10. মূল্যায়ন কার্যক্রমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতিমূলক নির্দেশনা প্রসঙ্গে।
Download Now
৫ম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রাথমিক নির্বাচনের ফলাফল
Download now
&&& অনলাইন জন্ম নিবন্ধন কি ও কেন &&&& ১. জন্ম নিবন্ধন কী? (এ সংক্রান্ত আইন/ নীতিমালা) জন্মের পর সরকারি খাতায় প্রথম নাম লেখানোই জন্ম নিবন্ধন। একটি শিশুর জন্ম নিজ দেশকে, বিশ্বকে আইনগতভাবে জানান দেয়ার একমাত্র পথ জন্মের পর জন্মনিবন্ধন করা। নবজাতকের একটি নাম ও একটি জাতীয়তা নিশ্চিত করতে এটি হচ্ছে প্রথম আইনগত ধাপ। জন্ম নিবন্ধন প্রতিটি শিশুসহ বয়স্কদেরও একটি অধিকার। এটি নাগরিক অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। পৃথিবীতে একটি শিশু জন্মানোর পর রাষ্ট্র থেকে প্রথম যে স্বীকৃতি সে পায় সেটি হলো জন্ম নিবন্ধন। দেশের অন্যান্য নাগরিকের সাথে সে সমান অধিকারে এক কাতারে সামিল হয় এই জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে। প্রথম জন্ম নিবন্ধনের অধিকার জাতিসংঘের শিশু সনদে (Convention on the Rights of the Child – CRC) স্পষ্ট উল্লেখ আছে। জন্ম নিবন্ধনের মধ্যদিয়ে একটি শিশু একটি ‘নাম’ লাভ করে যা সারাজীবন তাকে একটি পরিচিতি দেয়। জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে একটি শিশু প্রথম নাগরিকত্বও লাভ করে। জন্মসনদ অত্যাবশ্যকীয় করার লক্ষ্যে সরকার নতুন করে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন ২০০৪ প্রণয়ন করে। জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, শিশু অধিকার সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে আইনটি ৩ জুলাই. ২০০৬ থেকে কার্যকর করা হয়েছে। জন্ম নিবন্ধন আইনে বলা হয়েছে, বয়স, জাতি-গোষ্ঠি, ধর্ম-কিংবা জাতীয়তা সকল নির্বিশেষে বাংলাদেশে জন্ম গ্রহণকারী প্রত্যেকটি মানুষের জন্য জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষে জন্মনিবন্ধন কর্তৃপক্ষ নিবন্ধনকারীকে একটি সার্টিফিকেট দেবেন। সরকার ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক জন্মনিবন্ধন কৌশল প্রণয়ন করেছে যা চলতি ২০১০ সালের শেষ নাগাদ চূড়ান্ত হয়ে যাবে। ২. জন্মনিবন্ধনের গুরুত্ব কী? কেন জন্ম নিবন্ধন করতে হবে? জন্মনিবন্ধনের গুরুত্বঃ ২০০৯ সাল থেকে ১৬টি মৌলিক সেবা পেতে জন্মসনদ প্রয়োজন হবে। বয়স প্রমানের জন্য নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রে জন্ম সনদ বা উহার সত্যায়িত ফটোকপি ব্যবহার করতে হবে। এর মধ্যে আছে- ০১ পাসপোর্ট ইস্যু; ০২ বিবাহ নিবন্ধন; ০৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি; ০৪ সরকারী, বেসরকারী ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগদান; ০৫ ড্রাইভিং রাইসেন্স ইস্যু; ০৬ ভোটার তালিকা প্রণয়ন; ০৭ জমি রেজিষ্ট্রেশন; ০৮ ব্যাংক একাউন্ট খোলা; ০৯ আমদানী বা রপ্তানী বা উভয় লাইসেন্স প্রাপ্তি; ১০ গ্যাস, পানি, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তি; ১১ করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) প্রাপ্তি; ১২ ঠিকাদারী লাইসেন্স প্রাপ্তি; ১৩ বাড়ির নক্সা অনুমোদন; ১৪ গাড়ি রেজিষ্ট্রেশন; ১৫ ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি; ১৬ জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি; জন্মসনদ থাকলে বাল্যবিবাহের সুযোগ থাকবে না। শিশুশ্রম বন্ধ হবে। ১ জানুয়ারি, ২০০৯ থেকে উল্লিখিত যে কোন সেবা পেতে জন্মসনদ দেখাতে হচ্ছে। [বি: দ্র: এই আইনের বিধান বা তদধীন প্রণীত বিধি লংঘনকারী নিবন্ধক বা কোন ব্যক্তি অনধিক ৫০০.০০ (পাঁচশত) টাকা অর্থদন্ডে অথবা অনধিক দুইমাস বিনাশ্রম কারাদন্ডে অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন। – ধারা-২১, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪] কেন জন্ম নিবন্ধন করতে হবেঃ জন্ম নিবন্ধনের একটি তাৎপর্য আছে। জন্ম নিবন্ধন হলো একটা মানুষের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। রাষ্ট্র এইভাবে স্বীকার করছে যে, হ্যাঁ,তুমি শিশু রূপে এ রাষ্ট্রের একজন ভবিষ্যৎ নাগরিক হয়ে এসেছো। তোমাকে এ রাষ্ট্রের স্বীকৃত নাগরিকের মর্যাদা ও সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। তোমাকে স্বাগতম। সুতরাং ভবিষ্যতে রাষ্ট্র থেকে যেকোনো সুযোগ-সুবিধা পেয়ে পূর্ণাঙ্গ ও প্রতিষ্ঠিত মানুষ হওয়ার প্রয়োজনে জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন রয়েছে। জন্ম নিবন্ধন না করালে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া যায় না। মর্যাদা পাওয়া যায় না। সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না। আইনগত সমস্যার সমাধান করা যায় না ইত্যাদি । এসব কারণে জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। ৩. জন্ম নিবন্ধন করলে কী কী সুবিধা হয়? না করলে কী কী অসুবিধা হয়? জন্ম নিবন্ধন করলে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে সুবিধা হয়ঃ জন্ম নিবন্ধন করা থাকলে একজন শিশু বা একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ বহু ধরনে সুবিধা পেতে পারেন। চাহিদামতো প্রকৃত বয়স প্রমাণ করা যায় জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র দিয়ে। যেমন- শিশুদের স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় প্রকৃত বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র জমা দিতে হয়। না হলে স্কুলে ভর্তি করানো যায় না। বিদেশ ভ্রমন করতে হলে আমাদের পাসপোর্ট করতে হয়। পাসপোর্ট করতে গেলেও প্রকৃত বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র জমা দিতে হয়। না হলে পাসপোর্টই করা যায় না। নতুন ভোটার হতে হলে বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হয়। এ বয়স প্রমাণের জন্যও জন্মনিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। সরকারী-বেসরকারী সব ধরনের চাকুরীর ক্ষেত্রে বয়স প্রমাণের জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। বিয়ে করতে গেলেও জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। কারণ ছেলের বয়স ২১ বছর ও মেয়ের ১৮ বছর পূর্ণ না হলে কাজী বিয়ে পড়ান না। সেটা আইনসঙ্গতও নয়। সুতরাং জন্ম নিবন্ধন সনদ না হলে বিয়েতেও বাধা আসে। শিশুর প্রকৃত বয়স নির্ণয় করা যায় শুধুমাত্র তার জন্ম নিবন্ধন সনদ থেকে। তাই আদালতেও অনেক সময় শিশুদের বিরম্নদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ থেকে সহজে খালাস করা যায় একমাত্র জন্ম নিবন্ধন সনদের সাহায্যে। মৌলিক জনসংখ্যা তথ্য জানা যায় জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রমের ফলাফল থেকে। তাই জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ও এগুলোর মনিটরিং এর ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ যথেষ্ট সহায়তা করে। শিশুসহ সকল নাগরিকের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র থাকা একটি মর্যাদার বিষয়। এ সনদ একজন মানুষকে রাষ্ট্রের গর্বিত নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং পারস্পরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতেরও ব্যবস্থা করে। জন্ম নিবন্ধনকৃত শিশুরা রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে বেড়ে উঠতে পারে এবং দারিদ্র্য মুক্তির পথ খুঁজে পায়। তারা অন্যায়ভাবে কোনো ব্যক্তিবিশেষ বা সমাজের কোনো গোষ্ঠি দ্বারা শোষণ, লাঞ্জনা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বা পাচার থেকে রেহাই পায়। জমি-জমা ক্রয় ও বিক্রয়ের সময়ও জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়। জটিল কোনো চিকিৎসা দেয়ার সময়ও (অপারেশন, থেরাপি), জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়। সরকারী সুযোগ-সুবিধা যেমন শিশু খাদ্য, ফ্রি চিকিৎসা, বয়স্ক ভাতা, খাসজমি ও জলমহল বরাদ্দ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। ব্যবসা বাণিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও একজন ব্যবসায়ীর জন্ম সনদ প্রয়োজন হয়। জন্ম নিবন্ধন না করলে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে সমস্যা বা অসুবিধা হয় জন্ম নিবন্ধন না করালে আধুনিক রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে যেসব সমস্যা হয় তা নিম্নরুপঃ- শিশু হিসেবে শিশুদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয়। যেমন- মেধাবী হওয়া সত্বেও ভালো একটা স্কুলে ভর্তি হওয়া যায় না। সঠিক সময়ে সঠিক ও উন্নতমানের চিকিৎসা পাওয়া যায় না। নিরাপত্তাসেবা থেকে বঞ্চিত হতে হয় শিশুদের। আদালতে মিথ্যা অভিযোগ প্রমাণের জন্যও প্রকৃত বয়স প্রমাণ করতে না পারার কারণে অনেক শিশুকে বছরের পর বছর জেল বা হাজতে থাকতে হয়। পাসপোর্ট করা যায় না। তখন প্রয়োজন সত্বেও বিদেশে যাওয়া যায় না। ভোটার হওয়া যায় না। তখন রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি নির্বাচনে নিজের পছন্দ/ অপছন্দ প্রয়োগ করা যায় না। যোগ্যতা সত্বেও ভালো চাকুরীতে যোগদান করা যায় না। বিয়ের মতো সামাজিক কাজেও বাধা আসে। রাষ্ট্র জনগণের জন্য প্রয়োজনমত সেবা দিতে পারে না। জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকায় শিশুরা লেখাপড়া থেকে দূরে ছিটকে পড়ে বিপদগামী হয়। পরে সমাজের বোঝা হয়ে পড়ে। জটিল চিকিৎসা নেয়া যায় না। তখন অনেক সময় জীবনহানিও ঘটে। জমি-জমা ক্রয়-বিক্রয় করা যায় না। সরকারী-বেসরকারী সেবা ও সম্পদের বরাদ্দ পাওয়া যায় না। ব্যবসা-বাণিজ্য ভালোভাবে করা যায় না। ৪. কখন জন্ম নিবন্ধন করতে হয়? আইন অনুসারে সদ্যজাত শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে
ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন’২০২৪ এর জন্য নির্ধারিত শিখন অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত নির্দেশনা
ড. এম তারিক আহসান স্মার্ট দেশের স্বপ্ন ছোঁয়ার আকাঙ্ক্ষায় রূপান্তরহাজার বছরের বৈশ্বিক ইতিহাসে শিক্ষাধারার বড় বড় রূপান্তরের প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় যুগে যুগে। এসব রূপান্তরের পেছনে কাজ করেছে বিভিন্ন ভূরাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব। কখনো এ রূপান্তর ঘটেছে পুরো পৃথিবীতে, কখনো হয়তো কোনো নির্দিষ্ট ভূখন্ডে। বর্তমান বিশ্ব শিক্ষাধারার একটি বড় রূপান্তরের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা রূপান্তর কার্যক্রম বৈশ্বিক পরিবর্তনেরই অংশ। বৈশ্বিক পরিবর্তনের আলোকে বাংলাদেশের শিক্ষায় রূপান্তরকে নিজেদের মতো করে বাস্তবে রূপ দিতে হলে চাই অতীতকে ফিরে দেখা, বর্তমানকে উপলব্ধি করা এবং ভবিষ্যৎকে অনুধাবন করা। বাংলাদেশ যে স্বপ্ন ছোঁয়ার আকাক্সক্ষা ধারণ করেছে, তা বাস্তবে রূপ দিতে শিক্ষাব্যবস্থার রূপান্তরের এখনই সঠিক সময়! কারণ ২০২৩-এ যে শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হলো, সে হবে ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশে ২৪ বছরের স্মার্ট নাগরিক। বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা রূপান্তর কার্যক্রম নিজেদের মতো করে সাজানোর প্রয়োজনে প্রথমেই শিকড়ের অনুসন্ধান করে দেখা যাক। বাংলায় মানব বসবাসের ইতিহাস হাজার বছরের। প্রাচীন বাংলার শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো গড়ে উঠে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর ভিত্তি করে। তবে সেই শিক্ষা কাঠামো শুধু ধর্মীয় শিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হয়নি। প্রাচীন বাংলার মানুষ পরিচালিত শিক্ষা কাঠামোতে পরাবিদ্যা/অধ্যাত্মবাদ ও অপরাবিদ্যা/পার্থিব বৈষয়িক শিক্ষা প্রচলিত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে সম্রাট অশোকের সময়ে এসে বৌদ্ধধর্মের ব্যাপক প্রসারের সময় বাংলার স্তরভিত্তিক গণশিক্ষা কাঠামো গড়ে ওঠার প্রমাণ মেলে যেখানে প্রাথমিক (০-১৬ বছর) ও পঞ্চবিদ্যার (১৬ বছরের ওপরের শিক্ষার্থী) প্রসার ঘটে। পরে সেন আমল, মুসলিম সুলতানি ও মুঘল আমলে শিক্ষায় যুগের চাহিদা পূরণে নতুন নতুন বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি এবং ধীরে ধীরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার স্তরবিন্যাস করা। প্রাচীন বাংলার শিক্ষার কাঠামো হিসেবে টোল, গুরুগৃহ, পাঠশালা, গুরুকুল, মক্তব, মাদ্রাসার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছিল এলাকাভিত্তিক। ছিল না কোনো বয়সের বাধা, সময়ের বাধা কিংবা সুনির্দিষ্ট শিক্ষাক্রম। শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী মিলে শিক্ষাক্রম নির্ধারণ করতেন, তা হতো এলাকার চাহিদাভিত্তিক ও কর্মমুখী এবং এলাকার মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণে এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হতো। সুখময় সেনগুপ্ত তার বঙ্গদেশীয় ইংরেজি শিক্ষা বইয়ে বাংলায় ধর্ম প্রচারক উইলিয়াম ওয়ার্ডের (১৮০৩) রিপোর্ট অনুযায়ী বলেন, ‘বাংলার সব গ্রামেই সাধারণ বিদ্যালয় খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।’ প্রাচীন বাংলার শিক্ষা কাঠামো এবং তার রূপান্তর প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ কাঠামো অনেক নমনীয়, জীবনমুখী, প্রয়োগমুখী, এলাকাভিত্তিক, অংশগ্রহণমূলক এবং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তনধর্মী ছিল। এরকম একটি শিক্ষা কাঠামো বাংলার মানুষের উন্নয়নে কেমন ভূমিকা রাখতে পেরেছে? বাংলার শিক্ষা মডেল বিশ্বকে ব্রহ্মগুপ্ত, আর্যভট্টর মতো গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ উপহার দিয়েছে। এই শিক্ষা মডেল যেহেতু এলাকাভিত্তিক এবং জীবনমুখী ছিল তাই বাংলার মানুষ সামাজিক মূল্যবোধ চর্চার পাশাপাশি মসলিন, কটন, ই¯পাত, কৃষিপণ্য, অলংকার, লবণ ইত্যাদি রপ্তানি করত এবং এ কারণে বাংলার সঙ্গে বৈশ্বিক যোগাযোগ ছিল প্রাচীনকাল থেকে। এখানে বলা প্রয়োজন যে, প্রাচীন ভারতের কর্মকা- বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রায় ৩০ শতাংশ অবদান রাখত, যার অর্ধেক আসত বাংলা থেকে। কাজেই প্রাচীন বাংলার শিক্ষা কাঠামো বাংলাকে একটি সমৃদ্ধ জনপদ হিসেবে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ব্রিটিশ উপনিবেশ দুইশ বছর শাসন করে যখন বাংলা ছেড়ে যায় তখন বাংলার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৈশ্বিক বিবেচনায় মাত্র ৩ শতাংশে নেমে আসে। ব্রিটিশ উপনিবেশ বাংলাকে দুইশ বছর শাসন করার মতো পরিবেশ তৈরি করার জন্য শুরুতেই শিক্ষা কাঠামোতে রূপান্তরের কাজে হাত দেয়। বাংলার সমৃদ্ধ শিক্ষা কাঠামো ভেঙে ব্রিটিশ কলোনিয়াল পাবলিক এডুকেশন মডেল স্থাপনের উদ্দেশ্যে অ্যাডাম রিপোর্ট (১৮৩৫); উড এডুকেশন ডেসপাচ (১৮৫৪) এবং হান্টার কমিশন রিপোর্ট (১৮৬২) প্রভৃতির মাধ্যমে প্রাচীন বাংলার শিক্ষা কাঠামোর নমনীয়তা, এলাকাভিত্তিক মডেল এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনানুষ্ঠানিক স¤পর্ক নিয়ে তীব্র সমালোচনা করা হয়। শিল্প বিপ্লবের সময়কালীন ব্রিটিশ সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় জনশক্তি তৈরি এবং ঔপনিবেশিক আমলের অনুগত মানুষ তৈরির উদ্দেশ্যে এমন একটি জনগোষ্ঠী প্রয়োজন ছিল যারা তাদের এলাকাভিত্তিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ভুলে যাবে, প্রশ্ন করবে না, বিতর্ক করবে না, যুক্তি দেবে না, নিজের মত প্রকাশ করবে না। কাজেই তারা সেই লক্ষ্য সামনে নিয়েই একটি নিয়মে আবদ্ধ, কেন্দ্রপরিচালিত, বইনির্ভর, মুখস্থনির্ভর, পরীক্ষাভিত্তিক, নম্বরভিত্তিক একটি শিক্ষাব্যবস্থা দেশব্যাপী চালু করল। ব্রিটিশ শিক্ষা রূপান্তর ছিল বাঙালি জাতিসত্তার ওপর বড় ঔপনিবেশিক আঘাত। বিগত কয়েক শতকে উন্নয়নশীল দেশগুলো শিল্পবিপ্লবের সময় ও ঔপনিবেশিক শিক্ষা মডেলই অনুসরণ করে এসেছে, মূলত শ্রমবাজারকে সামনে রেখে, শ্রমিক ও ভোক্তা হিসেবে মানুষকে তৈরি করাই ছিল যার মূল উদ্দেশ্য। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের অধীনে পূর্ব বাংলার শিক্ষা কাঠামোর রূপান্তর প্রচেষ্টা ছিল বাঙালি জাতিসত্তার ওপর নব্য ঔপনিবেশিক আঘাত। এ রূপান্তরে মূল আদল অর্থাৎ ঔপনিবেশিক শিক্ষা মডেল ঠিক রেখেই তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল এ ভূখন্ডের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ভাষাগত বৈশিষ্ট্য দুর্বল করে দিয়ে এবং বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারকে সংকুচিত করে একটি পশ্চাৎপদ ও অধীন জাতিগোষ্ঠীতে রূপান্তরিত করা। বাঙালি জাতিসত্তার অস্তিত্ব পুনরুদ্ধারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশ হওয়ার শুরু থেকেই পূর্ব বাংলা নাম প্রস্তাবের মাধ্যমে এ ভূখন্ডের মানুষের পরিচিতি ও অধিকারের দাবি নিয়ে সোচ্চার হন। পরে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, পশ্চিম পাকিস্তানের কূটকৌশল আরও ¯পষ্ট করে। এ জাতিকে শিক্ষাবিমুখ করা এবং বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে যাতে গড়ে না ওঠে, সেই উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৫৮ সালে শরিফ কমিশন রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়, যার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও কলা ইত্যাদি বিভাগ বিভাজনের সূচনা হয়। এরপর থেকেই বিজ্ঞান শিক্ষায় শহর-গ্রাম বৈষম্য, জেন্ডার বৈষম্য এবং তথাকথিত মেধাবী-অমেধাবী বৈষম্যর সূচনা হয়। এর ফলে ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম দাবি ছিল একমুখী শিক্ষাধারা ফেরত আনা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটার পরই তিনি প্রথমেই যে কাজটিতে মনোনিবেশ করেন সেটি হলো শিক্ষা রূপান্তর। ড. কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন (১৯৭৪) রিপোর্টের মাধ্যমে পুনরায় বিভাগ বিভাজন তুলে দিয়ে একমুখী শিক্ষা প্রবর্তন করে একটি বিজ্ঞানমনস্ক জাতি তৈরি করা, মুখস্থনির্ভর শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ার বদলে অংশগ্রহণমূলক, অনুসন্ধানী শিখনের মাধ্যমে সৃজনশীল জাতি তৈরি, শহর-গ্রামের বৈষম্য দূর করার জন্য প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণ, উচ্চশিক্ষায় মুখস্থনির্ভরতা ও সার্টিফিকেটমুখী কমিয়ে গবেষণার পরিবেশ তৈরির জন্য ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স জারি করে মুক্তবুদ্ধি ও সৃজনশীলতার চর্চার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের শিক্ষা রূপান্তর প্রক্রিয়া আর আলোর মুখ দেখেনি। ১৯৭৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশে বেশ কিছু শিক্ষা কমিশন এবং শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণীত হয়। এগুলোর মাধ্যমে শিক্ষায় ছোট ছোট সংস্কার করার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু শিক্ষায় রূপান্তরের মতো কোনো প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়নি। মূলত ঔপনিবেশিক শিক্ষা মডেলকে ঠিক রেখেই শিক্ষার্থীদের গভীর চিন্তন প্রক্রিয়ার উন্নয়ন ঘটানোর জন্য বহুনির্বাচনী প্রশ্ন, কাঠামোবদ্ধ সৃজনশীল প্রশ্ন চালু করা হয়, কিংবা স্বল্প নম্বরের বিদ্যালয়ভিত্তিক মূল্যায়ন চালু করে মুখস্থনির্ভর লিখিত পরীক্ষার বিধান চালু করা হয়। যার ফলে প্রায় দুইশ বছর আগের ঔপনিবেশিক আমলে প্রতিষ্ঠিত সেই নিয়মে আবদ্ধ, কেন্দ্রপরিচালিত, বইনির্ভর, মুখস্থনির্ভর, পরীক্ষাভিত্তিক, নম্বরভিত্তিক শিক্ষাব্যাবস্থারও কোনো মৌলিক পরিবর্তন ঘটেনি। বাংলাদেশে ঔপনিবেশিক শিক্ষা মডেলকে পরিচালনা করে গুণগতভাবে আমরা আসলে কী অর্জন করছি? সরকারের প্রাথমিক পর্যায়ে জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়ন (২০২২) রিপোর্ট অনুযায়ী প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ৫০ শতাংশ বেশি ভাষা ও যোগাযোগ যোগ্যতা এবং দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী গাণিতিক যোগ্যতা অর্জন
MPO হচ্ছে Monthly Pay order । MPO ভুক্ত করনের মাধ্যমে বেসরকারি পর্যায়ের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় বিভিন্ন ধরনের নিয়োগ, পদোন্নতি এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের মাসিক বেতন কার্যকর করা হয়। মান্থলি পেমেন্ট ওর্ডারে (এমপিও) অন্তর্ভূক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা বেতন-ভাতাদির সুবিধা পান না। MPO ভুক্ত করণের সুবিধাঃ -এমপিও ভুক্ত হলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা তাঁদের মূল বেতনের পুরোটাই সরকারি কোষাগার থেকে প্রাপ্ত হবেন। – এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা অন্যান্য সরকারী কর্মচারীদের মত মহার্ঘ্যভাতা, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও উৎসবভাতা পাবেন। – যে সকল প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্ত হবে সেসকল প্রতিষ্ঠানের কমকর্তা ও কর্মচারীরা পর্যায়ক্রমিক ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হওয়ার বেতন কাঠামোর আওতায় আসবে। – কেবল মাত্র এমপিও ভুক্ত হবার পরেই চাকরির স্থায়িত্ব নিশ্চিত হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যমান এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ প্রতি মাসে রাষ্ট্রের ব্যয় হয় ৬০০ কোটির কিছু বেশি টাকা। নতুন স্কেলে বেতন দেয়া হলে প্রতি মাসে আরও প্রায় ৪০০ কোটি টাকা লাগবে। নতুন স্কেল পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হলে এমপিওভুক্ত কলেজের একজন প্রভাষকের মূল বেতন হবে ২২ হাজার টাকা (নবম গ্রেড)। বর্তমানে তাঁরা ১১ হাজার টাকা পাচ্ছেন। সহকারী অধ্যাপকরা পাবেন ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা (ষষ্ঠ গ্রেড)। এখন পাচ্ছেন ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। আর অধ্যক্ষদের হবে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এখন পাচ্ছেন ২৫ হাজার ৭৫০ টাকা। আর বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের মূল বেতন হবে দশম গ্রেডে ১৬ হাজার টাকা। এখন পাচ্ছেন ৮ হাজার টাকা। জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকের বেতন হবে ২২ হাজার টাকা (নবম গ্রেড)। এখন পান ১১ হাজার টাকা।
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের আওতাধীন সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির ৬ষ্ঠ হতে ১২শ ও সমমান শ্রেণির উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অনলাইন ব্যাংক হিসাব এবং ‘নগদ’ একাউন্ট ব্যতীত অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টসমূহ ‘নগদ’-এ রূপান্তর করার সময় বৃদ্ধিকরণ প্রসঙ্গে।