। পাশাপাশি অন্যতম উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানলব্ধ সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তোলা । বৈজ্ঞানিক সাক্ষরতা : একটি বৈজ্ঞানিক সাক্ষরতাসম্পন্ন সমাজ গড়ে তোলা বিজ্ঞান শিক্ষার চূড়ান্ত লক্ষ্য । এই শিক্ষাক্রমে তাই অনুসন্ধানমূলক শিখনের উপর জোর দেয়া হয়েছে, যাতে বিজ্ঞান শিক্ষা শুধু বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব জানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে; বরং এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর অনুসন্ধিৎসা, প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতা ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটে। ফলাফলস্বরূপ, শিক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরি হবে এবং প্রাত্যহিক জীবনে, কিংবা যেকেনো সমস্যা সমাধানে বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার প্রভাব পড়বে। বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের সমন্বয়ে এই চর্চা শিক্ষার্থীর মাঝে ধীরে ধীরে বৈজ্ঞানিক সাক্ষরতা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়। বৈজ্ঞানিক সাক্ষরতার একটি

Uncategorized

বিষয়ের ধারণায়নঃ গণিত (Mathematics)

বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতার বিবরণী সংখ্যা, গণনা, জ্যামিতি, পরিমাপ ও তথ্য বিশ্লেষণের ধারণা আয়ত্তীকরণ ও ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত, সামাজিক, জাতীয় ও বৈশ্বিক সমস্যার দ্রুত মূল্যায়ন করে কার্যকর যোগাযোগের মাধ্যমে বর্তমান সমস্যার সমাধান ও ভবিষ্যত সমস্যা সম্পর্কে করণীয় নির্ধারণ করতে পারা। এছাড়া গাণিতিক দক্ষতা ব্যবহার করে যৌক্তিক ও কল্যাণকর সিদ্ধান্ত নিতে পারা এবং উদ্ভাবনী সক্ষমতা প্রদর্শন ও প্রয়োগ করতে পারা। বিষয়ের ধারণায় গণিত এমন একটি চিন্তন প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বিমূর্ত ধারণাকে যৌক্তিকভাবে সম্পর্কযুক্ত করা হয়। তাই গণিতের মূল ভিত্তি যুক্তি ও সৃজনশীলতা। জটিল বৈজ্ঞানিক সমস্যা থেকে শুরু করে প্রাত্যহিক হিসাব নিকাশ পর্যন্ত গণিতের বিস্তৃতি দৃশ্যমান । শিক্ষাক্রম রূপরেখা প্রণয়নের ক্ষেত্রে শুধু কিছু সূত্র মুখস্থ করে তার সাহায্যে পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক সমস্যা সমাধান নয় বরং গণিতের প্রকৃতি, যৌক্তিক চিন্তন, বাস্তব জীবনে এগুলোর প্রয়োগ ইত্যাদির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। সেজন্য এই বিষয়ের ধারণায়নের কেন্দ্রে রাখা হয়েছে গাণিতিক অনুসন্ধান, যে প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা গাণিতিক দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করে গণিতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা অর্জন করবে। গণিতের বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য চারটি ডাইমেনশন নির্ধারণ করা হয়েছে, যেগুলো হল : সংখ্যা ও পরিমাণ, গাণিতিক সম্পর্ক, আকৃতি এবং সম্ভাব্যতা। এই চারটি ডাইমেনশনে গাণিতিক অনুসন্ধান চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যে যোগ্যতাসমূহ অর্জন করবে তা সে তার জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারবে। এসকল প্রয়োগক্ষেত্রকে চারটি মূল ভাগে ভাগ করা হয়েছে; যেমন : দৈনন্দিন জীবনে, সমাজ জীবনে, কর্মজ্ঞাতে এবং গণিতের উচ্চতর শিখন ও গবেষণাসহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে। গণিত বিষয়ের ধারণায়নে উঠে আসা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিতভাবে নিচে আলোকপাত করা হল । গাণিতিক অনুসন্ধান গণিত বিষয়ের একটি মূল লক্ষ্য হলো গাণিতিক সাক্ষরতা- যা বাস্তব জীবনের কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য কীভাবে সমস্যাকে পরিকল্পনা করতে হয় এবং এর একটি গাণিতিক রূপ দিয়ে তা ব্যাখ্যা ও সমাধান করা যায় সে ধরনের সক্ষমতা প্রদান করে। আর সমস্যা সমাধানের এই সুসংবদ্ধ প্রক্রিয়াকে বলা হয় গাণিতিক অনুসন্ধান । গণিত হচ্ছে যথার্থভাবে সংজ্ঞায়িত বস্তু এবং ধারণা সম্পর্কিত বিজ্ঞান, যেখানে গাণিতিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে বস্তু বা ধারণার ব্যাখ্যা ও রূপান্তরের মাধ্যমে একটি নিশ্চিত উপসংহারে পৌঁছানো সম্ভব হয় । বস্তুনিষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্যভাবে যুক্তি উপস্থাপন একটি দক্ষতা। প্রযুক্তিনির্ভর এ বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ এ দক্ষতাটির চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাণিতিক যুক্তি প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীরা তাদের বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানে এমন একটি ফলাফলে উপনীত হয় যেটিকে তারা পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করে সঠিক বলে মনে করে। গাণিতিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গাণিতিক যুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যে উপসংহারে পৌঁছানো যায় তা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ও বস্তুনিষ্ঠ হয় এবং বাস্তব বা বিমূর্ত যেকোনো গাণিতিক সমস্যা সমাধানে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এজন্য এই রূপরেখায় গাণিতিক অনুসন্ধানকে ধারণায়নের মডেলের কেন্দ্রে অবস্থান দেওয়া হয়েছে। গাণিতিক অনুসন্ধানের আলোকে যে বিষয়গুলো উপলব্ধি করা যায় সেগুলো হলো : এবার আমরা গাণিতিক অনুসন্ধানের উপলব্ধিগুলোকে যদি বিশ্লেষণ করি তা হলে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে আসে : ১. তাত্ত্বিক দিক : যার মধ্যে রয়েছে, সংখ্যা ও পরিমাণ, গাণিতিক সম্পর্ক, আকৃতি ও সম্ভাব্যতা। ২. ব্যবহারিক দিক : যার মধ্যে রয়েছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, দৈনন্দিন জীবন, কর্মজগৎ ও সমাজ। একজন শিক্ষার্থী গাণিতিক অনুসন্ধান করতে গিয়ে যে চারটি ডাইমেনশন বা ক্ষেত্রের ভেতর দিয়ে বিকশিত হবে তার একটি বর্ণনা নিচে তুলে ধরা হলো : সংখ্যা একটি বিমূর্ত ধারণা। সংখ্যার সঙ্গে যখন পরিমাণ যুক্ত হয় তখন সংখ্যা বোধ তৈরি হয় । পরিমাণের ধারণা ছাড়া সংখ্যা ব্যাখ্যা সহজ নয় । আমরা যদি মহাবিশ্বের দিকে তাকাই তা হলে দেখতে পাই, মহাবিশ্ব হচ্ছে গ্যালাক্সি থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অসংখ্য অণু পরমাণুর মহাসাগর যেখানে বস্তুসমূহের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ঘটনা। মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা এবং প্রতিটি সত্তার পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া এবং তার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য সংখ্যা ও পরিমাণের ধারণা; অর্থাৎ সংখ্যা-বোধ হচ্ছে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় গাণিতিক দিক, যা শিক্ষার্থীকে এই বিশাল জগতে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়। এর সঙ্গে সংযোজিত হয়েছে মহাবিশ্বের নানা বস্তুকণার বৈশিষ্ট্য, সম্পর্ক ও অবস্থানকে সংখ্যার আলোকে প্রকাশ করা এবং পরিমাণের আলোকেই এ প্রকাশকে দেখার চেষ্টা করা। পরিমাণের এ ধারণা থেকে আমরা পরিমাপ, গণনা, বিস্তার, একক, নির্দেশক, আকৃতি, ক্রমিক সংখ্যার প্রবণতা ও প্যাটার্ন উপলব্ধি করি। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ প্রকৃতির এই ঐক্য ও শৃঙ্খলাকে বুঝতে চেষ্টা করেছে, এবং বহু প্রজন্মের চিন্তন, চর্চা, ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে বিশ্বজাতের নিয়ম কানুনকে ব্যাখ্যা করার পথে ধীরে ধীরে এগোনোর চেষ্টা করেছে। পৃথিবীর বিশালত্ব পরিমাপ এবং বর্ণনা করার জন্য তাকে সংখ্যায় প্রকাশ করা একটি প্রাথমিক প্ৰক্ৰিয়া । যা কোনো একটি অবস্থার মডেলিং, পরিবর্তন ও সম্পর্ক পরীক্ষণ, আকার আকৃতি এবং তথ্য সংগঠন ও অনিশ্চয়তা পরিমাপ করার অনুমতি প্রদান করে। প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম জগতের বস্তু এবং পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে বহু ধরনের স্থায়ী ও অস্থায়ী সম্পর্ক দেখা যায়। যেখানে একটি সিস্টেমের ভেতর ঘটে চলা বস্তুসমূহের পরিবর্তন অথবা পারিপার্শ্বিকতায় একটি উপাদান আর একটি উপাদানকে কীভাবে প্রভাবিত করছে তা দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রেই এ পরিবর্তন দীর্ঘ কিংবা অল্প সময়ব্যাপী সংঘটিত হয়। আবার অন্য ক্ষেত্রে একটি বস্তু বা পরিমাণ অন্যটির পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত। কোনো ক্ষেত্রে পরিবর্তন হয় আলাদা আলাদা আবার কখনো কখনো তা নিরবিচ্ছিন্নভাবে হয়ে থাকে। এই সম্পর্কগুলো কখনো কখনো প্রকৃতিতে দীর্ঘস্থায়ী এবং অপরিবর্তনীয় । গাণিতিক মডেলের আলোকে এ পরিবর্তন পূর্বানুমান ও ব্যাখ্যা করা যায়। অর্থাৎ গাণিতিকভাবে পরিবর্তন এবং সম্পর্ককে যথ াযথ ফাংশন এবং সমীকরণের সাহায্যে মডেলিং করা যায়। এই মডেলই বাস্তব জীবনের কোনো ঘটনাকে প্রতীক বা গ্রাফের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকে । আমরা আমাদের দৃশ্যমান জগতে প্রতিনিয়ত আকার আকৃতি সম্পর্কিত প্রপঞ্চের (phenomena) সম্মুখীন হই যেমন; জ্যামিতিক প্যাটার্ন, বস্তুর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, অবস্থান এবং ওরিয়েন্টেশন, বস্তুর উপস্থাপন, দৃশ্যমান তথ্যের কোডিং এবং ডিকোডিং, বাস্তব আকৃতির সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়া ইত্যাদি। জ্যামিতিক ধারণা আকার আকৃতির ব্যাখ্যায় ভিত তৈরি করলেও পরিমাপ এবং বীজগণিতের ধারণায়নেও জ্যামিতির ভূমিকা রয়েছে। আমরা সচরাচর যে ধরনের আকৃতি দেখতে পাই তা প্রতিসম (symmetrical) নয়। তাই জ্যামিতির সহজ সূত্রের সাহায্যে এ ধরনের অনিয়মিত আকৃতি পরিমাপ করা জটিল । কাজেই আকৃতির পরিমাপের ক্ষেত্রে একটি কাছাকাছি ফলাফলের উপরই নির্ভর করতে হয়। এক্ষেত্রে যতটা ত্রুটিমুক্ত করা সম্ভব তা করা হয়ে থাকে । বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রাত্যহিক জীবন বা সমাজে সম্ভাব্যতা বা অনিশ্চয়তাকে উপেক্ষা করা যায় না। তাই সম্ভাব্যতা বা অনিশ্চয়তা গাণিতিক ব্যাখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অনুষঙ্গ। গাণিতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে, সম্ভাব্যতা যাচাই, তথ্য উপস্থাপন এ সব ক্ষেত্রই অনিশ্চয়তার ঘটনা একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। স্বাস্থ্যঝুঁকি নির্ধারণ, নির্বাচনী মতামত, জনসংখ্যার প্রবণতা ইত্যাদি উপস্থাপনে গ্রাফ ও পরিসংখ্যান একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান জুড়ে আছে। প্রতিটি ক্ষেত্রই একটি সম্ভাব্য ফলাফলের উপর আলোকপাত করে। ডাটা সংগ্রহ, ব্যবস্থাপনা এবং তথ্য বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্যতা উপস্থাপন করাই এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ । উল্লেখিত চারটি ডাইমেনশনের আলোকে অর্জিত গাণিতিক সাক্ষরতা একজন শিক্ষার্থী প্রেক্ষাপটভেদে সমস্যা সমাধানে প্রয়োগ করতে পারছে কিনা এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । নিচে এই প্রয়োগের চারটি প্রধান ক্ষেত্ৰ তুলে ধরা হলো : গণিতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চতর শিখন ও গবেষণাসহ

Uncategorized

বিষয়ের ধারণায়নঃEnglish

To be able to communicate effectively using basic skills of English language for day to day purposes, academic purpose and other specific purposes; to be able to exert creative as well as critical insights to express aesthetically, and to appreciate English literary text; to be able to uphold democratic practice in communication at the individual, social, national and global contexts. Conceptualisation Since English is viewed as a foreign language in Bangladesh, the K-12 curriculum of English needs to maintain a balance of focus between real life application and a good understanding of the contexts in which the language learners are going to use English. This diagram illustrates how English as a subject is conceptualised in this curriculum framework. The centre of the diagram contains the core knowledge and skills required for a learner. In terms of knowledge, it covers linguistics rules along with their use relevant for the local and global contexts. One key skill, interpretability, taps learners’ ability to interpret and understand literal as well as intended meaning of a given verbal or non-verbal text. Another skill is clarity of expression, and it demands the leamers’ ability to express clearly, concisely, distinctively, and appropriately in effective communication. However, effective communication does not rely only on any particular knowledge and sets of skills, rather it requires contextual understanding and cultural awareness along with a democratic attitude. These three aforesaid components form a mediating lens which leads to the idea of Intercultural Communicative Competence (ICC). A context sensitive cultural awareness in communication denotes an empathetic attitude, and ensures admiration and appreciation to diverse practice in communication. Consequently, a democratic attitude on part of the language users becomes mandatory as it facilitates a mindset to acknowledge different opinions in communication and the varied ways of expression, as well as the readiness to articulate personal viewpoints. In terms of English teaching-learning, as a second or foreign language, the prevalent ideas of communicative competence has been questioned in relation to the notion of sociolinguistic competence. The idea of sociolinguistic competence to an extent celebrates the cultural norms and practice embedded in English speaking society. As a matter of fact, language is not a value-free media, rather it carries a particular culture which can create a social hierarchy in relation to English and non-English speaking contexts. In accordance with the presentation of the language itself and the culture associated, it is essential for learners from a non-English speaking context to have a critical insight when learning to communicate in that particular language. That leads to the concept of ICC and it acts like a mediating lens to regulate learner’s interpretation and expression following the linguistic norms, and equip them to practice English in preferred manner. Through ICC, the core knowledge and skills are mediated for the applications in three major areas which are – real life application, sense of identity, and creative expression. Real life application covers the practice of English in everyday communication, for academic purpose, as well as for other specific purposes. As language is a media to exchange thoughts and emotion, learners need to internalise aesthetic value for creative expression as well as to appreciate the beauty of literature. Additionally, being recognized as an international language, English enables learners to access and appreciate arts and literature from different contexts and culture across the world. Apart from real life application and creative expression, another field of application is unveiled with the language users’ capability to demonstrate a sense of identity in their practice. Learners’ sense of identity equips them with the ability to recognise and evaluate the linguistic norms with regard to the power relation in a particular cultural context; and therefore, empowers them with the ability to prefer appropriate norms over others in accordance with the context. Consequently, it enables the learners to minimise the discriminatory aspects of linguistic practice and promote democratic practice in communication. It is worthwhile to mention that, existing English curriculum at the primary and secondary levels promotes some of the aspects mentioned above. However, since that curriculum was not competency based, rather mostly focused on contents, this is presumably difficult for both the teachers and learners to relate the activities with the notion those were meant for. On that account, this framework attempts to connect the dots and incorporate an integrated approach in order to decipher the curricular competencies into meaningful classroom activities. This approach aligns it with the recent global trends in ELT with reference to EFL pedagogical context; and thereby, the tenets of critical and post-method pedagogy are contemplated and their implications are embedded in this curriculum framework. ===000=== তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Uncategorized

বিষয়ের ধারণায়নঃ বাংলা (Bangla)

পটভূমি অন্যান্য বিষয় শেখার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হবে একই সঙ্গে অন্যান্য বিষয় শিখনের মাধ্যমেও বাংলা ভাষার ভিত্তি দৃঢ় হবে। বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতার বিবরণী প্রমিত বাংলা ভাষায় ভাব আদান-প্রদানের (শোনা, বলা, পড়া, লেখা, দেখা ও অনুভব করার) মৌলিক দক্ষতা অর্জন করতে পারা; বাংলা ভাষার মৌলিক দক্ষতা ব্যবহার করে শিখনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জ্ঞান অন্বেষণে সমর্থ হওয়া । সাহিত্যপাঠে আনন্দ লাভ করতে পারা; বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে বিভিন্ন মাধ্যমে সৃজনশীল ও শৈল্পিকভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারা এবং পরমতসহিষ্ণুতার সঙ্গে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কার্যকর ও কল্যাণমুখী যোগাযোগে সমর্থ হওয়া। বিষয়ের ধারণায়ন ভাষা সকল ধরনের যোগাযোগের মাধ্যম, একই সঙ্গে জ্ঞান ও চিন্তার বাহন। শিক্ষাতাত্ত্বিক দিক থেকে ভাষা শিখন-প্রক্রিয়া ও শিখন-শেখানো কার্যক্রমের প্রধান ভিত্তি। শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১-এ বাংলা বিষয়কে প্রধানত ভাষা ও যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে, সেই সঙ্গে অন্যান্য বিষয় শিখনের মাধ্যম হিসেবেও বিবেচনা করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী পরিবেশ, পরিস্থিতি ও পরিপ্রেক্ষিত অনুযায়ী যোগাযোগে পারদর্শী হয়ে উঠবে। রূপরেখায় ভাষা ও যোগাযোগ দক্ষতা অর্জনে ভাব গ্রহণ ও প্রকাশে শোনা, বলা, পড়া ও লেখার পাশাপাশি দেখা ও অনুভবকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা হয়েছে। রূপরেখায় শিক্ষার্থীর ভাষাবোধ ও ভাষাপ্রয়োগকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ভাষাবোধ গড়ে ওঠে প্রধানত ইন্দ্রিয় সংবেদনা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিপ্রেক্ষিত এবং ভাষা-সংগঠন বা ব্যাকরণ প্রভৃতির আন্তঃসম্পর্কসূত্রে। ভাষাবোধের দৃঢ় ভিত্তির ওপর নির্ভর করে ভাষার যথাযথ, শুদ্ধ ও পরিশীলিত প্রয়োগ অর্থাৎ ভাষা এক দিকে গ্রহণমূলক, অন্য দিকে প্রকাশমূলক । দেখা, শোনা, অনুভব, পড়া প্রভৃতির মাধ্যমে ভাষাভাষীর মধ্যে গড়ে ওঠে গ্রহণমূলক পারদর্শিতা। সেই সঙ্গে বলা, লেখা, ইশারা, স্পর্শ, সক্রিয় শ্রবণ প্রভৃতির মাধ্যমে গড়ে ওঠে ভাষার প্রকাশমূলক পারদর্শিতা। শিক্ষাক্রম রূপরেখায় বিকল্প গ্রহণ ও বিকল্প প্রকাশকেও বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা হয়েছে। কেননা সকল শিক্ষার্থীর বুদ্ধিমত্তা ও আবেগিক বুদ্ধিবৃত্তিতে (emotional intelligence) বৈচিত্র্য রয়েছে। শিক্ষার্থীরা অনুভব, স্পর্শ, ঘ্রাণ, পর্যবেক্ষণ প্রভৃতির মাধ্যমে বিচিত্রভাবে বাস্তব বিশ্বকে অনুভব ও অনুধাবন করে থাকে; এ কারণে তাদের প্রকাশও হয়ে থাকে ভিন্ন মাধ্যম ও প্রক্রিয়ায়। ভাষা ও যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বাংলা ভাষার ৬টি প্রধান প্রয়োগ-ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়েছে : ১ . ভাষিক যোগাযোগ; ২. বাচনিক উৎকর্ষঃ ৩. শিখন-শেখানো কার্যক্রম: ৪. প্রায়োগিক ও পেশাগত যোগাযোগ; ৫. মানবিক চিন্তন ৬. সৃষ্টিশীল ও মননশীল প্রকাশ। ভাষিক যোগাযোগ বলতে বুঝানো হয়েছে বাচনিক ও অ-বাচনিক বিভিন্ন প্রক্রিয়ার যোগাযোগ ও সংজ্ঞাপনকে । শিক্ষার্থীর বলার ধারাক্রমিক দক্ষতা বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করা হয়েছে বাচনিক উৎকর্ষ হিসেবে। প্রায়োগিক ও পেশাগত যোগাযোগ বলতে বোঝানো হয়েছে ব্যবহারিক ও পেশাগত জীবনে বাংলা ভাষার যথাযথ প্রয়োগকে; মূলত বিভিন্ন পরিসর এবং পেশাগত জীবনে বাংলা ভাষা প্রয়োগের প্রয়োজনীয় দক্ষতা তৈরি করে দেবে বাংলা বিষয়। বাংলা ভাষার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ-ক্ষেত্র হয়ে উঠবে শিখন-শেখানো কার্যক্রম; সকল বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জিত হবার প্রধান মাধ্যম বাংলা ভাষা। তাই বাংলা ভাষায় দক্ষতা বৃদ্ধি অন্যান্য বিষয়ের জ্ঞান-অর্জন দক্ষতাকে বৃদ্ধি করবে, শিখন-শেখানো কার্যক্রম হয়ে উঠবে সহজতর ও সহজবোধ্য। বর্তমান শিক্ষাক্রমে বাংলাকে বিবেচনা করা হয়েছে শিক্ষার্থীর মানবিক চিন্তন দক্ষতার প্রয়োগ ও বৃদ্ধির ভাষা হিসেবে। রূপরেখায় চিন্তাকে দেখা হয়েছে মানবিক, যৌক্তিক, সহনশীল ও ইতিবাচকভাবে। চিন্তন-দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ভাষাশৈলিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যেমন : বর্ণনামূলক, তথ্যমূলক, বিশ্লেষণাত্মক ইত্যাদি। সৃষ্টিশীল ও মননশীল প্রকাশ বলতে বোঝানো হয়েছে শিক্ষার্থীর সৃজন ও যুক্তিশীল কর্মকাণ্ডকে; এই প্রকাশ হতে পারে লিখন, বাচন, অংকন, সৃজন, সংজ্ঞাপননির্ভর। সামগ্রিকভাবে বাংলা বিষয় হয়ে উঠবে যোগাযোগ, সংজ্ঞাপন, শিখন-শেখানো কার্যক্রম, চিন্তন ও প্রকাশের প্রধান ভাষা মাধ্যম । ===000=== তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Uncategorized

বিষয়ের ধারণায়নঃশিল্প ও সংস্কৃতি (Arts and Culture)

প্রাকৃতিক ও সামাজিক বৈচিত্র্য ও পারস্পরিক সম্পর্ক অবলোকন, অনুভব করে প্রতিলিপি বা প্রতিরূপ তৈরি এবং পারস্পরিক রূপান্তরের মাধ্যমে শিল্পকলার অন্তর্গত দৃশ্যকলা ও উপস্থাপনকলার বিভিন্ন সৃজনশীল ধারা (চারু ও কারুকলা, নৃত্য, সংগীত, যন্ত্রসংগীত, আবৃত্তি, অভিনয়, সাহিত্য, ইত্যাদি) ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করে আনন্দ উপলব্ধি করতে পারা এবং সেসবের চর্চায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারা; সংবেদনশীলতা ও নান্দনিকতার বিকাশ সাধন করতে পারা; নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধারণ ও লালন এবং অন্য সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে পারা, শিল্পকলাকে উপজীব্য করে উচ্চতর শিক্ষা বা আত্মনির্ভরশীল হতে শিল্পকলার যেকোনো ধারাকে বিবেচনা করতে পারা। বিষয়ের ধারণায়ন নিজস্ব জাতিসত্তার ঐতিহ্যবাহী রূপকে নান্দনিকভাবে বিশ্বজনীন করে তোলার জন্য শিল্প ও সংস্কৃতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্বায়নের এই যুগে পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক জাতি শিল্প ও সংস্কৃতি নির্ভর শিক্ষার মধ্য দিয়ে নিজেদের ঐতিহ্য ও কৃষ্টিকে পৃথিবীব্যাপী তুলে ধরেছে। এবং সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিজেদের শিল্পবোধ ও নান্দনিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নান্দনিক বোধসম্পন্ন আত্মনির্ভরশীল নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিল্প ও সংস্কৃতি যথাযথভাবে অনুধাবন ও উপলব্ধি করার গুরুত্ব অপরিসীম। শিল্পের ভাষা পৃথিবীর প্রাচীনতম ভাষা। গুহাযুগ থেকে পৃথিবীর সকল সভ্যতার পথ ধরে বর্তমান সময় পর্যন্ত শিল্প ও সংস্কৃতি মানুষের জীবনের তাৎপর্যপূর্ণ অংশ। রেনেসাঁর সময় শিল্প ও সংস্কৃতিনির্ভর জীবনদর্শন ইউরোপকে দিয়েছিল এক অনন্য উঁচুমাত্রা। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দেশীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহারে নান্দনিকবোধসম্পন্ন আত্মনির্ভরশীল নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতেও শিল্প ও সংস্কৃতির গুরুত্ব অপরিসীম। যে জাতি নিজের সংস্কৃতিকে ভালোবাসে সে অন্যের সংস্কৃতিকেও সম্মান করে। শিল্প ও সংস্কৃতি শিক্ষার মধ্য দিয়ে সংবেদনশীল, মানবিক গুণাবলি ও পরমতসহিষ্ণু নতুন প্রজন্ম তৈরির সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে সৃজনীগুণসম্পন্ন আত্মনির্ভরশীল রূপে গড়ে তোলাকে শিক্ষাক্রম রূপরেখায় প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাকে শিক্ষার্থীদের কাছে আনন্দময় করার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার মাধ্যমে তাদের নান্দনিক ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন করে গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো শিল্প ও সংস্কৃতি। শিল্প ও সংস্কৃতির চর্চার মাধ্যমে শিশুদের সৃজনশীল চিন্তার সঠিক বিকাশও মূল্যায়ন করা যায় । এই শিক্ষাক্রম রূপরেখায় শিল্প ও সংস্কৃতিকে শিখন-ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করার উদ্দেশ্য হলো শিল্পকে উপজীব্য করে শিশুদের সঠিক মনোবিকাশে সহায়তা করা । শিল্প ও সংস্কৃতি শিখন-ক্ষেত্রটিকে এমন একটি সমন্বিত বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেখানে শিল্প ও সংস্কৃতির বিভিন্ন সৃজনশীল ধারা (চারু ও কারুকলা, নৃত্য, সংগীত, যন্ত্রসংগীত, আবৃত্তি, অভিনয় ও সাহিত্য) চর্চার সুযোগ রয়েছে । এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী একজন নান্দনিক, রুচিশীল ও শিল্পবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে এবং জীবন যাপন করতে পারবে। শিক্ষার্থীর ইচ্ছা ও প্রয়োজনবোধে সৃজনশীল সক্ষমতাকে উচ্চতর শিক্ষা, কর্মজগৎ বা আত্মনির্ভরশীল হতে বিবেচনা করারও সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানের বিভিন্ন শ্রেণি এবং জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরিতে শিল্প ও সংস্কৃতিকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সূত্রে তাদের অভিভাবকদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরিতেও শিল্পবোধকে কাজে লাগানোর চিন্তা করা হয়েছে। এজন্য শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়টিতে প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা পর্যন্ত সৃজনশীলতার ধারাবাহিকতাকে বজায় রাখা হয়েছে যেখানে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরকেই শিল্প ও সংস্কৃতির মূলভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এই শিক্ষাক্রম রূপরেখায় শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রকে নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে আবদ্ধ না করে প্রকৃতি, পরিবেশ, সমাজ ও সংস্কৃতি-নির্ভর করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে লোকজ, প্রাকৃতিক উপাদান ও উপকরণ ব্যবহার করে শিশুদের শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। শিশুদের কল্পনাপ্রবণ, অনুসন্ধিৎসু মনোজগতকে প্রাধান্য দিয়ে প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চার ধারাবাহিকতাকে অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে উদার, সংবেদনশীল, নান্দনিকবোধ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রকৃতি পাঠ, শিল্প ও সংস্কৃতি-নির্ভর শিক্ষাপদ্ধতি এবং তার সঙ্গে সমসাময়িক বিশ্বের সৃজনশীল শিক্ষার মধ্য দিয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াকে সামনে রেখেই এই শিল্প ও সংস্কৃতি এর সমন্বিত শিখন বিষয়টি পরিকল্পনা করা হয়েছে। যার পদ্ধতিটি হবে নিম্নরূপ : প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য অবলোকন, অনুভব ও প্রতিলিপি বা প্রতিরূপ তৈরি প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকে অবলোকন ও যাপিত অনুভব করে (দেখে, শুনে, স্পর্শ ও অনুধাবন করে জীবনে শিল্পের উপাদান হিসেবে আকার, আকৃতি, রং, সুর, তাল, লয়, ছন্দ ইত্যাদি অনুসন্ধান ও উপলব্ধি করা এবং তার প্রতিলিপি ও প্রতিরূপ তৈরি। রূপান্তর প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র অবলোকন ও অনুভব করে শিল্পের উপাদানসমূহের নান্দনিক ও সৃজনশীল রূপান্তরের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ । নান্দনিকতার বহুমাত্রিক প্রকাশ নান্দনিক ও সৃজনশীল রূপান্তরের ধারণা ও যোগ্যতার দৈনন্দিন কাজ ও বিশেষত্ব তৈরিতে বহুমাত্রিকভাবে প্রয়োগ । যাপিত জীবনে নান্দনিকতা যাপিত জীবনে নান্দনিকতার মাধ্যমে মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও গুণাবলির বিকাশ (জাতীয়তা, বিশ্ব-নাগরিকত্ব, পরিবেশ সংরক্ষণ, মানবিকতা, বৈচিত্র্যকে সম্মান, সৃষ্টিশীলতা ইত্যাদি)। ===000=== তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Uncategorized

শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও উন্নয়ন প্রক্রিয়া(Curriculum revision and development process)

শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও উন্নয়ন করার বহুল প্রচলিত ধাপ রয়েছে। এনসিটিবি শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও উন্নয়ন করার ক্ষেত্রে এই ধাপগুলো অনুসরণ করে থাকে । ধাপসমূহ হলো : ধাপ ১- গবেষণা, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং চাহিদা নিরুপণ শিক্ষাক্রম পরিমার্জনের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে প্রচলিত শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য বিস্তৃত পরিসরে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষায় প্রচলিত শিক্ষাক্রমের কার্যকারিতা, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং শিখন চাহিদা নিরূপনের উদ্দেশ্যে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল ব্যাপী বিস্তৃত পরিসরে চারটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়। গবেষণার পাশাপাশি শিক্ষার বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও চাহিদা নিরূপণের জন্য বিভিন্ন কারিগরি কর্মশালা, ইস্যুভিত্তিক আলোচনা ইত্যাদি পরিচালিত হয়। উক্ত গবেষণাসমূহে সরকারের লক্ষ্য, পরিকল্পনা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পর্যালোচনা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা, বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রম, তথ্য ও দলিল ইত্যাদি পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করা হয়। এসকল গবেষণার সুপারিশসমূহ বিবেচনা করে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষাক্রম কেমন হবে তা নির্ধারণ করা হয় । ধাপ ২- জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উন্নয়ন প্রচলিত প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাক্রমের ভিত্তি, গঠন ও প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন। উল্লিখিত গবেষণাসমূহে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাক্রমের ভিন্ন ভিন্ন অ্যাপ্রোচের পরিবর্তে একই অ্যাপ্রোচে শিক্ষাক্রম প্রণয়নের অপরিহার্যতার উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়। এ ক্ষেত্রে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের সাম্প্রতিক ধারণা বিবেচনায় নিয়ে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়। এমতাবস্থায় শিক্ষার বিভিন্ন স্তর ও পর্যায়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত একটি নিরবিচ্ছিন্ন (seamless) শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করার উদ্দেশ্যে একটি জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার পরিকল্পনা করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক এই জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়নের কাজটি সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটি (Curriculum Development and Revision Core Committee- CDRCC) গঠন করা হয়। দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বিষয় বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এই কমিটি গঠন করা হয় । পরবর্তী সময়ে সিডিআরসিসির পরামর্শক্রমে শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ, শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, এনসিটিবির কর্মকর্তা এবং বিষয় বিশেষজ্ঞগণের সমন্বয়ে একটি কার্যসম্পাদন কমিটি (Working Committee) গঠন করা হয়। এই কমিটি জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উন্নয়নে কারিগরি ও নিয়মতান্ত্রিক কাজসমূহ সম্পাদনসহ সিডিআরসিসিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে। কার্যসম্পাদন কমিটি একাধিক কর্মশালা ও সভার মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার উপর একটি ধারণা প্রণয়ন করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ও উপমন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীসহ দুই মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের উপস্থিতিতে আয়োজিত সভায় উক্ত ধারণা অনুযায়ী প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত একটি সিমলেস বা নিরবিচ্ছিন্ন শিক্ষাক্রম উন্নয়নের উদ্দেশ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উন্নয়নের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। তদানুযায়ী সিডিআরসিসির তত্ত্বাবধানে কার্যসম্পাদন কমিটি বিষয় বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ, শ্রেণি শিক্ষক, শিখন বিশেষজ্ঞগণকে নিয়ে একাধিক কর্মশালা ও কারিগরি সভার মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা প্রণয়নের কাজ শুরু করে। সিডিআরসিসি ও কার্যসম্পাদন কমিটির মাধ্যমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়গণের প্রত্যক্ষ নিদের্শনায় ও অন্যান্য নীতি নির্ধারকদের পরামর্শে ১৫টির বেশি কারিগরি কর্মশালা ও শতাধিক ভার্চুয়াল সভার মাধ্যমে ৩৩টি সংস্থার ১৫৬ জন বিশেষজ্ঞের সরাসরি অংশগ্রহণে এ শিক্ষাক্রম রূপরেখার প্রথম খসড়া প্রণয়ন করা হয় । গবেষণার মাধ্যমে প্রচলিত শিক্ষাক্রম এর পরিস্থিতি বিশ্লেষণ কার্যকারিতা যাচাই এবং চাহিদা নিরূপণ (২০১৭-২০১৯) থিমেটিক কর্মশালা ও সভার মাধ্যমে জাতীয় সমন্বিত স্কিল ফ্রেমওয়ার্ক উন্নয়ন (২০১৮-২০১৯) প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাক্রম রূপরেখার ধারণা উন্নয়ন (২০১৯) শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটি (CDRCC) গঠন ( ২০২০ )  (CDRCC)-কে সহায়তা করার জন্য কার্যসম্পাদন কমিটি গঠন কার্যসম্পাদন কমিটির সহায়তায় সংশ্লিষ্ট বিষয় বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাক্রম রূপরেখার খসড়া প্রণয়ন (২020) মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং বোর্ডের সাথে মতবিনিময় ( ২০২০ ) খসড়া রূপরেখার উপর ৮০০ জনের অধিক অংশীজনের মতামত গ্রহণ অংশীজনের মতামত বিশ্লেষণ এবং তদানুযায়ী খসড়া হালনাগাদকরণ শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটি কর্তৃক হালনাগাদকৃত খসড়া অনুমোদন বিভিন্ন পর্যায়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের সাথে একাধিক সভায় খসড়া সম্পর্কে মতামত গ্রহণ সর্বসাধারণের মতামত গ্রহণের উদ্দেশ্যে ওয়েবসাইটে উন্মুক্তকরণ প্রাপ্ত মতামত পর্যালোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত খসড়া উন্নয়ন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক চূড়ান্ত খসড়া NCCC-তে প্রেরণের জন্য অনুমোদন প্রদান মন্ত্রণালয় কর্তৃক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনার জন্য প্রেরণ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নীতিগত অনুমোদন পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাইয়ের জন্য উপদেষ্টা কমিটিতে প্রেরণ এবং কমিটির মতামতের প্রেক্ষিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ এর খসড়া চূড়ান্তকরণ NCCC কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদন এই ধারাবাহিকতায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বিশেষজ্ঞগণের সরাসরি পরিচালনায় ১৩টি দলের মাধ্যমে খসড়া শিক্ষাক্রম রূপরেখার উপর ৮০০-এর অধিক অংশীজনের মতামত গ্রহণ করা হয়। অংশীজনদের মধ্যে রয়েছেন নীতি নির্ধারক (মাননীয় মন্ত্রীমহোদয়গণ, মাননীয় সংসদ সদস্যগণ, সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ); প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ; শিক্ষা সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা (বেসরকারি উদ্যোক্তা); শিক্ষা বিশেষজ্ঞ (বিজ্ঞান শিক্ষা, গণিত শিক্ষা, সামাজিক বিজ্ঞান শিক্ষা, ভাষা শিক্ষা, বিশেষ শিক্ষা, ব্যবসায় শিক্ষা, একীভূত শিক্ষা), শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ, শিক্ষা প্রশাসক, শিক্ষক প্রশিক্ষক (নায়েম, নেপ, এইচএসটিটিআই, পিটিআই, টিটিসি, টিটিটিসি, বিএমটিটিআই); অভিভাবক (প্রাথমিক, মাধ্যমিক, বৃত্তিমূলক); শিক্ষক (প্ৰাথমিক, মাধ্যমিক, বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, শিক্ষা); শিক্ষার্থী (প্রাথমিক, মাধ্যমিক, বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, শিক্ষা); বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক (বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, কারিগরি, মেডিকেল, প্রকৌশল, কৃ ষি, পরিবেশ, সামাজিক বিজ্ঞান); পেশাজীবী (প্রযুক্তিবিদ, ডাক্তার, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, কৃষিবিদ, পরিবেশবিদ, উন্নয়ন কর্মী); নিয়োগকর্তা (ইন্ডাস্ট্রি, পিএসসি, এনজিও, উদ্যোক্তা, মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন সেক্টর – আইসিটি, কৃষি, গার্মেন্টস, গণমাধ্যম, সৃজনশীল মিডিয়া); মাদ্রাসা (শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ); কারিগরি (শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ); এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন সদস্য। অংশীজন পরামর্শের মাধ্যমে প্রাপ্ত সুনির্দিষ্ট মতামতগুলোর যথাযথ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে পরবর্তীকালে খসড়া শিক্ষাক্রম রূপরেখাটি পরিমার্জন করা হয়। এ পর্যায়ে খসড়া জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখাটি ১৩.০১.২০২০ তারিখে সিডিআরসিসি সভায় উপস্থাপন করা হয় যা কমিটি কর্তৃক পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য অনুমোদন করা হয় । সিডিআরসিসি’র সুপারিশ অনুযায়ী সর্বসাধারণের মতামতের উদ্দেশ্যে খসড়া রূপরেখাটি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করা হয়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ খসড়া রূপরেখাকে আরও সমৃদ্ধ করে । ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিত এনসিটিবির ৬৮৪ তম জরুরি বোর্ড সভার ০১ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খসড়া জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখাটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির নিকট প্রেরণ করা হয়। এমতাবস্থায়, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার উপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় নির্দেশনা কামনা করেন। তদানুযায়ী জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয় । ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে একটি ভার্চুয়াল সভার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উপস্থাপনা করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা প্রদান করেন এবং উপস্থাপিত জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এই সভার মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদন লাভ করে। ১২ অক্টোবর ২০২১ তারিখে জাতীয় শিক্ষাক্রম সম্পর্কিত উপদেষ্টা কমিটির সভায় জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখাটি উপস্থাপন করা হলে

Uncategorized

স্তরভিত্তিক নির্বাচিত বিষয় (Levelwise selected subjects)

নির্ধারিত দশটি শিখন-ক্ষেত্রের যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে নির্দিষ্ট সংখ্যক বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। যেহেতু প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় হলো শিশুদের পরবর্তী শিখনের জন্য প্রস্তুতিমূলক একটি পর্যায়, এই পর্যায়ে শিশুরা কোনো একটি বিশেষ বিষয়ে আলাদাভাবে শিখনের পরিবর্তে সমন্বিতভাবে একাধিক বিষয় একসঙ্গে শিখনের জন্য অনুশীলন করবে। তবে প্রাথমিক (প্রথম থেকে পঞ্চম এবং মাধ্যমিক (ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি) স্তরে সুনির্দিষ্টভাবে যথাক্রমে আটটি ও দশটি বিষয় পাঠ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন পরিকল্পনার ফলে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বিষয়ের বিন্যাসে সামঞ্জস্য বিধান সম্ভব হয়েছে, এবং শিক্ষার্থীর ধাপে ধাপে উত্তরণ যাতে স্বচ্ছন্দ এবং চাপমুক্ত হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের এই বিষয়সমূহ নির্বাচনের সময় অনেকগুলো দিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীর বয়স, আগ্রহ এবং বিকাশের চাহিদা অনুযায়ী বিষয়ের সংখ্যা ও ধরন ঠিক করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে শিক্ষাক্রমের নির্ধারিত মূল যোগ্যতাসমূহ এবং তার ধারাবাহিকতায় শিখন-ক্ষেত্রসমূহের যোগ্যতাসমূহ অর্জনে সমর্থ হয়, কিন্তু একই সঙ্গে বিষয়বস্তুর চাপ যাতে বেড়ে না যায় সেজন্য থিমভিত্তিক ও ইন্টারডিসিপ্লিনারি অ্যাপ্রোচ গ্রহণ করা হয়েছে। শিখনকে কার্যকর ও আনন্দময় করতে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের উপর জোর দেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে একই শিখন-কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে একাধিক বিষয়ের যোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব। নিচে ছকের মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিষয়সমূহের বিন্যাস দেখানো হয়েছে। যদিও অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট শিখনক্ষেত্রের সঙ্গে নির্দিষ্ট বিষয়ের সম্পর্ক স্পষ্টত লক্ষণীয়, বস্তুত সকল বিষয়ই সকল শিখন-ক্ষেত্রের যোগ্যতা অর্জনে ভূমিকা রাখবে। কেননা শিখন-ক্ষেত্র ও বিষয়ের মধ্যকার সম্পর্কটি একমুখী নয়। ২.১০.১ প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় ও প্রাথমিক স্তরের নির্বাচিত বিষয়সমূহ শিখন-ক্ষেত্র প্রাক-প্রাথমিক প্রাথমিক ভাষা ও যোগাযোগ সমন্বিত বিষয়   বাংলা ইংরেজি গণিত বিজ্ঞান ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান স্বাস্থ্য সুরক্ষা ধর্মশিক্ষা শিল্প ও সংস্কৃতি গণিত ও যুক্তি জীবন ও জীবিকা সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব পরিবেশ ও জলবায়ু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডিজিটাল প্রযুক্তি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা ধর্ম, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শিল্প ও সংস্কৃতি বিশেষ দ্রষ্টব্য : মাধ্যমিক স্তরে ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং জীবন ও জীবিকা আলাদা বিষয় হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরে এই দুইটি আলাদা বিষয় হিসেবে না থাকলেও এই বিষয়দ্বয়ের অন্তর্গত শিখনযোগ্যতা অন্যান্য বিষয়সমূহের মধ্য দিয়ে সমন্বিতভাবে অর্জিত হবে। মাধ্যমিক স্তরের (ষষ্ঠ থেকে দশম) নির্বাচিত বিষয়সমূহ শিখন-ক্ষেত্র মাধ্যমিক (৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণি) ভাষা ও যোগাযোগ বাংলাইংরেজিগণিতবিজ্ঞানইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানডিজিটাল প্রযুক্তিজীবন ও জীবিকাস্বাস্থ্য সুরক্ষা ধর্মশিক্ষাশিল্প ও সংস্কৃতি গণিত ও যুক্তি জীবন ও জীবিকা সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব পরিবেশ ও জলবায়ু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডিজিটাল প্রযুক্তি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা ধর্ম, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শিল্প ও সংস্কৃতি শিখন-ক্ষেত্র থেকে বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিবেচ্য দিক সাম্প্রতিক সময়ে থিমভিত্তিক ও আন্তঃবিষয়ক কৌশলের (ইন্টারডিসিপ্লিনারি অ্যাপ্রোচ) ইতিবাচক ফলাফলকে নজরে এনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রমে এই কৌশল বা অ্যাপ্রোচ গ্রহণ করা হয়েছে। এই বাস্তবতা সামনে রেখে, এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে এই রূপরেখায় মাধ্যমিক পর্যায়ে মূল বিষয়ের পাশাপাশি থিমভিত্তিক বিষয়ও রাখা হয়েছে। শিক্ষাক্রমে নমনীয়তা নীতি গ্রহণ করার ফলে ভবিষ্যতেও এই বিষয় বিন্যাসকে চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী সাজানোর সুযোগ রয়েছে। থিমভিত্তিক বিষয়গুলো ছাড়াও অন্যান্য বিষয়েও একাধিক আলোচনার ক্ষেত্রের সমন্বয় ঘটেছে, যেমন ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানকে একটি বিষয় হিসেবে ধরা হলেও, ইতিহাস, অর্থনীতি, পৌরনীতি, ভূগোল এসকল বিষয়ের সমন্বয় ঘটেছে এখানে। একইভাবে, বিজ্ঞান বিষয়ে ভৌতবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ভূ-বিজ্ঞান এসকল ক্ষেত্রের শিখনযোগ্যতার সমন্বয় থাকছে। ভাষা শিক্ষায় শোনা, বলা, পড়া, লেখার মত মৌলিক দক্ষতা শুধু নয়, বিকল্প যোগাযোগ দক্ষতাও বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যেহেতু প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর জন্য শিখন-ক্ষেত্রসমূহ অভিন্ন থাকছে, কাজেই শিক্ষার্থীরা যাতে সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করতে পারে সেজন্য স্তরভিত্তিক উদ্দেশ্য সামনে রেখে স্তরভেদে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আপেক্ষিক গুরুত্ব বেশি বা কম দেয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ে যেহেতু ভিত্তিমূলক দক্ষতা অর্জনকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, কাজেই মাতৃভাষা, যোগাযোগ ও গাণিতিক দক্ষতা অর্জনকে এই স্তরে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। একইভাবে, মাধ্যমিক (ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি) স্তরের সকল শিক্ষার্থী যাতে প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে পারে এবং সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রের যোগ্যতাসমূহ অর্জন করে জাতীয়তাবোধসম্পন্ন বিশ্বনাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে পারে সেজন্য এই স্তরে বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয় অধিকতর গুরুত্ব পেয়েছে। একাদশ দ্বাদশ শ্রেণিতে মোট ভরের (weightage) তিন চতুর্থাংশ বিশেষায়িত বিষয়সমূহের জন্য এবং এক চতুর্থাংশ ভর আবশ্যিক বিষয়সমূহের জন্য বরাদ্দ থাকবে এবং এই বিষয়গুলোতে বিভিন্ন শিখনক্ষেত্রের যোগ্যতাসমূহের সমন্বয় থাকবে। এই সমন্বিত বিষয়সমূহে প্রায় সকল শিখনক্ষেত্রের বিভিন্ন মাত্রায় প্রতিফলন থাকতে পারে। ===000=== তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Uncategorized

শিখন-শেখানো সামগ্রী  (Teaching-learning materials)

শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের মূল বাহন হলো শিখন-শেখানো সামগ্রী। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য প্রণীত শিখন শেখানো সামগ্রী যথাযথ ব্যবহার ও প্রয়োগের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিক্ষাক্রমে উল্লিখিত যোগ্যতাসমূহ শিক্ষার্থীরা অর্জন করে । শিক্ষাক্রম রূপরেখায় শিখন-শেখানো সামগ্রী বলতে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রণীত রিসোর্সবুক, পাঠ্যপুস্তক, সহায়ক বই, সম্পূরক পঠন-সামগ্রী, গল্প ও ছড়ার বই, চার্ট, কার্ড, মডেল, ডিজিটাল সামগ্রী এবং শিক্ষকের জন্য প্রণীত শিক্ষক সহায়িকাকে বোঝানো হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন উপকরণ, চারপাশের পরিবেশের উপাদান ইত্যাদিও শিখন-শেখানো সামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত হবে। শিক্ষার্থীদের মাঝে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে প্রতি শ্রেণির জন্য বাছাই করা বয়সোপযোগী বইয়ের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হবে যেগুলো ওই শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীরা সারা বছর জুড়ে পড়বে। বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে এই বইগুলো রাখা যেতে পারে যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বই নিয়ে পড়ে আবার ফেরত দিতে পারে। প্রাক-প্রাথমিক : প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের জন্য মূল শিখন-শেখানো সামগ্রী হলো শিক্ষক সহায়িকা। এ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যেহেতু পড়তে বা লিখতে পারে না তাই প্রাক-প্রাথমিকের সকল যোগ্যতা অর্জনের জন্য বিস্তারিত নির্দেশনা প্রদান করা হবে শিক্ষক সহায়িকাতে। শিক্ষক সহায়িকাতে উল্লিখিত নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন খেলা ও কাজের মাধ্যমে শিখন অভিজ্ঞতা নিয়ে শিক্ষার্থীরা মূলত এই পর্যায়ের জন্য নির্ধারিত যোগ্যতাসমূহ অর্জন করবে। শিক্ষক সহায়িকার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়ার্কবুক, গল্প ও ছড়ার বই, চার্ট, কার্ড, মডেল উন্নয়নসহ খেলনা ও বিভিন্ন উপকরণ, অডিও-ভিজ্যুয়াল ব্যবহার করা হবে। প্রাথমিক (১ম থেকে ৩য়) : এ স্তরের একটি মূল উদ্দেশ্য হলো শিশুদের পড়তে, লিখতে ও অনুসন্ধান করতে শেখাকে নিশ্চিত করা । শিশুরা যেহেতু এই স্তরেও ঠিকমতো নিজে নিজে পড়ার দক্ষতা অর্জন করেনা তাই এই স্তরের মূল শিখন-শেখানো সামগ্রী হলো শিক্ষক সহায়িকা। শিক্ষক সহায়িকাতে উল্লিখিত নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন খেলা, কাজ ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিখন যোগ্যতাসমূহ অর্জন করবে। বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক সহায়িকার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী ওয়ার্কবুক, পাঠ্যপুস্তক, সম্পূরক পঠন-সামগ্ৰী, চার্ট ও কার্ডের উন্নয়নসহ খেলনা সামগ্রী, অডিও-ভিজুয়াল ও বিভিন্ন উপকরণ প্রচলন করা হবে। পারিবারিক ও সামাজিক পরিসর ও প্রেক্ষাপটও শিক্ষার্থীর শিখন অভিজ্ঞতা অর্জনের অন্যতম উপাদান হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রাথমিক (৪র্থ থেকে ৫ম) : এই স্তরের শিক্ষার্থীরা নিজে নিজে পড়তে ও লিখতে পারে তাই শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যপুস্তক ও সম্পূরক পঠনসামগ্রী থাকবে। তবে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষায় শিখন অভিজ্ঞতাই যেহেতু শিখনের মূল উপায় সেহেতু শিক্ষক সহায়িকা এক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। পাঠ্যপুস্তক সহায়ক হলেও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশের জন্য তাদের নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা ও হাতে কলমে কাজের মাধ্যমে যেতে হবে পাশাপাশি বিভিন্ন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের শিখন চাহিদা ও আগ্রহ বিবেচনায় প্রাসঙ্গিক শিখন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে পরিচালিত করার জন্য শিক্ষকদের জন্য থাকবে শিক্ষক সহায়িকা । শিক্ষার্থীর আশেপাশের পরিবেশই হবে তার শিখন অভিজ্ঞতা অর্জনের মূল উপাদান। এছাড়াও প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়ক বই, সম্পূরক পঠন-সামগ্রী, চার্ট ও কার্ডের উন্নয়নসহ স্থানীয় উপকরণ, অডিও-ভিজুয়াল, পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ শিখন উপকরণ/সামগ্রী/উপাদান হিসেবে প্রচলন করা হবে। মাধ্যমিক : মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্যও পাঠ্যপুস্তক এবং বিভিন্ন পঠন-সামগ্রী থাকবে। এছাড়াও শিক্ষাক্রম রূপরেখার কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা, মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের শিখন চাহিদা ও আগ্রহ বিবেচনায় প্রাসঙ্গিক শিখন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের পরিচালিত করার জন্য শিক্ষকদের জন্য থাকবে শিক্ষক সহায়িকা। অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী শিখবে বিধায় তার নিজের স্থানীয় পরিবেশের উপাদানসমূহই এইক্ষেত্রে প্রধান শিখন সামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এর বাইরে প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়ক বই, সম্পূরক পঠন-সামগ্রী, চার্ট, কার্ড ও অডিও-ভিজ্যুয়াল সামগ্রীর উন্নয়ন ও প্রচলন করা হবে। এক্ষেত্রে পরিবার, বিদ্যালয়, সামাজিক পরিবেশ শিক্ষার্থীর শিখন অভিজ্ঞতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে। ===000=== তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Uncategorized

শিখন-শেখানো কৌশল (Teaching-learning strategies)

রেনেসাঁ-পরবর্তী আধুনিক যুগে শিল্প বিপ্লবের ফলে ইউরোপে শ্রমবাজারের চাহিদা পূরণ করার উদ্দেশ্যে যে গণশিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল তার আদলেই শিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তর ঘটেছিল বিশ্বজুড়ে।১০ এই শিক্ষা ব্যবস্থায় মুখস্থ-নির্ভর সাক্ষরতা অর্জনের যে ধারণার উদ্ভব ঘটে সেখানে শিক্ষার্থীর নিজস্বতার তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। সেই সময়ের প্রেক্ষিতেই আচরণবাদী (Behaviourism) শিখন শেখানো দৃষ্টিভঙ্গির উদ্ভব ঘটে। আচরণবাদী শিখন-শেখানো মতবাদের প্রবক্তা হিসেবে পাভলভ, থর্নডাইক, স্কিনারের নাম উল্লেখযোগ্য (Fosnot, 1996)। আচরণবাদী শিখন শেখানো দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শিক্ষার্থী কী শিখবে, কীভাবে শিখবে, কখন শিখবে, কোথায় শিখবে, কেন শিখবে তা আগে থেকে ঠিক করে দিতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর নিজস্ব চিন্তা, পছন্দ বা দৃষ্টিভঙ্গির তেমন কোন গুরুত্ব থাকেনা (Glasersfeld, 1995 eds. Steffe & Gale, 1995)। আচরণবাদ অনুযায়ী শিক্ষার্থীর কাঙ্ক্ষিত শিখন নিশ্চিত করার জন্য বলবর্ধক বা শাস্তি প্রদান করতে হয় (Fosnot, 1996)। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীর শিখন কখন, কীভাবে কিংবা কতবার আচরণ দিয়ে প্রকাশ পাবে এবং সেগুলো কীভাবে পরিমাপ করে শিক্ষার্থীর শিখনকে মূল্যায়ন করা হবে তাও আগে থেকে ঠিক করা থাকতে হবে। আচরণবাদপ্রসূত এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলেই মুখস্থনির্ভর, লিখিত পরীক্ষাভিত্তিক ও নম্বরভিত্তিক মূল্যায়ন, শিক্ষককেন্দ্রিক, একমুখী, তত্ত্বনির্ভর একটি শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ার প্রচলন ঘটে। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষকের মূল দায়িত্ব হল জ্ঞান বিতরণ করা এবং শিক্ষার্থীর প্রধান দায়িত্ব হল সেই জ্ঞান কোনরূপ পরিবর্তন ছাড়া মুখস্থ করে পুনরুৎপাদন করা। আচরণবাদনির্ভর এই কাঠামোবদ্ধ এবং অনমনীয় শিখন-শেখানো প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীর সৃষ্টিশীলতার পরিপন্থী এবং ব্যক্তির ব্যক্তিগত চাহিদা ও সম্ভাবনা পরিচর্যায় অপারগ। তবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পূর্বনির্ধারিত যান্ত্রিক আচরণিক প্রতিক্রিয়া লাভের জন্য আচরণবাদী শিখন শেখানো দৃষ্টিভঙ্গি বেশ কার্যকর, তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির গ্রহণযোগ্যতা পরবর্তীকালে হ্রাস পায়। তাছাড়া শিক্ষার্থীর বিকাশের বিভিন্ন স্তরে তার পারদর্শিতার মাত্রা নির্ধারণ করে শিখন- শেখানো প্রক্রিয়া নিরূপণ করা হত, যা পরিপক্বতাবাদ (Maturationism) হিসেবে পরিচিত (Fosnot, 1996)। শিখনপ্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের ধারণা শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ার মধ্যে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে। বিশেষ করে বর্তমানের দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য শুধু জ্ঞান অর্জন যথেষ্ট নয়। অর্জিত জ্ঞানকে পরিবেশ অনুযায়ী অভিযোজনের জন্য প্রয়োগ করার দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করাও জরুরি । কাজেই কোনো পূর্বনির্ধারিত আচরণ হুবহু অর্জন করা শিখনের উদ্দেশ্য নয়। বরং শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিবেশের অবিরাম মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে তার বৈশিষ্ট্য ও পারদর্শিতা এবং পরিবেশের উপাদান উভয়ের মধ্যেই পরিবর্তন ঘটে এবং এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থী পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ অর্জন করে। শিখন শেখানো প্রক্রিয়ার এই ধারণা গঠনবাদ/ জ্ঞানীয় বিকাশ তত্ত্ব (Constructivism/cognitivism) নামে পরিচিত, যার প্রবক্তা জ্যাঁ পিঁয়াজে । শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ায় গঠনবাদের ধারণা প্রাথমিক পর্যায়ে পরিপক্কতাবাদ দ্বারা প্রভাবিত ছিল, যার ফলে বিকাশের স্তর অনুযায়ী শিক্ষার্থীর শিখনের ধারা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরবর্তীকালে গবেষকগণ পর্যবেক্ষণ করেন যে, শিশুকে ভাব বিনিময় দক্ষতা এবং সৃষ্টিশীলতা, চিন্তাশীলতা, অভিজ্ঞতা, পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করার পরিবেশ দিতে পারলে সে শিখনের পরিপক্বতার ধারণাকেও অতিক্রম করে যেতে পারে । শিখনের এই উত্তরাধুনিক যুগের ধারণাই সামাজিক গঠনবাদ (Social Constructivism) হিসেবে পরিচিত। এর প্রধান প্রবক্তা হলেন রুশ দার্শনিক লেভ ভাইগটস্কি (Richardson, 1997; Fosnot, 1996)। এই মতবাদ অনুযায়ী শিশু জ্ঞান মুখস্থ করার বদলে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করবে। শিক্ষক এক্ষেত্রে জ্ঞান বিতরণকারীর ভূমিকায় না থেকে সহায়ক বা মেনটরের ভূমিকা পালন করবেন । এই শিখন শেখানো প্রক্রিয়ার ধারণা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা প্রকল্পভিত্তিক বা সমস্যাভিত্তিক শিখনের চর্চা করবে। আর নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা না করে সহযোগিতামূলক শিখনের চর্চা করবে। এর পাশাপাশি প্রতিটি শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত সক্ষমতা ও চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে শিক্ষার্থী কী শিখবে, কীভাবে শিখবে, কখন শিখবে, কোথায় শিখবে এবং কেন শিখবে তা তার নিজের পছন্দ ও পারদর্শিতা বিবেচনা করে নির্ধারিত হবে। যা ব্যক্তিগত ও স্ব-প্রণোদিত শিখনের সংমিশ্রণে পারস্পরিক যোগাযোগের ভিত্তিতে চর্চা করা হয়। কাজেই এই শিখন-শেখানো প্রক্রিয়া অনেক বেশি নমনীয় এবং এর মূল্যায়নও মুখস্থনির্ভর লিখিত পরীক্ষাভিত্তিক নয়; বরং পারদর্শিতা ও দৃষ্টিভঙ্গির বহুমুখী এবং বহু অংশীজনের অংশগ্রহণে একটি পরিপূর্ণ বিকাশের পোর্টফোলিও তৈরির মাধ্যমে করা হয়। পরিবেশ ও প্রতিবেশের সঙ্গে মানুষের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে যে সহাবস্থান তার উপরে ভিত্তি করে মানুষের শিখন-প্রক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করে আরেকটি মতবাদ প্রবর্তিত হয়েছে, যা ব্রনফেনব্রেনারের Ecological System theory নামে পরিচিত। তাছাড়া বর্তমান যুগের প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল টেকনোলজির প্রয়োগ মানুষের শিখনের ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে পুরোপুরি। এর ফলে মানুষ এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে জ্ঞান বা তথ্য মুখস্থ করে ধারণ করেনা, বরং বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য যাচাই, সংশ্লেষণ ও বিশ্লেষণ করে নতুন জ্ঞান ও দক্ষতা সৃষ্টির মাধ্যমে জ্ঞানক্ষেত্রের সীমাবদ্ধতাগুলোকে পূরণ করে সমস্যা সমাধানের নতুন কৌশল বের করার চেষ্টা করে। এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানুষের শিখনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বাধীনতা (শিক্ষার্থীর প্রবণতা ও প্রেষণা অনুযায়ী শিখনের সময়, বিষয়বস্তু, শিখনের স্থান, উদ্দেশ্য, ও শিখনের প্রক্রিয়াতে বহুমাত্রিক নমনীয়তা নিশ্চিত করা) এবং শিক্ষার্থীর মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ স্থাপন করার ভিত্তিতে এক নতুন শিখন ধারণার উদ্ভব ঘটেছে, যা সংযোগবাদ (Connectivism) নামে পরিচিত (Siemens, 2004)। এই শিক্ষাক্রম রূপরেখায় সামাজিক গঠনবাদভিত্তিক শিখন শেখানো প্রক্রিয়া এবং সংযোগবাদকে প্রধান শিখন ধারণা ও প্রায়োগিক কৌশল হিসেবে অনুসরণ করা হয়েছে, যার মূল ভিত্তি হচ্ছে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন। অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনে যেসব প্রক্রিয়া ও কৌশল চর্চার সুযোগ রাখা হয়েছে সেগুলো হলো : আনন্দময় শিখন, পঞ্চ-ইন্দ্রিয়ের সমন্বিত ব্যবহারের মাধ্যমে ও কাজভিত্তিক বা হাতে কলমে শিখন, প্রজেক্টভিত্তিক, সমস্যাভিত্তিক এবং চ্যালেঞ্জভিত্তিক শিখন, সহযোগিতামূলক শিখন, অনুসন্ধানভিত্তিক শিখন, একক, জোড়া এবং দলীয় কাজসহ স্ব-প্রণোদিত শিখনের সংমিশ্রণ, বিষয়নির্ভর না হয়ে প্রক্রিয়া এবং প্রেক্ষাপট নির্ভর শিখন, অনলাইন শিখনের ব্যবহার ইত্যাদি। অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনকে ফলপ্রসূ করতে শিক্ষকের ভূমিকাকেও স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়তামূলক, একীভূত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিখন পরিবেশ নিশ্চিত করবেন যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিখনের উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে নিজের শিখন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিজেই নিতে পারবে। শ্রেণিকক্ষের শিখন পরিবেশ হবে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক, গণতান্ত্রিক ও সহযোগিতামূলক। প্রতিটি শিক্ষার্থীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট, শিখন চাহিদা ও যোগ্যতা বিবেচনায় নিয়ে শিখনকার্যক্রম আবর্তিত হবে। শিক্ষার্থীরা বাস্তব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মাধ্যমে ভাসা ভাসা ধারণা ( Surface learning) থেকে গভীর শিখনের (Deep learning) দিকে ধাবিত হবে যা তাদের শিখনকে নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটের বাইরেও সাধারণীকরণ করতে সাহায্য করবে। শিখনের এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রতিফলনমূলক শিখনে (Reflective learning) আগ্রহী করে তুলতে শিক্ষক সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করবেন। প্রচলিত ভূমিকার ঊর্ধ্বে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক হয়ে উঠবেন সহ-শিক্ষার্থী। প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিফলনমূলক শিখনের মধ্য দিয়ে তিনি নিজেও ঋদ্ধ হবেন। অভিজ্ঞতামুলক শিখন পদ্ধতিতে শিক্ষক একজন সহায়তাকারী এবং শিক্ষার্থী সক্রিয় অংশগ্রহণকারীর ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষক শিক্ষার্থীর আগ্রহ, প্রবণতা, সবলতা বিবেচনা করে বিদ্যালয় ও বিদ্যালয়ের বাইরে অভিজ্ঞতামুলক শিখনে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন । এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী যেমন একা শিখতে পারে, তেমনি জোড়ায় ও দলীয়ভাবেও শিখতে পারে । শ্রেণিকাজে শিক্ষক ইচ্ছে করলে যেকোন একটি বা একাধিক কৌশলের সংমিশ্রণ করতে পারেন । এই শিখন প্রক্রিয়ায় বিষয়সংশ্লিষ্ট কোন বাস্তব জীবনধর্মী সমস্যা নির্ধারণ করে তা সমাধানের উপায় নির্ধারণ এবং তা প্রয়োগের অভিজ্ঞতা লাভের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিখন নিশ্চিত করা যায়। এছাড়া শিক্ষক প্রয়োজনে ডিজিটাল টেকনোলজির প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিখনের

Scroll to Top