City of Education

Author name: Naryan Ch. Das

Uncategorized

যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম (Competency-based education )

২.৪.১ শিক্ষার্থীর কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা নির্ধারণের প্রেরণা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা চেতনা হলো আবেগিক ও সামাজিক বুদ্ধিমত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপট, সময় ও পরিস্থিতিতে ব্যক্তিক মূল্যবোধ, আবেগ, দৃষ্টিভঙ্গি, প্রবণতা, গুণাবলি, বৈশিষ্ট্য প্রভৃতির সমন্বয়ে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সে অনুযায়ী আচরণ করতে প্রেরণা যোগায়। সেই আলোকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শিক্ষাক্রম রূপরেখার সকল ধারণা নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রমের মূলভিত্তি হলো মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত চেতনা ও স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি। এই শিক্ষাক্রম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও তার মূল ভিত্তিসমূহকে নিম্নবর্ণিতভাবে ধারণ করেছে : সাম্য : ভিন্নতা, বৈচিত্র্য ও শ্রেণিনির্বিশেষে সবাইকে সম্মান ও গ্রহণ করে ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রেক্ষিত বিবেচনায় সকলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা এবং তা বজায় রাখাই হচ্ছে সাম্য। মানবিক মর্যাদা : মানবিক মর্যাদা হচ্ছে প্রতিটি মানুষের সম্মান এবং আত্মমর্যাদা যা স্থান, কাল, পরিস্থিতিভেদেও অক্ষুণ্ণ থাকে । মানবিক মর্যাদা মানবাধিকারের মূলভিত্তি যার প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব এবং যা কোনোভাবেই স্থগিত করা যায় না। প্রতিটি মানুষের ন্যূনতম সম্মান এবং মর্যাদা নিশ্চিত করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনালব্ধ অঙ্গীকার । সামাজিক ন্যায়বিচার : মানবিক মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে মানবাধিকার, সংবিধান, আইন, ধর্ম ও সংস্কৃতির আলোকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সামাজিক সহাবস্থান নিশ্চিত করাই সামাজিক ন্যায়বিচার। শ্রেণি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, লিঙ্গ, সামাজিক, রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সকলের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অঙ্গীকার। বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে নিম্নবর্ণিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে; ৮ । [(১) জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা- এই নীতিসমূহ এবং তৎসহ এই নীতিসমূহ হইতে উদ্ভূত এই ভাগে বর্ণিত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে ।] জাতীয়তাবাদ [৯। ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালী জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি। ] সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তি [১০। মানুষের উপর মানুষের শোষণ হইতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজলাভ নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে।] গণতন্ত্র ও মানবাধিকার [১১। প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে ১২[* * *] ১৩ [এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে]। ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা [১২ । ধর্ম নিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য (ক) সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা, (খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান, (গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার, (ঘ) কোন বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন, বিলোপ করা হইবে।] ভবিষ্যত প্রজন্মকে দেশপ্রেমিক ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিতে অনুপ্রাণিত উদ্যোগী ও উৎপাদনক্ষম জনগোষ্ঠীতে রূপান্তর করা প্রয়োজন। একইসাথে আত্মপরিচয় বহাল রেখে অভিযোজনে সক্ষম বিশ্বনাগরিক হিসেবে প্রস্তুত করার জন্যও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। শিক্ষাক্রম রূপরেখায় যোগ্যতার বিভিন্ন উপাদানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিন্যস্ত করা হয়েছে। তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Uncategorized

মাধ্যমিক স্তর (একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি) Secondary level (Grade 11-12)

ব্যক্তি তাঁর চারপাশের প্রকৃতি, পরিবেশ, সমাজ, সংস্কৃতির বাইরে পৃথক কোনো সত্তা নয় বরং এসব কিছুর মিথষ্ক্রিয়ায় গড়ে ওঠা একজন পরিপূর্ণ মানুষ । তাই শিক্ষার্থীর পরিপূর্ণ বিকাশে জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ ও নৈতিকতার পাশাপাশি কর্মজীবনের সঙ্গেও শিক্ষাকে সংগতিপূর্ণ করতে হবে। আমাদের প্রচলিত শিক্ষায় মাধ্যমিক স্তরের শেষ পর্যায় একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি । এই স্তরের শিক্ষার্থীর বয়স সাধারণত ১৬ থেকে ১৮ বছর। শিক্ষার্থীর জীবনে এই দুইটি বছর অন্তবর্তীকাল হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ এই পর্যায় শেষে শিক্ষার্থী স্নাতক বা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পায়, আবার একটি বড় অংশের শিক্ষার্থী কর্মজাতে প্রবেশ করে। তাই যারা স্নাতক স্তর কিংবা কর্মজগতে প্রবেশ করবে তাঁদের জন্য এ স্তরের শিক্ষাক্রম এমনভাবে বিন্যস্ত করা হবে যেন তাদের অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি উচ্চ শিক্ষা এবং ভবিষ্যত কর্মজাতের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়। পাশাপাশি পরিবর্তনশীল বিশ্বে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে যাতে সে ইতিবাচক ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে সেই উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বিষয় নির্ধারণ এই স্তরকে বিশেষায়নের জন্য প্রস্তুতির স্তর হিসেবে বিবেচনা করা হয় । এই স্তরে অনেক শিক্ষার্থীকে যেমন উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হয় আবার অনেক শিক্ষার্থীকে পরিস্থিতি বিবেচনায় কর্মজগতে প্রবেশের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে যেন সে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং ব্যক্তিক, সামাজিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যাতে সে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে সে উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে সকল শিক্ষার্থীর জন্য এই স্তরে আবশ্যিক একাধিক বিষয় থাকবে। প্রতিটি আবশ্যিক বিষয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষাক্রম রূপরেখায় চিহ্নিত এক বা একাধিক শিখন-ক্ষেত্রের প্রতিফলন থাকবে। যেহেতু একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিখনের সার্বিক উদ্দেশ্য বিশেষায়নের জন্য প্রস্তুতি তাই নৈর্বাচনিক বিশেষায়িত বিষয়সমূহের জন্য এই স্তরে অধিক গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। শিক্ষার্থী তাঁর আগ্রহ, সামর্থ্য ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনটি বিশেষায়িত বিষয় নির্বাচন করতে পারবে। জীবন ও জীবিকা শিখন-ক্ষেত্রের আলোকে শিক্ষার্থীরা যেন আত্ম-কর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ হয় তার জন্য পেশাদারি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য প্রায়োগিক বিষয়সমূহ নির্বাচন করা যাবে। নির্বাচিত প্রায়োগিক বিষয়সমূহ থেকে ঐচ্ছিক হিসেবে যেকোনো একটি বিষয় নেয়া যাবে। এক্ষেত্রে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির জীবন ও জীবিকা বিষয়ে কর্মজীবনের পরিকল্পনা প্রণয়ন সংক্রান্ত বয়সোপযোগী যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যেন শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে তাদের আগ্রহ, ইচ্ছা, সক্ষমতা অনুযায়ী ভবিষ্যতের পরিকল্পনার মাধ্যমে বিষয় ও পথ নির্ধারণ করতে পারে । উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বিষয় নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে সংক্ষেপে নিচে দেয়া হলো আবশ্যিক বিষয় : একাধিক শিখন-ক্ষেত্রসমূহের ভিত্তিতে নির্ধারিত ৩টি বিষয় যা সকল শিক্ষার্থীর জন্য আবশ্যিক হবে। নৈর্বাচনিক বিষয় : প্রচলিত সাধারণ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষার নৈর্বাচনিক, আবশ্যিক বিষয়সমূহ উন্মুক্ত রেখে বা প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে বিষয়গুচ্ছ নির্বাচন করা যেতে পারে। নির্বাচিত বিষয়গুচ্ছ থেকে একজন শিক্ষার্থীকে তার আগ্রহ ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ী যেকোনো তিনটি বিষয় নির্বাচন করার সুযোগ দেয়া যেতে পারে । প্রায়োগিক বিষয় (ঐচ্ছিক) : পেশাদারি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য নির্ধারিত বিষয়সমূহ থেকে শিক্ষার্থীকে তার আগ্রহ ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ী যেকোন একটি বিষয় বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়া যেতে পারে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির আবশ্যিক, নৈর্বাচনিক এবং প্রায়োগিক বিষয়সমূহের প্রকৃতি ও বিন্যাস একাদশ দ্বাদশ শ্রেণিতে মোট ভরের তিন চতুর্থাংশ বিশেষায়িত বিষয়সমূহের জন্য এবং এক চতুর্থাংশ ভর আবশ্যিক বিষয়সমূহের জন্য বরাদ্দ থাকবে। এই পর্যায়ে বিশেষায়িত বিষয়সমূহ যেহেতু বেশি প্রাধান্য পাবে, সেহেতু এ বিষয়সমূহের বিন্যাস এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে আবশ্যিক বিষয়সমূহের প্রকৃতি ও পরিসর নির্দিষ্ট করার পরে বিষয়ভিত্তিক শিখনযোগ্যতাসমূহ নির্ধারণ করা হবে। আবশ্যিক এক বা একাধিক বিষয়ে বিভিন্ন শিখন- ক্ষেত্রের সমন্বয় থাকতে পারে । আবশ্যিক বিষয়সমূহ কোন নির্দিষ্ট শিখনক্ষেত্রভিত্তিক না হয়ে বরং বিভিন্ন শিখন-ক্ষেত্রের নির্বাচিত শিখনযোগ্যতার সমন্বয়ে উন্নয়ন করা যেতে পারে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত নির্দিষ্ট শিখনক্ষেত্র বা বিষয়ের প্রাধান্য রেখে বিষয়সমূহ যেভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বিষয়সমূহ তা না হয়ে বরং বৈচিত্র্যময় হবে বিধায় রূপরেখার বিষয় ও শ্রেণিভিত্তিক যোগ্যতার বিবরণী ও শিখনক্রমে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিখনযোগ্যতাসমূহ উল্লেখ করা হয়নি। তবে পরবর্তীতে এই বিষয়গুলোর শিখনক্রম বিন্যাসের সময় দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন শিখনক্ষেত্রের অর্জিতব্য শিখনযোগ্যতাসমূহের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। নৈর্বাচনিক বিষয়ের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীকে তার আগ্রহ ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ী যেকোনো তিনটি বিষয় নির্বাচন করার সুযোগ দেয়া হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির কোন একটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের শিখনযোগ্যতা প্রণয়নের সময় দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন শিখনক্ষেত্রের অর্জিত শিখনযোগ্যতাসমূহ এবং ঐ বিষয়ের প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় যোগ্যতাসমুহ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট নৈর্বাচনিক বিষয়ের গভীরতা ও পরিসর বিন্যাস করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের পুর্বজ্ঞানের সাথে যৌক্তিক সমন্বয় করতে পারে, একইসাথে পরবর্তী উচ্চশিক্ষার সাথেও সামঞ্জস্য বিধান হয়। আবশ্যিক ও নৈর্বাচনিক বিষয়সমূহের বাইরেও একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে একটি প্রায়োগিক বিষয় ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে থাকবে। নির্ধারিত প্রায়োগিক বিষয়গুচ্ছ থেকে শিক্ষার্থী তার আগ্রহ ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ী যেকোন একটি বিষয় বেছে নেয়ার সুযোগ পাবে। প্রায়োগিক বিষয়ের শিখনক্রম প্রণয়নের সময়ও দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন শিখন-ক্ষেত্রের, বিশেষ করে জীবন ও জীবিকার, অর্জিত শিখনযোগ্যতাসমূহ এবং ঐ বিষয়ে কর্ম উপযোগিতার জন্য নির্ধারিত দক্ষতার পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তির সর্বশেষ অগ্রগতি এবং ভবিষ্যৎ কর্মজগতের চাহিদা ইত্যাদি বিবেচনায় বিষয়সমূহের পরিসর ও শিখনযোগ্যতা নির্ধারণ করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী একাদশ শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম প্রচলন করতে বেশ কয়েক বছর সময়ের প্রয়োজন । সেই সময়ে বিষয়সমূহের একাডেমিক বাস্তবতা, স্থানীয় ও বৈশ্বিক চাহিদা ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সকল বিষয়সমূহের শিখনক্রম বিন্যাস করা হবে। তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Uncategorized

মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে সমন্বয় (Coordination with madrasah education stream)

মাদ্রাসা শিক্ষা এই উপমহাদেশের প্রাচীনতম একটি ধারা। আমাদের দেশে এটি তার নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটি স্বতন্ত্রধারা হিসেবে প্রচলিত। মাদ্রাসা শিক্ষার বিশেষত্ব অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার মূলভিত্তির সাথে সামঞ্জস্য রেখেই মাদ্রাসা শিক্ষাধারা সাজানো হয়েছে। সেই লক্ষ্যে মাদ্রাসা শিক্ষাধারার ক্ষেত্রে বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলোই এই অধ্যায়ে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, সাধারণ শিক্ষাধারার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ দিকগুলোও মাদ্রাসার শিক্ষাক্রম উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও উন্নয়নের ভিত্তি দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবী এবং বিশ্বায়নের যুগে সুযোগ এবং সম্ভাবনার যেমন সাধারণীকরণ হয়েছে, তেমনি সকলের সামনের চ্যালেঞ্জ ও বাধাগুলোর ধরনও এক। ন্যূনতম অবশ্য অর্জনীয় দক্ষতাসমূহ না থাকলে সেসব চ্যালেঞ্জ ও বাধা মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া পরিবর্তনের বহুমাত্রিকতার কারণেও প্রতিনিয়ত খাপ খাইয়ে চলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতে এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সকল ধারার শিক্ষার্থীদেরই ন্যূনতম সাধারণ (Common) কিছু যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। ফলে বিভিন্ন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা পর্যালোচনা সাপেক্ষে বৈষম্য কমিয়ে এনে কতকগুলো অর্জনযোগ্য মূল যোগ্যতা সকলের জন্য নির্বাচন করা প্রয়োজন। এটি বিভিন্ন ধারার শিক্ষাব্যবস্থাকে সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে একটি কাঠামোতে আনতে সহায়তা দিয়ে থাকে । যে কোনো উদ্যোগ তার পূর্ববর্তী প্রেক্ষাপটকে স্মরণ করে অগ্রবর্তী হয়। মাদ্রাসা ধারার শিক্ষাব্যবস্থাও তার ব্যতিক্রম নয়। এর একটি সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্যপূর্ণ গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। মাদ্রাসা মুসলিম উম্মার বুনিয়াদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে যুগ যুগ ধরে পরিগণিত হয়ে আসছে। এর কারণ হলো, ইহলৌকিক এবং পারলৌকিক সফলতার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা সর্বদা সচেষ্ট ছিল। বস্তুতঃ ইসলাম ধর্মের উন্মেষ কালেই মাদ্রাসা শিক্ষার সূচনা ঘটে । হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) (uads lb (do ৩) হিজরতের পূর্বে মক্কার অদূরে অবস্থিত সাফা পাহাড়ের পাদদেশে ‘দারুল আরকাম’ এবং হিজরতের পর মসজিদে নববীর উত্তর-পূর্ব দিকে ‘সুফফা আবাসিক মাদ্রাসা’ ও ‘দারুল কুররা মাদ্রাসা’ স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে হযরত ওমর (রা.) সিরিয়ায় ও হযরত আলী (রা.) বসরা ও কুফায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। খোলাফায়ে রাশেদার সময়ে ইসলামী সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ৪০টিরও অধিক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলাম ধর্মের প্রসারের ধারাবাহিকতায় ৭১২ সালে মুহাম্মদ বিন কাসেমের সিন্ধু বিজয়ের মাধ্যমে উপমহাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার বিস্তার ঘটে। ১২০৪ সালে মুসলমানদের বঙ্গ বিজয় ও শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে বাংলায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয়। সুলতানী শাসনামলে (১২১০-১৫৭৬ খ্রিঃ) বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার পাঠ্যসূচিতে কুরআন, হাদিস, ফিকহ, আরবি, নাহু, সরফ, বালাগাত, মানতিক, কালাম, তাসাউফ, হিকমত ও দর্শন অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীকালে মাদ্রাসা শিক্ষাক্রম বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পরিমার্জিত ও আধুনিকীকরণ হয়। বিশেষভাবে মুঘল আমলে মাদ্রাসা শিক্ষাক্রমে ইসলামি বিভিন্ন বিষয়াদির সাথে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা পর্যায়ক্রমে যুক্ত হয়। এগুলোর মধ্যে চিকিৎসাবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, ভূগোল, হিসাববিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান, লোক প্রশাসন, জীববিদ্যা, পদার্থ, রসায়ন ও প্রাণিবিদ্যা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ভারত উপমহাদেশের উলামায়ে কেরাম ও সাধারণ মুসলমানদের সম্মিলিত দাবীর প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ শাসনের প্রথমদিকে দীর্ঘকাল সরকারি কাজে, বিশেষ করে দলিল-দস্তাবেজ ও আদালতের ভাষা ফার্সি থাকায় মাদ্রাসা শিক্ষা প্রায়োগিক গুরুত্ব লাভ করে। সে সময় মোল্লা মাজদুদ্দীন (মোল্লা মা’দান) রহ. এর নেতৃত্বে ‘কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা’ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে তা ব্রিটিশ সরকারের অনুমোদন লাভ করে । পরবর্তী কালে বাংলার বিভিন্ন স্থানে ‘কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা’র অনুসরণে নতুন নতুন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য যে, কলকাতা মাদ্রাসা ধারার বাইরেও বাংলায় বিভিন্ন ধারার মাদ্রাসা চালু ছিল। ব্রিটিশ সরকারের ১৯০৬ সালে গঠিত ‘মাদ্রাসা রিফোর্স কমিটি’ কর্তৃক ১৯১৪ সালে ‘রিফোর্সড মাদ্রাসা স্কীম’ নামে মাদ্রাসা শিক্ষাক্রমকে আধুনিকায়ন করার চেষ্টা করে এবং তা ফলপ্রসূ হয়। এখানে ইংরেজি ভাষা শিক্ষাকে আবশ্যিক করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিলো মক্তব এবং মাদ্রাসাগুলোকে আধুনিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মতো উন্নত মাত্রায় নিয়ে যাওয়া। এপ্রিল ১৯১৫ তে এটি কার্যকর হয়। মাদ্রাসা শিক্ষাক্রমের এই পরিমার্জন অধিকাংশরাই মেনে নিয়েছিলেন – যা ‘নিউ স্কীম’ নামে পরিচিত। অল্প কিছু সংখ্যক মাদ্রাসা তাদের পুরনো ধারাতেই আবদ্ধ ছিল। এ সকল মাদ্রাসার মধ্যে অন্যতম কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা যা ওল্ড স্কীমের আওতাভুক্ত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০শে মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকার মাঠে ভাষণে প্রদত্ত নির্দেশনার মাধমে মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে নতুনভাবে গতি সঞ্চার হয় । ১৯৮৪ সালে ‘মুস্তফা বিন কাসিম কমিটি’র সুপারিশের আলোকে বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষা স্তরের সাথে সামঞ্জস্য বিধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাকে কয়েকটি স্তরে বিভক্ত করা হয়। এভাবে বর্তমানে বাংলাদেশে সাধারণ শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষার মধ্যে সামঞ্জস্য গড়ে উঠেছে। ফলে বর্তমানে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষার্থীরা সাধারণ শিক্ষার সমমান পাচ্ছে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার জন্য কিছু সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছে। ইসলাম শিক্ষার সুযোগ তৈরির পাশাপাশি জীবনধারণ-সংক্রান্ত শিক্ষা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে পারদর্শী হয়ে শিক্ষার্থীরা যেন উৎকর্ষে ভূমিকা রাখতে পারে সে ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মাদ্রাসা শিক্ষাক্রম পরিমার্জনের পূর্ববর্তী সকল গবেষণা থেকে শিক্ষার্থীর উৎকর্ষ সাধনকল্পে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা পাওয়া গিয়েছে যা সাধারণ শিক্ষাধারার সাথে মাদ্রাসার শিক্ষাধারার সমন্বয়কে অনুপ্রাণিত করে। জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ২০১১ সালে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। ২০১৫ সালে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২.১৯.২ বিশেষায়িত ধর্মীয় শিক্ষাধারা হিসেবে রূপরেখায় উল্লিখিত রূপকল্প অর্জনের পাশাপাশি ইসলামি মূল্যবোধে সমৃদ্ধ তাকওয়াবান যোগ্য আলিম তৈরি করাও মাদ্রাসা শিক্ষাধারার অন্যতম উদ্দেশ্য। ২.১৯.৩ মাদ্রাসা শিক্ষাধারার ক্ষেত্রে শিক্ষাক্রমের রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত অভিলক্ষ্যসমূহের সাথে মাদ্রাসাকে ইসলামি আকিদা, আমল, আখলাক ও ইলম চর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। ২.১৯.৪ মাদ্রাসা শিক্ষাধারায় শিক্ষার্থীকে বিশ্বপরিস্থিতিতে টিকে থাকার মতো যোগ্য, তাকওয়াবান ও আধুনিক মানসিকতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে এবতেদায়ী থেকে আলিম শ্রেণি পর্যন্ত একটি অবিচ্ছিন্ন শিক্ষাক্রম উন্নয়নের উদ্যোগ জরুরি। এবতেদায়ী ও দাখিল-আলিম পর্যায়ের শিক্ষা সম্পন্ন করে একজন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণ করবে বা কর্মজীবনে প্রবেশ করবে। ২.১৯.৫ শিক্ষাক্রম রূপরেখায় বর্ণিত সংহতি, দেশপ্রেম, সম্প্রীতি, পরমতসহিষ্ণুতা, শ্রদ্ধা/সম্মান ও শুদ্ধাচার এই মূল্যবোধগুলোর পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষাধারার ক্ষেত্রে ইসলামি মূল্যবোধকে গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এই শিক্ষাধারা ইমান, আকিদা, আমল এবং আখলাক এর মধ্য দিয়ে ইসলামি মূল্যবোধকে ধারণ করে। ২.১৯.৬ শিক্ষাক্রম রূপরেখায় উল্লিখিত শিক্ষার্থীর কাক্ষিত দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মাদ্রাসা শিক্ষাধারায় যুক্ত হবে তাকওয়া। তাকওয়া বলতে আল্লাহর ভয় ও পরকালীন জবাবদিহিতাকে সামনে রেখে সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ জীবন যাপনকে বুঝানো হয়। ফলে একজন শিক্ষার্থী নিজ সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সকল সম্প্রদায়ের মানুষের বিশ্বাস, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতি সম্প্রীতি সংস্থাপন করতে উদ্যোগী হয়ে উঠবে। ২.১৯.৭ শিক্ষাক্রম রূপরেখায় শিক্ষার্থীর যেসব দক্ষতা নির্ধারণ করা হয়েছে তা মাদ্রাসা শিক্ষাধারায় সমভাবে প্রযোজ্য। ২.১৯.৮ মাদ্রাসা শিক্ষাধারায় যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এবতেদায়ি থেকে আলিম স্তর পর্যন্ত জাতীয় শিক্ষাক্রমে বর্ণিত দশটি মূল যোগ্যতা অর্জন করবে। স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার জন্য এই শিক্ষাধারা জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখায় বর্ণিত ‘ধর্মীয় অনুশাসন, সততা ও নৈতিক গুণাবলী অর্জন এবং শুদ্ধাচার অনুশীলনের মাধ্যমে প্রকৃতি ও মানব-কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারবে ’- যোগ্যতাটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইসলাম শিক্ষা শিখনক্ষেত্র হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। ইসলাম শিক্ষা শিখনক্ষেত্র অনুযায়ী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্বতা ও সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে সঠিক উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। যেমন : স্রষ্টা ব্যতীত সৃষ্টির অস্তিত্ব কল্পনাতীত হওয়ার উপলব্ধি। সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে কুরআন, সুন্নাহ ও

Uncategorized

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (SDG) 4 :

সকলের জন্য একীভূত ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি লক্ষমাত্রাসমুহ : ৪.১ ২০৩০ সালের মধ্যে সকল ছেলে ও মেয়ে যাতে প্রাসঙ্গিক, কার্যকর ও ফলপ্রসূ অবৈতনিক, সমতাভিত্তিক ও গুণগত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করতে পারে তা নিশ্চিত করা ৪.২ ২০৩০ সালের মধ্যে সকল ছেলে ও মেয়ে যাতে প্রাথমিক শিক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাসহ শৈশবের একেবারে গোড়া থেকে মানসম্মত বিকাশ ও পরিচর্যার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে তার নিশ্চয়তা বিধান করা ৪.৩ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভের সুযোগসহ সাশ্রয়ী ও মানসম্মত কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও উচ্চশিক্ষায় সকল নারী ও পুরুষের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা ৪.৪ চাকুরী ও শোভন কর্মে সুযোগলাভ এবং উদ্যোক্তা হবার জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক দক্ষতাসহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক দক্ষতাসম্পন্ন যুবক ও প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানো ৪.৫ অরক্ষিত (সংকটাপন্ন) জনগোষ্ঠীসহ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী, নৃ-জনগোষ্ঠী ও অরক্ষিত পরিস্থিতির মধ্যে বসবাসকারী শিশুদের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সকল পর্যায়ে সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং শিক্ষায় নারী-পুরুষের বৈষম্যের অবসান ঘটানো ৪.৬ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যুবসমাজের সবাই এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে সাক্ষরতা ও গণন-দক্ষতা অর্জনে সফলকাম হয় তা নিশ্চিত করা ৪.৭ অপরাপর বিষয়ের পাশাপাশি, টেকসই উন্নয়ন ও টেকসই জীবনধারার জন্য শিক্ষা, মানবাধিকার, নারী-পুরুষ সমতা, শান্তি ও অহিংসামূলক সংস্কৃতির বিকাশ, বিশ্বনাগরিকত্ব এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও টেকসই উন্নয়নে সংস্কৃতির অবদান সম্পর্কিত উপলব্ধি অর্জনের মাধ্যমে সকল শিক্ষার্থী যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে পারে তা নিশ্চিত করা ৪.ক শিশু, প্রতিবন্ধিতা ও জেন্ডার সংবেদনশীল শিক্ষা সুবিধার নির্মাণ ও মানোন্নয়ন এবং সকলের জন্য নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ, একীভূত ও কার্যকর শিক্ষা পরিবেশ প্রদান করা ৪.খ উন্নত দেশ ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, কারিগরি, প্রকৌশল ও বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মসূচিসহ উচ্চশিক্ষায় ভর্তির জন্য উন্নয়নশীল দেশ, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ, উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে প্রদেয় বৃত্তির সংখ্যা বৈশ্বিকভাবে ২০২০ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানো ৪.গ শিক্ষক প্রশিক্ষণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ, উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Uncategorized

কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ধারার সঙ্গে সমন্বয়

(Coordination with technical and Vocational education and training stream) দক্ষ জনশক্তি জাতীয় উন্নয়নের একটি অপরিহার্য উপাদান । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নতুন নতুন আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের ফলে বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন কৌশল ও পদ্ধতির দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবহন, উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ, দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত অসম ও প্রতিকুল প্রতিযোগিতার সম্মুখিন হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এ অসম প্রতিযোগিতায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে দ্রুত দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন। দেশের ভিতরে যেমন দক্ষ জনশক্তির চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই সাথে বিদেশেও দক্ষ জনশক্তির চাহিদা রয়েছে এবং ভবিষ্যতে এই চাহিদা আরো বাড়বে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকার বিবেচনায় একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে শিক্ষার্থীদের জীবন ও জীবিকার জন্য প্রস্তুত করতে সকল ধরনের শিক্ষা ধারায় মৌলিক (Foundational), রূপান্তরযোগ্য (Transferable) ও জীবিকা সংশ্লিষ্ট (Job Related) দক্ষতার অন্তর্ভুক্তি ও যথাযথ প্রতিফলন জরুরি। পাশাপাশি এক ধরনের সংগঠিত পথ-নির্দেশনাও প্রয়োজন যেন, যেকোনো ধারার শিক্ষার্থী তাদের অবস্থান, যোগ্যতা, দক্ষতা ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী পরস্পর পথ পরিবর্তন করে যথাযথ সহায়তা প্রাপ্তির মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ধারার শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। এ লক্ষ্যে সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা ধারায় ১ম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি বা সমমান পর্যন্ত সকল স্তর ও শ্রেণিতে সমন্বিত ও সুবিন্যস্তভাবে মৌলিক (Foundational) ও রূপান্তরযোগ্য (Transferable) দক্ষতার যথাযথ অন্তর্ভুক্তি ও প্রতিফলন করা হয়েছে। বাংলাদেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষাকে জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও চাহিদা বিবেচনায় যুগোপযোগী করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টিসহ শ্রমের মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষা নীতিতে বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। দেশ ও বিদেশের চাহিদা বিবেচনায় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দ্রুত জনশক্তি সৃষ্টি করা এবং দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের আয় বৃদ্ধি করার উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশনাও শিক্ষানীতিতে বিবৃত হয়েছে। এ লক্ষ্যে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম প্রণয়নসহ অন্যান্য শিক্ষাধারার সঙ্গে এর সমন্বয়ের বিষয়েও বিভিন্ন দিক নির্দেশনা রয়েছে। চাকুরি বাজারের বিকাশমান ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জনশক্তি তৈরি এবং ভবিষ্যৎ শ্রম-বাজারে (Job Market) টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার সংশ্লেষসহ এ ধারার শিক্ষার সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, উচ্চ শিক্ষা ও চাকুরির সুযোগ সৃষ্টি এবং উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি ও বাংলাদেশ জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো বিশ্লেষণে প্রাপ্ত শিক্ষাক্রম-সংশ্লিষ্ট নির্দেশনাসমূহ নিম্নরূপ : উপরোক্ত নির্দেশনা বিবেচনা করার পাশাপাশি ব্যানবেইস ২০১৯ রিপোর্ট পর্যলোচনা করলে দেখা যায় যে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি সম্পন্ন করার পূর্বেই প্রায় ৩৮% এবং দ্বাদশ শ্রেণি সম্পন্ন করার আগেই উচ্চমাধ্যমিক স্তরের প্রায় ২০% শিক্ষার্থী শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ঝরে যায়। এই শিক্ষার্থীর অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। আবার উচ্চ মাধ্যমিক সমাপ্ত করার পরও অনেক শিক্ষার্থী যারা উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশ করতে পারে না বা করেনা, তারাও একইভাবে কোনো রকম পেশাগত প্রশিক্ষণ বা দক্ষতা ছাড়াই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে, সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষা ধারায়, নবম-দশম শ্রেণিতে জীবন ও জীবিকা বিষয়ের আওতায় একটি বৃত্তিমূলক (অকুপেশনাল) কোর্স থাকবে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট বৃত্তির (অকুপেশনের) জন্য প্রস্তুত করা হবে। দশম শ্রেণি সমাপ্ত করার পর শিক্ষার্থীরা বৃত্তিমূলক (অকুপেশনাল) দক্ষতা বিষয়ক পেশায় সরাসরি যোগ দেওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জন করবে এবং প্রয়োজনে যোগ দিতে পারবে। বৃত্তিমূলক (অকুপেশনাল) কোর্সটি এমনভাবে ডিজাইন করা হবে যাতে শিক্ষার্থীদের বয়োসপোযোগী বর্তমান শ্রম বাজারের চাহিদা অনুযায়ী আত্মকর্মসংস্থানের বা কোনো চাকুরিতে যোগদানের মতো সক্ষমতা তৈরি হয়। জাতীয় শ্রম বাজারে সেবা, কৃষি ও শিল্প খাতের (৪০.৬১% : ৩৭.৭৫% : ২১.৬৫%) ১২ আনুপাতিক অবদান বিবেচনা করে বৃত্তি বা অকুপেশনগুলোর তালিকা প্রণয়ন করা হবে। স্থানীয় বা আঞ্চলিক অর্থনৈতিক খাত ও শ্রম বাজারের চাহিদা বিবেচনা করে বিভিন্ন অঞ্চলের বিদ্যালয়ের জন্য বৃত্তির (অকুপেশনের) ধরন  নির্ধারণ করা হবে। পদ্ধতিগতভাবে নিয়মিত শ্রম বাজার জরিপ করে নতুন নতুন বৃত্তি (অকুপেশন) প্রণয়ন ও প্রবর্তন করা হবে। উপরোক্ত নির্দেশনার প্রেক্ষিতে জাতীয় শিক্ষানীতি এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিতে বর্ণিত কৌশল এবং জাতীয় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক যোগ্যতা কাঠামো বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং এ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে জাতীয় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক যোগ্যতা কাঠামোর স্তরসমূহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষায় বৃত্তিমূলক (অকুপেশনাল) কোর্স অন্তর্ভুক্তির একটি রূপরেখা নিম্নে দেখানো হলো । একই সঙ্গে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ধারার ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন ধারা থেকে পরস্পর পরিবর্তনের সুযোগ রেখে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের একটি পথ নির্দেশনা প্রদর্শিত হলো। সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষা ধারায় ৬ষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে জীবন ও জীবিকা বিষয়ের সাথে একটি প্রি- ভোকেশনাল কোর্স অন্তর্ভুক্ত হলেও কারিগরি শিক্ষায় তা বর্ধিত কলেবরে হাতে কলমে অনুশীলনসহ থাকবে। সমতার রূপরেখা (Equivalency Framework) প্রণয়নের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক আসা-যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। উপরিউক্ত রূপরেখায় সংশ্লিষ্ট নীতিসমূহের নির্দেশনার প্রতিফলনসহ জাতীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও চাহিদা বিবেচনায় সুপারিশসমূহ নিম্নোক্তভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ১. সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষা ধারার ৮ম ও ১০ম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের টিভিইটি ধারায় ভর্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ২. সাধারণ ও মাদ্রাসা ধারায় প্রি-ভোকেশনাল ও বৃত্তিমূলক (অকুপেশনাল) কোর্সসমূহ এমনভাবে বিন্যস্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যাতে এই ধারা দু’টিকেও টিভিইটি ইনক্লুসিভ শিক্ষা ধারা হিসেবে গণ্য করা যায়। ৩. কারিগরি শিক্ষা ধারার স্বাতন্ত্র্য ও নির্ধারিত কাঠামো অনুযায়ী দক্ষতার জাতীয় ও বৈশ্বিক মানদণ্ড অক্ষুণ্ণ রেখে শিক্ষাক্রম রূপরেখায় সকলের জন্য অর্জন উপযোগী ১০টি যোগ্যতা অর্জনের উদ্দেশ্যে নির্ধারিত মৌলিক বিষয়সমূহ সমন্বয়ের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। যা আন্তঃধারা ব্যবধান কমাতে সহায়তা করবে এবং যথাযথ সমতার রূপরেখার (Equivalency Framework) মাধ্যমে পারস্পরিক ধারা পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি করবে। ৪. এসএসসি বা এসএসসি (ভোকেশনাল) বা সমমানের কোর্স সম্পন্ন করার পর ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হবার সুযোগ থাকবে। ৫. কারিগরি শিক্ষা ধারার কোর্সের কাঠামো ও ধারণায়ন (conceptualisation) অনুযায়ী ধারাবাহিক ও সামষ্টিক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে প্রকল্পভিত্তিক, তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক ও অন্যান্য উপায়ে মূল্যায়নের সুযোগ থাকবে। কারিগরি শিক্ষা ধারায় নবম শ্রেণি শেষে শুধুমাত্র কারিগরি বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা হবে এবং দশম শ্রেণি শেষে সকল বিষয়ের পাবলিক পরীক্ষা হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি শেষে সকল বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ৬. শিক্ষাক্রম রূপরেখার ১০টি বিষয় ও কারিগরি ধারার কারিগরি বিষয়ের চাহিদা অনুযায়ী বিষয়সমূহের জন্য যৌক্তিকভাবে সময় বরাদ্দ করা হবে। ৭. টিভিইটি শিক্ষা ধারায় ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রি-ভোক বিষয়ের সাথে কর্মমূখী কারিগরি শিক্ষার প্রাথমিক ধারণা বিষয়ক একটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে । তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Uncategorized

শিক্ষাক্রম উন্নয়নের পটভূমি

(Background of curriculum development) মানুষ একটি পরিপূর্ণ জীবন প্রত্যাশা করে। সেই জীবন হবে নান্দনিক ও আনন্দময়। পাশাপাশি মানুষ পারিবারিক, সামাজিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নিজের অর্থপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে চায়। শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য জীবনকে নান্দনিক, আনন্দময়, ও অর্থবহ করে তোলা, এবং সেই সাথে শিক্ষার্থীকে জীবিকা অর্জনের উপযোগী যোগ্য, সৃষ্টিশীল ও মানবিক মানুষে পরিণত করা। একইসঙ্গে পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীকে একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাও শিক্ষার উদ্দেশ্য। পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে মানুষের জীবন ও জীবিকা বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রযুক্তির উত্তোরোত্তর উৎকর্ষের কারণে পরিবর্তনের গতিও হয়েছে অনেক দ্রুত। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই বিশ্বের সঙ্গে মানুষের অভিযোজনের কোনো বিকল্প নেই। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাত্রা পৃথিবীর ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে এগিয়ে চলেছে অভাবনীয় গতিতে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব পর্যায়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ মানুষের কর্মসংস্থান এবং জীবনযাপন প্রণালিতে যে পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে, তার মধ্য দিয়ে যন্ত্র ও মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক আরো নিবিড় হচ্ছে। এর ফলে বর্তমান সময়ের কর্মজগতের অনেক কিছুই ভবিষ্যতে যেমন থাকবে না, তেমনি অনেক নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে যা এই মুহূর্তে অনুমান করা প্রায় অসম্ভব । বিশ্বায়নের কারণে যেমন দেশে-দেশে, সমাজে-সমাজে ভৌগোলিক দূরত্ব ঘুচে যাচ্ছে, তেমনি আবার অবিমিশ্র নগরায়ণ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্দেশিক অভিবাসন আমূল পাল্টে ফেলছে সনাতন জীবন ও সংস্কৃতি। পৃথিবী জুড়েই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটলেও যেমন তার সুষম বণ্টন হয়নি, তেমনি সামাজিক উন্নয়নও তাল মেলাতে পারছেনা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতির সঙ্গে । যার ফলে এখনও পৃথিবীতে রয়ে গেছে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষার মত মৌলিক সমস্যাবলি। ঘনীভূত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ুদূষণ, অভিবাসন বা জাতিগত সহিংসতাজনিত সমস্যাসমূহ। দেখা দিচ্ছে কোভিড ১৯-এর মতো মহামারি যা সারা বিশ্বের জীবনযাত্রা এবং অর্থনীতিকে থমকে দিয়েছে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় সংযোজিত হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং মাত্রা। এসব চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তার টেকসই ও কার্যকর সমাধান এবং সম্ভাবনার পূর্ণ সুফল গ্রহণের জন্য জ্ঞান, দক্ষতা ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন দূরদর্শী, সংবেদনশীল, অভিযোজন-সক্ষম, মানবিক এবং যোগ্য বিশ্ব-নাগরিক প্রড়িজন। একবিংশ শতাব্দীর তথ্য ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেরকম নাগরিক তৈরিতে হিমশিম খাচ্ছে সনাতনী শিক্ষাব্যবস্থা। কারণ এই সনাতন মুখস্থ ও পরীক্ষানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল আজ থেকে তিনশত বছর আগের তৎকালীন সমাজের জীবন ও জীবিকার প্রয়োজন মেটানোর জন্য, এরপর শিক্ষা-কাঠামোর গুণগত পরিবর্তন হয়েছে খুব কমই। এখন প্রয়োজন এমন শিক্ষাব্যবস্থা, যা নমনীয়, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সক্ষম এবং উদ্ভূত আর্থসামাজিক প্রয়োজনের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন চলমান পুরোন সমস্যার টেকসই সমাধান, আর নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার চেষ্টা ও আত্মবিশ্বাস। এই সামগ্রিক বৈশ্বিক আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পদার্পনের লক্ষমাত্রা অর্জনে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এই অভিলক্ষ্য পূরণের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার শিক্ষা। আর সেজন্য শিক্ষার আধুনিকায়ন অপরিহার্য। আর এই আধুনিকায়নের শুরুটা হতে হবে অবশ্যই একটি কার্যকর যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম উন্নয়নের মাধ্যমে যা সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-এর একটি নিয়মিত এবং গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম । সর্বশেষ ২০১২ সালে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয় । সময়ের পরিক্রমায় পরিবর্তনশীল পৃথি বীর সাথে তাল মিলাতে নতুন শিক্ষাক্রম উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এই উদ্দেশ্যে শিক্ষার বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং শিখন চাহিদা নিরূপণের জন্য ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালব্যাপী বিভিন্ন গবেষণা এবং কারিগরি অনুশীলন পরিচালিত হয়। তারই উপর ভিত্তি করে প্রেক্ষাপট, প্রয়োজন এবং নতুন বিশ্বপরিস্থিতিতে টিকে থাকার মতো যোগ্য প্রজন্ম গড়ে তুলতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণির অবিচ্ছিন্ন শিক্ষাক্রম উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

Uncategorized

রূপকল্প (Vision)

রূপকল্প (Vision) ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত দেশপ্রেমিক, উৎপাদনমুখী, অভিযোজনে সক্ষম সুখী ও বৈশ্বিক নাগরিক গড়ে তোলা।’ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ, জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি লালনকারী সৎ, নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন, বিজ্ঞানমনস্ক, আত্মবিশ্বাসী, দক্ষ, সৃজনশীল ও সুখী একটি প্রজন্ম তৈরির লক্ষ্যে রূপকল্পটি নির্ধারিত হয়েছে। এই রূপকল্পে এমন একটি প্রজন্মের স্বপ্ন দেখা হয়েছে, যারা স্বকীয়তা বজায় রেখে অপরের কল্যাণে নিবেদিত হওয়ার পাশাপাশি সমাজের ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে সচেষ্ট হবে। একইসঙ্গে সৃজনশীলতা ও রূপান্তরযোগ্য দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে উৎপাদনশীল নাগরিক হিসেবে স্বাধীনতার সুফল নিশ্চিত করে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবদান রাখতে পারবে। এছাড়াও বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে আত্মপরিচয়ের বহুমাত্রিকতাকে স্বাগত জানিয়ে অভিযোজনে সক্ষম বিশ্বনাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে।-তথ্যসূত্র : জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১

Scroll to Top