City of Education

Author name: Naryan Ch. Das

Notice

2. মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজস্ব খাতভুক্ত বিভিন্ন শ্রেণিতে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড হতে বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়ে সাধারণ শিক্ষায় অধ্যয়নরত নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বৃত্তির তথ্য MIS Software-এ এন্ট্রিকরণ/সংশোধনের সময়সীমা বর্ধিতকরণ

Download

Uncategorized

নতুন শিক্ষাক্রম ও অভিভাবকদের অস্বস্তি : প্রসঙ্গ কথা

সকালে অফিসে প্রবেশের একটু পরেই দুজন শিক্ষার্থী নতুন শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে প্রচারণার অংশ হিসেবে আমার কাছে এলেন। তারা একটি ছাত্র সংগঠনের সদস্য। আমি কৌতুহল থেকেই বর্তমান শিক্ষাক্রম সম্পর্কে তাদের ধারণাগুলো স্পষ্ট করতে বললাম। তাদের একটাই বক্তব্য, এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করবে। শিক্ষাক্রমে কী কী বিষয় আছে যা ক্ষতিকর এবং শিক্ষার্থীদের কী কী ক্ষতি হবে তার একটি তালিকা আমাকে দিলে সেটি সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবো বলে একটি রাইটিং প্যাড ও কলম এগিয়ে দিয়ে তাদের জন্য চা আনতে বললাম। তারা লিখতে রাজি নয়,তাই আমি নিজে লিখবো বলে কলম তুলে নিলেও পরীক্ষা তুলে দেয়া হয়েছে এবং গ্রামের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়বে এটা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারলো না। নতুন কারিকুলামের আওতায় লেখা বইগুলো দেখেছে কিনা আমার এমন প্রশ্নবাণে উৎকন্ঠিত ওরা ঘামতে লাগলো। কাজের তাড়া দেখিয়ে একরকম দৌড়ে আমার রুম থেকে চলে গেলো। হতভম্ব আমি ওদের কাছে না বলা কথাগুলো নিজের সাথেই বলতে শুরু করলাম। পঞ্চাশোর্ধ্ব জীবনে যখন পেছন ফিরে যখন তাকাই, তখন উপলব্ধি করি, আমার শৈশব, কৈশোর ও যৌবনে আমি কখনোই শিক্ষার্থী ছিলাম না, ছিলাম পরীক্ষার্থী মাত্র। ছাত্র হিসেবে আমার প্রধান কর্তব্য ছিলো পাঠ্যবইয়ের পাতার পর পাতা মুখস্থ করা, তৈরি প্রশ্নের উত্তর গলাধঃকরণ ও যথারীতি পরীক্ষার হলে খাতায় সেগুলো বমি করা। আমার পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ খাতায় উগরে দেয়া সেই বমিগুলোই পরিমাপ করতেন। বমির পরিমাণ, গন্ধ, রং বৈচিত্র এগুলোই তাদের বিচার্য বিষয় ছিলো। আর আমরাও দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য খাতায় নানান কালি, মার্জিন ও রং ব্যবহার করে উগরে দেয়া তথ্যগুলোকে নানান অলংকরণে সাজিয়ে দিতাম। এই প্রক্রিয়ায় আমার সহপাঠী বন্ধুরাই ছিলো আমার প্রতিযোগী। বার্ষিক পরীক্ষার আগে ছোট ফুফু দাঁড়িয়ে থেকে শেখাতেন কিভাবে একটি লাইন লিখেই সেটি প্রশ্নের নীচে ঢেকে ফেলতে হয়, যাতে আশেপাশের কেউ দেখতে না পারে। পরীক্ষার পরবর্তী সময়ের আনন্দ আগের ক্লাসের পজিশন ধরে না রাখতে পারার আশংকায় ম্লান হয়ে যেতো। ফলাফলের দিন সবাই মিলে আনন্দ করতে পারিনি। কখনও আমি জিতেছি, কখনওবা আমার অন্য বন্ধুরা। শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর শিক্ষকতা পেশায় আসার পর নিজেও সেই বমি ঘাঁটাঘাটির প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে গেছি। চোখের সামনেই দেখেছি কিভাবে অসহায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তথাকথিত স্বপ্ন পূরণের আশায় আমার সহকর্মী শিক্ষকদের পেছনে হন্যি হয়ে ছুটছেন। আমাদের সময়ে প্রযুক্তির প্রসার না ঘটায় নিয়মের বেড়াজাল এড়িয়ে উপভোগের অনেক সময় অবশিষ্ট থাকতো। কিন্তু নিজে এখন দুটি সন্তানের অভিভাবক হিসেবে শিক্ষা বাণিজ্যের আগ্রাসী সম্প্রসারণ এর কদর্য চেহারা প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষক কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় নিজের সন্তানকে নিয়ে আমার হেনস্থার বহুমূখী অভিজ্ঞতা আর সকলের মতো একই হবে। এইতো কদিন আগেও আমাদের অভিভাবকগণ কোচিং বাণিজ্য আর গাইডবুক বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সারাখন উচ্চকিত ছিলেন। সুযোগ পেলেই সরকারকে তুলোধূনো করতে পিছপা হতেন না। আমরা যারা শিক্ষকতার পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের সাথে যুক্ত, তারা গত একযুগ ধরেই শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দঘন, জীবনমুখী একটি শিক্ষাক্রমের স্বপ্ন দেখেছি। উন্নত ও স্বল্পোন্নত ডজনখানেক দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে তুলনা করে দেখেছি, আমাদের কারিকুলামে জ্ঞানের কচকচানি অনেক বেশি। কিন্তু এটি শিক্ষার্থীর সক্ষমতা আর দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে তেমন কোনো ইতিবাচক ছাপ ফেলে না। অথচ আজকের বিশ্বে ‘কী জানেন’ এটি নয়, ‘কী পারেন’ এটিই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কোচিং ও গাইড বই নির্ভর এই শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য আমাদের অভিভাবকদের মানসিকতাও কম দায়ী নয়। আমরা সন্তানদের স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্য এসবের দিকে লক্ষ্য না করে তাদের আমাদের ইচ্ছা পূরণের পুতুল ভাবতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই আমাদের স্বপ্নের নীচে সন্তানদের স্বপ্ন চাপা পড়ে যায়। যেই ছেলেটি ফুটবলে লাথি মেরে বিখ্যাত হবার জন্য জন্ম নিয়েছিল,বা একটি সিনেমা বানিয়ে জগৎ বিখ্যাত হতে পারেতো, অংকে বা ভূগোলে সে একটু কাঁচা থাকলে পৃথিবীর কোনো ক্ষতি হতো না। কিন্তু তাকে সব বিষয়ে পটু বানাতে গিয়ে আমরা একদিকে একজন কীর্তিমানকে হারিয়ে ফেলি অন্যদিকে একজন মধ্যম বা নিম্নমানের পেশাজীবী তৈরি করি। অসফল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার, শিক্ষক বা অন্য কোনো পেশাজীবির চাইতে সফল একজন শিল্পী, কবি, কারিগর বা উদ্যোক্তা জীবনকে অনেক সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারে এই সত্যটা আমরা ভুলে থাকতে চাই। সন্তানের অনাগত ভবিষ্যতকে নিরাপদ করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই তাকে জীবনব্যপী মানসিক প্রতিবন্ধিতার দিকে ঠেলে দেই। নতুন শিক্ষাক্রমে “অভিজ্ঞতা নির্ভর শিক্ষা”কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আমি লক্ষ্য করেছি, প্রাথমিকের পরিবর্তন নিয়ে অভিভাবকরা অতটা উচ্চকিত নন। যত আলোচনা ষষ্ঠ ও সপ্তমের পাঠ্যপুস্তক নিয়ে। এর কারণ প্রত্যাশার চাপটা এই শ্রেণীর শিক্ষার্থী থেকেই শুরু হয়। ফলে তারা অবচেতনেই শিক্ষা বাণিজ্যের শিকারে পরিণত হয়। তাদের কৈশোরের সোনালী সময়গুলো এক অসহনীয় শারিরীক ও মানসিক চাপের মধ্যে পার হয়ে যায়। এর দীর্ঘ মেয়াদি শারিরীক ও মানসিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে এদেশে তেমন কোনো গবেষণা নেই, তবে উন্নত দেশে আছে বলেই তারা শিক্ষক কেন্দ্রিক পরীক্ষা নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছে। অনুন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছে যাওয়া আমাদের দেশ আজ সেই পথে হাঁটার সক্ষমতা অর্জন করেছে। আমাদের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া সন্তানরা সকালে কোচিং এর পর স্কুল অথবা স্কুল এর পর কোচিং করে একরাশ ক্লান্তি নিয়ে ঘরে ফিরছে না। বিশ্রাম না নিয়েই আবারও বই নিয়ে মুখস্থের কসরত অথবা টিউশন টিচারের কাছে পড়তে বসছে না। বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিছে, ভাই বোনদের সাথে গল্পে মেতে উঠেছে। মুখস্থের পরিবর্তে স্কুলের অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে নানা উপকরণ তৈরি করছে। ওদের চোখে ক্লান্তি আর প্রতিযোগিতা নিয়ে দুঃশ্চিন্তার ছাপ দেখতে না পেয়ে অনভ্যস্ত অভিভাবকগণ সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে আরো বেশি দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। এই দুঃশ্চিন্তার মূল কারণ প্রতিযোগিতায় সন্তানের হেরে যাবার আশংকা। কিন্তু তার সন্তান ইতোমধ্যেই জেনে গেছে ক্লাসের সহপাঠীদের সাথে তার সম্পর্ক প্রতিযোগিতা নয়, সহযোগিতার। ফলে তারা সবাই মিলে শিখছে। এই শেখা শিক্ষার্থী ভেদে কম বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। সরকার ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক (বিএনকিউএফ) বাস্তবায়ন শুরু করেছে। ৮ম শ্রেণী থেকে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট লেভেলে জাতীয় দক্ষতা মান অর্জন করবে। এতে করে শিক্ষার্থী একাডেমিক সনদের পাশাপাশি একটি দক্ষতা সনদও অর্জন করবে। ফলে যে কোনো স্তরে শিক্ষায় ছেদ পড়লেও অর্জিত দক্ষতা তাকে কর্মক্ষেত্রে অসহায় করে তুলবে না। আর একাডেমিক শিক্ষা হবে জীবনব্যপী; যখনই সুযোগ হবে যে কেউ আবারও পড়াশোনায় ফিরে আসতে পারবে। আমাদের শিক্ষার্থীরাও পরিবারের বোঝা না বাড়িয়ে উন্নত বিশ্বের মতো নিজেরাই উপার্জন ও অধ্যয়ন এক সাথেই চালিয়ে যাবার সুযোগ পাবে। অভিভাবকদের আরেকটি আশংকা, নতুন কারিকুলামে অধ্যয়নরত আমাদের সন্তানরা উচ্চশিক্ষা ও চাকুরীর বাজারে পিছিয়ে যাবে। আসলে এই কারিকুলাম সম্পন্ন হবার সাথে সাথে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি পদ্ধতি ও চাকুরির ইন্টারভিউতেও ব্যপক পরিবর্তন আসবে। একাডেমিক সার্টিফিকেট নয়, যোগ্যতা সনদের দিকেই চাকুরিদাতাদের নজর থাকবে। কোন বিষয়ে কী ফলাফল নিয়ে পাশ দিয়েছে তা নয়, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাজের ক্ষেত্রগুলোতে অবদান রাখার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা রয়েছে কিনা সেটিরই মূল্যায়ন হবে। গুগল, মেটা, অ্যামাজন,অ্যাপেল এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সার্টিফিকেটধারী নয়, তাদের প্রত্যাশা পুরনের সক্ষমতাসম্পন্ন দক্ষ মানুষদের খুঁজে বের করে চাকুরি দিচ্ছে। বিশ্বায়নের যুগে এই ঢেউ আমাদের দেশেও ছড়িয়ে পড়তে সময় নেবে না। তাই আমাদের সন্তানদের কেবল শিক্ষা সনদ নয়, জাতীয়

Uncategorized

বিষয়ের ধারণায়নঃস্বাস্থ্য সুরক্ষা (Wellbeing)

বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতার বিবরণী বয়সভিত্তিক অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা এবং এর চ্যালেঞ্জ সঠিকভাবে মোকাবেলা করে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার মাধ্যমে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুরক্ষিত থেকে নিজে সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপন করতে পারা ও অন্যকে উদ্বুদ্ধ করতে পারা। নিজের ও অন্যের মতামত ও অবস্থানকে সম্মান করে ইতিবাচক যোগাযোগের মাধ্যমে পারবারিক, সামাজিক ও বৈশ্বিক পরিসরে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে সক্রিয় ও মানবিক নাগরিক হিসেবে অবদান রাখা । বিষয়ের ধারণায় অন্তঃ ও আন্তঃব্যক্তিক পরিবর্তন এবং প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে নিজ স্বাস্থ্য, সুরক্ষা, নিরাপত্তা এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সকলকে নিয়ে ভালো থাকা প্রতিটি মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিজে ভালো থাকার এবং অন্যকে ভালো রাখার উপর মানুষের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ জীবন অনেকাংশে নির্ভর করে যা সুস্থ সমাজ এবং নিরাপদ ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ইতিপূর্বে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা সংক্রান্ত যোগ্যতাসমূহকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অংশ কিংবা সহ বা অতিরিক্ত শিক্ষাক্রমিক কাজ হিসেবেই বিবেচনা করা হতো। কিন্তু অন্তঃ ও আন্তঃব্যক্তিক পরিবর্তনের প্রভাব পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে ইতিবাচকভাবে মোকাবেলা করে সকলকে নিয়ে ভালো থেকে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রত্যেকের কিছু বিশেষ যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। এই যোগ্যতাসমূহ আপনা-আপনি তৈরি হয় না, বরং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য-বিষয়ক শিক্ষা ও পরিচর্যার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জিং, উপভোগ্য, সমসাময়িক, সক্রিয় এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিখন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নিয়ে যেতে হয়। এই অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের মধ্য দিয়েই শিক্ষার্থীরা নিজের এবং অন্যের বৈশিষ্ট্য, সামর্থ্য, সীমাবদ্ধতা, আবেগ, অনুভূতি পছন্দ ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক ধারণার ভিত্তিতে নিজেকে বুঝে এবং অন্যের অবস্থান অনুধাবন করে ইতিবাচক, কার্যকর যোগাযোগ ও সম্পর্ক ব্যবস্থাপনাসহ তার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব যথাযথভাবে নিয়ে সফল ও আনন্দময় জীবনযাপন করতে পারে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়টি ধারণায়নে প্রতিক্রিয়াভিত্তিক (Reactive) উদ্যোগের পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ ক্ষমতায়ন (Empowerment) কৌশল বিবেচনা করা হয়েছে যা সময়সাপেক্ষ হলেও শিক্ষার্থীদের কঠিন বাধা দূর করে ভিতর থেকে আত্মবিশ্বাসী ও মানবতাবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে টিকে থাকতে (Resilience) সহায়তা করে। এ সংশ্লিষ্ট যোগ্যতাসমূহ অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজের ও অন্যের আবেগ ও অনুভূতি অনুধাবন করে ভাব বিনিময় ও মত প্রকাশ, কার্যকর অংশগ্রহণ, আত্মবিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন, সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা (বজায় রাখা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ছিন্ন করা), সফলতা ও ব্যর্থতা অনুধাবন ও ইতিবাচকভাবে মোকাবেলা, আবেগ ও মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা সর্বোপরি আত্ম-পরিচর্যার মাধ্যমে নিজেকে সুস্থ, সংবেদনশীল ও পরিশীলিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানুষ, সমাজ ও পৃথিবীর প্রতি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা অন্যের আবেগ, অনুভূতি, আনন্দ, বেদনা অনুধাবন করে সমব্যথা বা সম-আনন্দ অনুভব করে এবং সকল প্রকার ঝুঁকি, দ্বন্দ্ব, হতাশা, ক্ষোভ, বিদ্বেষ নিরসনের মাধ্যমে মানব ও প্রকৃতি সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে অর্থবহ জীবনযাপনের মাধ্যমে ভালো থাকতে পারে । বিষয়ের যৌক্তিকতা, গুরুত্ব এবং ক্ষেত্রসমূহ বিবেচনায় নিম্নলিখিতভাবে এর ধারণায়ন করা হয়েছে। শরীর ও মনের যত্ন ও পরিচর্যা : স্বাস্থ্য সুরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ পন্থা হলো নিজের পরিচর্যা অর্থাৎ নিজেকে ভালোবেসে শরীর ও মনের যত্ন ও পরিচর্যা করা। শিক্ষার্থীর শরীর, মন এবং পরিবেশের প্রতিনিয়ত অন্তঃ ও আন্তঃমিথ ক্রিয়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতির স্বাস্থ্যকর, ইতিবাচক, সংবেদনশীল ও কার্যকরী ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতিনিয়ত নিজের যত্ন ও পরিচর্যা করা প্রয়োজন। সুতরাং নিরবিচ্ছিন্নভাবে আত্ম-পরিচর্যা করতে পারার যোগ্যতা প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য অত্যাবশ্যক। দৈনন্দিন এবং বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য পরিচর্যা, পুষ্টি ও খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা ও খেলাধুলা, রোগ ও দুর্ঘটনা, ঝুঁকি মোকাবেলা, আবেগ ব্যবস্থাপনা, সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা, চাপ মোকাবেলা, শখ ও বিনোদন, অংশগ্রহণ, স্বেচ্ছাসেবা ইত্যাদি সার্বিকভাবে আত্ম-পরিচর্যার অংশ। আত্ম-পরিচর্যায় শরীর ও মনের সঙ্গে পরিবার ও সমাজের মিথস্ক্রিয়ার প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই নিজে ভালো থ াকার অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে অন্যকেও ভালো রাখা । যথাযথভাবে জেনে, বুঝে, অনুধাবন ও উপলব্ধি করে কার্যকরী আত্ম-পরিচর্যা করতে হলে নিম্নবর্ণিত সক্ষমতাসমূহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ১. আবেগিক বুদ্ধিমত্তা : নিজের আবেগ অনুভূতির অনুধাবন ও উপলব্ধি, ইতিবাচকভাবে প্রকাশ ও ব্যবস্থাপনাসহ অন্যের আবেগ ও অনুভূতি বোঝা এবং তা সম্মান করে যৌক্তিক ও স্বাস্থ্যকর যোগাযোগ ও ব্যবস্থাপনা করতে পারা এবং ধৈর্য্য ও সংবেদনশীলতা প্রদর্শন করার যোগ্যতা এই ধরণের মধ্যে অর্ন্তভুক্ত। চিন্তাকে যৌক্তিক, বিশ্লেষণধর্মী ও গঠনমূলক রেখে, প্রাধিকার নির্ধারণ করে ইতিবাচকভাবে ভূমিকা রাখতে পারাও এই যোগ্যতাসমূহের অংশ। ২. আত্ম-বিশ্লেষণ : নিজের বৈশিষ্ট্য, গুণাবলি, সামর্থ্য ও সীমাবদ্ধতা অনুধাবন করে বিশ্লেষণ ও যৌক্তিক মুল্যায়নের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ, মূল্যায়নকে বিশ্লেষণধর্মী ও গঠনমূলক রেখে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া, অনুভূতি ও আচরণের সঙ্গে সম্পর্ক এবং প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী যথাযথ সহায়তা চাইতে পারা ইত্যাদি এই ধরনের যোগ্যতাসমূহের অন্তর্ভুক্ত । ৩. সামাজিক বুদ্ধিমত্তা : সমাজের সক্রিয় সদস্য হিসেবে সকলের সঙ্গে থেকে সামাজিক কর্মকাণ্ডে ইতিবাচক অংশগ্রহণ ও ভূমিকা রাখা এবং নিজের কার্যক্রম ও ভূমিকায় সন্তুষ্ট থেকে নিজেকে শ্রদ্ধা করা ও ভালোবাসতে পারার জন্য সামাজিক বুদ্ধিমত্তা সংশ্লিষ্ট যোগ্যতাসমূহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজের এবং অন্যের সামর্থ্য ও সীমাবদ্ধতা অনুধাবন করে যৌক্তিকভাবে আত্ম-বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নের মাধ্যমে সামাজিক সম্পর্ক গঠন ও বজায় রাখা, আন্তঃ সম্পর্ক সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি ও চাপ মোকাবেলা/ব্যবস্থাপনা, ধৈর্য্য ও সংবেদনশীলতার সঙ্গে আবেগ ও চাপমুক্ত থেকে দৃঢ়তা ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রত্যয় ও নমনীয়তার সঙ্গে দ্বন্দ্ব নিরসন ও সমঝোতা করতে পারা এবং সামাজিক নেটওয়ার্ক বজায় রাখতে পারা সামাজিক বুদ্ধিমত্তার অন্যতম যোগ্যতা । সুতরাং শরীর, মন, পরিবার ও সমাজের প্রতিনিয়ত মিথস্ক্রিয়ার প্রেক্ষাপটে আবেগিক বুদ্ধিমত্তা, আত্মবিশ্লেষণ এবং সামাজিক বুদ্ধিমত্তা অর্জন করে নিজেকে ভালোবেসে নিজের দায়িত্ব উপলব্ধি করে নিরবিচ্ছিন্নভাবে শরীর ও মনের যথাযথ যত্ন ও পরিচর্যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভালো থাকার এবং অন্যকে ভালো রাখার যোগ্যতা অর্জন করবে। ===000=== তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Uncategorized

বিষয়ের ধারণায়নঃধর্ম শিক্ষা (Religion Studies)

বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতার বিবরণী ধর্মের মৌলিক জ্ঞান, বিশ্বাস ও জ্ঞানের উৎসসমূহের গুরুত্ব ও তাৎপর্য উপলব্ধি করে ধর্মীয় বিধিবিধান অনুসরণ ও অনুশীলনের মাধ্যমে নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি অর্জন ও ধারণ করতে পারা । সৃষ্টিজগতের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্বপালন এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারা। বিষয়ের ধারণায় নিজ ধর্ম সম্পর্কে জানা এবং ধর্মীয় জ্ঞান, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, বিধিবিধান ও অনুশাসন উপলব্ধি করে তা নিজ জীবনে অনুশীলন করা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ধর্ম এক দিকে যেমন জীবনের অর্থ, মূল্য ও উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সহায়তা করে তেমনি নিজেকে ও অন্যকে বুঝতেও সহায়তা করে। নিজেকে সৎ, নীতিবান, দায়িত্বশীল, দয়ালু ও মানবিক হিসেবে গড়ে তোলা এবং সকল প্রকার অন্যায়, অবিচার, নিন্দনীয় ও বর্জনীয় কাজ থেকে বিরত রেখে সহনশীল, অসাম্প্রদায়িক, শুদ্ধ মানুষ রূপে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ধর্মশিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পাশাপাশি অন্যের ধর্ম ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীলতা প্রদর্শন করে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান নিশ্চিত করতে ধর্মের নিগূঢ় মর্মবাণী উপলব্ধি করা জরুরি যা সঠিকভাবে ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব। ধর্মীয় আবেগ ও অনুভূতি এবং ধর্মের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসকে অপব্যাখ্যা করে কেউ যেন মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করতে না পারে কিংবা কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব হিংসা-বিদ্বেষ তৈরি করতে না পারে তার জন্যও সঠিকভাবে ধর্মীয় জ্ঞান আহরণ করা জরুরি। উপর্যুক্ত বিষয়সমূহ বিবেচনা করে সঠিকভাবে ধর্মশিক্ষার জন্য শিক্ষাক্রম রূপরেখায় ধর্মশিক্ষা বিষয়টিকে তিনটি পরস্পর সংযুক্ত ক্ষেত্রের মাধ্যমে ধারণায়ন করা হয়েছে। ধর্মীয় জ্ঞান, ধর্মীয় বিধিবিধান এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ ক্ষেত্রের মাধ্যমে নিম্নলিখিত বিষয় এবং এ সংশ্লিষ্ট যোগ্যতাসমূহ অর্জনকে প্রাধান্য দেয়া হবে- যা সার্বিকভাবে ধর্মীয় শিক্ষার যোগ্যতাসমূহ অর্জনে সহায়তা করবে। ধর্মীয় জ্ঞান ধর্মীয় মৌলিক জ্ঞান ও বিশ্বাস, জ্ঞান আহরণে আগ্রহ ও জ্ঞানের উৎস, জ্ঞান অন্বেষণ পদ্ধতি, জ্ঞানের ব্যবহার ও প্রয়োগ ধর্মীয় বিধিবিধান ধর্মীয় রীতিনীতি ও আচার জেনে ও উপলব্ধি করে চর্চা করা, ধর্মীয় অনুশাসনের গুরুত্ব ও অন্তর্নিহিত সৌন্দৰ্য্য অনুধাবন ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রশংসনীয় ও অনুসরণীয় আচরণ গ্রহণ ও চর্চা এবং নিন্দনীয় আচরণ বর্জন ধর্মশিক্ষা বিষয়ের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় অনুশাসন ও বিধিবিধানের সৌন্দর্য উপলব্ধি ও চর্চায় অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে স্থিতিশীল, সৌহার্দ্যপূর্ণ সুখী সমাজ তথা বিশ্ব গড়ে তোলা সম্ভব যা শিক্ষাক্রম রূপরেখায় প্রাধান্য পেয়েছে। ===000=== তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Uncategorized

বিষয়ের ধারণায়নঃজীবন ও জীবিকা (Life and Livelihood)

বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতার বিবরণী পরিবর্তনশীল কর্মজাত, কর্মের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে সকল কাজের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি উন্নয়ন করা, কর্মজগতে প্রবেশের প্রস্তুতি হিসেবে দৈনন্দিন কাজ অনুশীলনের মাধ্যমে প্রাক-যোগ্যতা, কর্মজগতের উপযোগী প্রায়োগিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করা, কর্মজগতে ঝুঁকিমুক্ত ও সুরক্ষিত থেকে ভবিষ্যৎ দক্ষতায় অভিযোজন করতে পারা এবং সকলের জন্য নিরাপদ ও আনন্দময় কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে অবদান রাখতে পারা। বিষয়ের ধারণায়ন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভূতপূর্ব অগ্রযাত্রার ফলে এই শতাব্দীর শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়তই একটি পরিবর্তনশীল বিশ্বের সম্মুখীন হচ্ছে। পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে জীবিকা বদলে যাচ্ছে, নিত্য নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। বর্তমান বিশ্ব চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছে। পূর্বে মেশিন লার্নিং, রোবোটিক্স, বিগডাটা, কৃ ত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ন্যানো টেকনোলোজি, থ্রি-ডাইমেনশন প্রিন্টার, জেনেটিক্সসহ একুশ শতকের আরো অনেক প্রযুক্তি আলাদাভাবে বিকশিত হতে থাকলেও বর্তমানে এই প্রযুক্তিসমূহ পরস্পর নির্ভরশীল হয়ে এমনভাবে দ্রুত গতিতে বিকশিত হচ্ছে যা পুরো বিশ্ব ব্যবস্থাকেই নতুন করে বিন্যস্ত করছে। এ কারণে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এবং ভবিষ্যতের শিল্পবিপ্লবের ধাক্কায় বদলে যাওয়া কর্মজ্ঞাতে আগামী প্রজন্মের টিকে থাকা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় জীবন দক্ষতা ও কর্মযোগ্যতা তৈরি করা জরুরি। একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে- যে শিশুরা আজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়, তাদের ৬৫% কর্ম জগতে প্রবেশ করবে এমন একটি কাজ বা চাকুরি নিয়ে, যে কাজের বা চাকুরির কোনো অস্তিত্বই বর্তমানে নেই” । এরকম দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং অজানা বিশ্বকে বিবেচনা করে, আজকের শিক্ষার্থীদের, তাদের কর্মজগতে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি গঠনের নিমিত্তে ‘জীবন ও জীবিকা’ বিষয়টির নকশা প্রণয়ন করা হয়। ব্যানবেইস ২০১৯ রিপোর্ট অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনের পূর্বে প্রায় ১৮% শিক্ষার্থী, দশম শ্রেণি সমাপ্তের আগে মাধ্যমিক শিক্ষাথীর প্রায় ৩৮% এবং দ্বাদশ শ্রেণি সম্পূর্ণ করার পূর্বেই উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীর প্রায় ২০% শিক্ষার্থী শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ঝরে পড়ে। অর্থাৎ গড়ে প্রায় ৭০% শিক্ষার্থী দ্বাদশ শ্রেণি সম্পূর্ণ করার পূর্বেই বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ে এবং কোনোরকম পেশাগত প্রশিক্ষণ বা দক্ষতা ছাড়াই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। আবার উচ্চ মাধ্যমিক বা স্নাতক সমাপ্তির পরও অনেক সংখ্যক শিক্ষার্থী বেকার থাকে। এর পেছনে কারণ হিসেবে দেখা গেছে কর্মজগতের চাহিদা অনুযায়ী সাধারণ শিক্ষার শিক্ষার্থীদের দক্ষতার ঘাটতি। তাই সাধারণ শিক্ষাধারার সকল শিক্ষার্থীই মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক শেষে যেন পেশাগত দক্ষতা অর্জন করে শ্রমবাজারে সরাসরি যুক্ত হতে পারে এই লক্ষ্যে সাধারণ শিক্ষাধারায় ‘জীবন ও জীবিকা’ নামে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জীবন ও জীবিকা বিষয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যত কর্মজগতে প্রবেশের জন্য নিজেকে যথাযথভাবে প্রস্তুত করবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে পরিবর্তনশীল শ্রমবাজার বিবেচনায় নিয়ে সঠিকভাবে ক্যারিয়ার প্ল্যানিং করতে পারবে। সে লক্ষ্য বা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পদ্ধতিগতভাবে বিভিন্ন বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। পেশাগত দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি একুশ শতকের উপযোগী প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করবে। কর্মজাতে প্রবেশের জন্য রূপান্তরযোগ্য দক্ষতা (ট্রান্সফারেবল স্কিল) ও বৃত্তিমূলক (অকুপেশনাল) দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি নিজ, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বের কাছে তার দায়বদ্ধতা উপলব্ধি করে তার উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য সচেষ্ট হবে। এই বিষয়টি শিক্ষার্থীদের কর্মের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি শ্রদ্ধার মনোভাব তৈরি এবং প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন কাজ করার সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাসী ও স্বনির্ভর হয়ে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে। জীবন ও জীবিকা বিষয় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও প্রবণতা অনুযায়ী ভবিষ্যৎ দক্ষতা অর্জনে সক্ষম করে তুলবে এবং তা কাজে লাগিয়ে আগামীতে শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে উদ্ভূত ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে যে কোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারবে। উক্ত যোগ্যতা অর্জনের জন্য চারটি ডাইমেনশন নির্ধারন করা হয় : আত্মবিশ্লেষণ ও আত্মউন্নয়ন : ভবিষ্যত বিশ্বের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে নিজেকে জানা সবচেয়ে আগে প্রয়োজন। নিজেকে জানার মাধ্যমে একদিকে যেমন নিজের পছন্দ-অপছন্দ, ভালোলাগা-মন্দলাগা সম্পর্কে নিজে জানবে সেই সাথে নিজের শক্তি ও সামর্থ্য সম্পর্কে এবং নিজের দুর্বলতা ও নিজের উন্নয়নের ক্ষেত্র সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জনের মাধ্যমে নিজের উত্তরোত্তর উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা বহাল রাখতে পারবে। মানুষ সেই পেশায় সবচেয়ে ভালো করে যে পেশায় কাজ করতে সে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে। তখন কাজকে সে আরো বেশি উপভোগ করতে পারে । এজন্য আত্মবিশ্লেষণ ও আত্মউন্নয়নকে একটি ডাইমেনশন হিসেবে এখানে ধরা হয়েছে। একই সাথে ইতিবাচক আত্মসম্মানবোধের উন্মেষ ঘটানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজ, পরিবার, সমাজ ও জাতীয় দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হবে; নিজের কাজ, পরিবারের কাজ, বিদ্যালয়ের দায়িত্ব, সামাজিক ও জাতীয় দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ হতে পারবে। ক্যারিয়ার প্ল্যানিং (কর্মজীবন পরিকল্পনা) : নিজেকে সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ক্যারিয়ার প্ল্যানিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে সিস্টেমেটিক উপায়ে শিক্ষার্থী নিজের পছন্দ ও সামর্থ্য বিবেচনা করে ভবিষ্যত পেশা নির্বাচন করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে। প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তাকে নিজের আগ্রহ, ঝোঁক, দক্ষতা বিবেচনা করে, পরিবর্তশীল বিশ্বে শ্রমবাজারের ওপর চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাব এবং পারিবারিক সক্ষমতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে একটি কার্যকর কর্মজীবন পরিকল্পনা করতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিবর্তনশীল বিশ্ব ও অজানা ভবিষ্যত বিবেচনা করে পরিকল্পনা এমনভাবে করতে হবে যাতে যেকোনো পরিস্থিতিতে তা পরিমার্জন বা পরিবর্তন বা সময়ের সাথে সাথে সমন্বয় করা যায়। পেশাগত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা : শিক্ষার্থীরা যাতে পড়াশোনার পাশাপাশি এমন একটি দক্ষতা অর্জন করতে পারে যাতে শিক্ষা সমাপান্তে কর্মক্ষেত্রের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে অথবা কোনো একটি নির্দিষ্ট পেশায় দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান করতে পারে। কারিগরি শিক্ষার সংগে সমন্বয় করে যেকোনো একটি বৃত্তিমূলক (অকুপেশনাল) বিষয়ের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে তা সম্পন্ন করা হবে। ভবিষ্যৎ কর্মদক্ষতা : বিশ্বায়ন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, ডেমোগ্রাফিক রূপান্তরের ধারার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি মূহুর্তে বৈশ্বিক পরিবর্তনের চলমান প্রক্রিয়ায় নতুন নতুন পেশার সৃষ্টি হচ্ছে এবং অনেক পুরোনো পেশার সমাপ্তি ঘটছে। ভবিষ্যৎ নতুন পেশার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ রাখতে ভবিষ্যৎ কর্মদক্ষতা একটি ডাইমেনশন হিসেবে রাখা হয়েছে। অজানা পরিস্থিতির সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে নিজেকে হালনাগাদ রাখা ও জীবনব্যাপী শিখনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। নতুন পেশার জন্য আবশ্যিক সুনির্দিষ্ট দক্ষতাসমূহ সম্পর্কে যেহেতু আমরা জানিনা তাই একুশ শতকের দক্ষতাসমূহ বিশেষত সূক্ষ্ম চিন্তন দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, কোলাবোরেশন বা দলে কাজ করার দক্ষতা, সৃজনশীল দক্ষতা ও যোগাযোগ দক্ষতাসমূহ অর্জনের সুযোগ থাকবে। প্রতিটি ডাইমেনশনে দক্ষতা ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়ন এবং নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই বিষয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর জ্ঞান ও অনুধাবনের পাশাপাশি দৈনন্দিন কর্ম অনুশীলন করে ব্যবহারিক কাজের দক্ষতা অর্জন করতে পারবে এবং জীবনঘনিষ্ট কর্মকান্ডের মাধ্যমে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ অর্জন করবে। বিষয়টির পরিকল্পনা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীই কোনো একটি পেশাগত দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি ব্যবহারিক অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে পারে। স্থানীয় চাহিদা ও পরিস্থিতি অনুযায়ী বিদ্যালয় বা শিক্ষার্থীর নিজ এলাকায় উপার্জন সংশ্লিষ্ট কাজে অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা উদ্যোক্তা হিসেবে বিনিয়োগের অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। জীবন ও জীবিকা বিষয়ের মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপান্তে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে পারবে, বৃত্তিমূলক (অকুপেশনাল) কোর্স সংশ্লিষ্ট কোনো একটি পেশার প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে সরাসরি কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারবে অথবা উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারবে। প্রাথমিক স্তরে জীবন ও জীবিকা কোনো আলাদা বিষয় নয় কিন্তু শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই বিষয়ের

Uncategorized

বিষয়ের ধারণায়নঃইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (History and Social Sciences)

বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতার বিবরণী বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিশ্বে নিজের অবস্থান, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়, প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান ও কাঠামো পর্যালোচনা করে পরিবর্তনশীলতায় ইতিবাচক ভূমিকা এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা অনুশীলন করে একটি উন্নত, নিরাপদ ও টেকসই বাংলাদেশ ও বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশ্বনাগরিক হিসাবে ভূমিকা রাখতে পারা। বিষয়ের ধারণায় ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একবিংশ শতাব্দীর একজন বিশ্বনাগরিক হিসেবে ভূমিকা রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক যোগ্যতা সৃষ্টি হবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে। প্রকৃতিতে ও সমাজে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা পরিবর্তনের কার্যকারণ ও প্রভাব অনুসন্ধান করতে পারবে। যৌক্তিক অনুসন্ধান পদ্ধতির প্রাথমিক ধারণা কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামোর আন্তঃসম্পর্ক বিষয়ে অনুসন্ধানের যোগ্যতা অর্জন করবে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জেনে সচেতন নাগরিক হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের মূলনীতির আলোকে সামাজিক ন্যায়বিচার নীতি ধারণ করে সম্পদের টেকসই ব্যবহার ও পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখতে পারবে। ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়টি ক্রস-কাটিং ইস্যু হিসেবে রূপরেখায় নির্ধারিত দশটি মূল শিখনক্ষেত্রের সবগুলোরই নির্ধারিত যোগ্যতা অর্জনে ভূমিকা রাখলেও, এতে মূলত সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু এবং জীবন ও জীবিকা শিখন-ক্ষেত্রগুলো অধিক গুরুত্ব পেয়েছে। বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রেও এসকল শিখন-ক্ষেত্রের যোগ্যতাসমূহ ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। সামাজিক বিজ্ঞানের বৃহত্তর পরিসরে যে সকল বিষয় যেমন- ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, মনোবিজ্ঞান, আইন ইত্যাদি অধ্যয়ন করা হয়, সেগুলোর মূল বিষয়বস্তুসমূহ বিশ্লেষণ করে আত্মপরিচয়, প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামো, পরিবর্তনশীলতায় ভূমিকা এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা – এই চারটি মূল ডাইমেশন নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এই চারটি ডাইমেনশনকে ভিত্তি করেই বিষয়ের ধারণায়ন করা হয়েছে। ধারণায়ন অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী সামাজিক বিজ্ঞান অধ্যয়নের মাধ্যমে প্রকৃতি ও সমাজের বিভিন্ন দৃশ্যমান ও বিমূর্ত কাঠামো এবং এসব কাঠামোর কাজ ও মিথস্ক্রিয়া বিষয়ে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করবে। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামোর মিথষ্ক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে নিজস্ব ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃ তিক, ভৌগলিক ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সে তার আত্মপরিচয় অনুসন্ধান করতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি সে অনুধাবন করবে যে চারপাশের সকল প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামো এবং তাদের ভূমিকা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। এ পরিবর্তনশীলতার ফলে নিয়তই কিছু সম্ভাবনা এবং ঝুঁকি তৈরি হয়, যা প্রকৃতি ও সমাজকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। একজন শিক্ষার্থী এসব ঝুঁকি মোকাবিলা করে সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে প্রকৃতি ও সমাজের পরিবর্তনশীলতায় ইতিবাচক ভূমিকা পালনের যোগ্যতা অর্জন করবে। মানবসভ্যতার বিকাশে সম্পদ একটি অপরিহার্য উপাদান। কাজেই টেকসই উন্নয়নের জন্য পৃথিবীর সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা জরুরি। তাই সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে সম্পদ ব্যবস্থাপনা একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। আলোচ্য চারটি ডাইমেনশনের আলোকে একজন শিক্ষার্থী যে যোগ্যতাসমূহ অর্জন করবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে তা সভ্যতা ও সংস্কৃতি, সামাজিক সম্পর্ক, পরিবেশ ও প্রতিবেশ, টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্য এসকল ক্ষেত্রে চর্চা করার মাধ্যমে সহযোগিতা, সহনশীলতা, সহমর্মিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, দায়িত্বশীলতা, সংবেদনশীলতা প্রভৃতি মূল্যবোধ ও নৈতিকতা অর্জন করতে পারবে। আর এই সবকিছুর মধ্য দিয়ে যে যোগ্যতা অর্জিত হবে তার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী হয়ে উঠবে জাতীয়তাবোধসম্পন্ন বিশ্বনাগরিক। ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের যোগ্যতাসমূহ নির্ধারণ করার জন্য যে চারটি ডাইমেনশন বিবেচনায় নেয়া হয়েছে তাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে উল্লেখ করা হয়েছে : আত্মপরিচয় ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে নিজের পরিচয় নির্মাণ করা ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের একটি মূল প্রতিপাদ্য হওয়ায় সকল বিষয়কে সমন্বিতভাবে আয়ত্ত করার জন্য একে একটি ডাইমেনশন হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামো প্রাকৃতিক সামাজিক বিজ্ঞানের সকল বিষয়েরই কেন্দ্রীয় একটি বিষয় হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কাঠামোর বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান করা। প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের যোগ্যতা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তাই কাঠামোকে একটি ডাইমেনশন হিসেবে ধরা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, প্রাকৃতিক কাঠামো বলতে সাধারণত প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান ও ব্যবস্থা যেমন : নদী, সাগর, মহাসাগর, পর্বতমালা, মহাদেশ প্রভৃতিকে বোঝানো হয়ে থাকে। অন্য দিকে, সামাজিক কাঠামো বলতে সাধারণত পরিবার, ধর্ম, রীতিনীতি, সংস্কৃতি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান প্রভৃতিকে বোঝানো হয় । পরিবর্তনে ইতিবাচক ভূমিকা প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামো পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার ভিত্তিতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল । এই পরিবর্তনশীলতার বস্তুনিষ্ঠ প্যাটার্ন অনুসন্ধান করা সামাজিক বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপাদ্য বিষয়। যে কোন পরিবর্তনের ফলেই কিছু সম্ভাবনা ও ঝুঁকি তৈরি হয়। এই ঝুঁকি ও সম্ভাবনা বিবেচনা করে যথাযথ ইতিবাচক ভূমিকা নির্ধারণের যোগ্যতা অর্জন সামাজিক বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। এ বিবেচনায় পরিবর্তনে ইতিবাচক ভূমিকা নির্ধারণকে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের যোগ্যতা নির্ধারণের একটি ডাইমেনশন হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ উন্নয়নের জন্য সম্পদ একটি অপরিহার্য বিষয়। প্রকৃতির সম্পদ সীমিত। প্রকৃতিকে ব্যবহার করে সম্পদের উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ ও সংরক্ষণ অর্থাৎ সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণকে তাই ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের একটি ডাইমেনশন হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ===000=== তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Scroll to Top