City of Education

বিষয়ের ধারণায়নঃশিল্প ও সংস্কৃতি (Arts and Culture)

প্রাকৃতিক ও সামাজিক বৈচিত্র্য ও পারস্পরিক সম্পর্ক অবলোকন, অনুভব করে প্রতিলিপি বা প্রতিরূপ তৈরি এবং পারস্পরিক রূপান্তরের মাধ্যমে শিল্পকলার অন্তর্গত দৃশ্যকলা ও উপস্থাপনকলার বিভিন্ন সৃজনশীল ধারা (চারু ও কারুকলা, নৃত্য, সংগীত, যন্ত্রসংগীত, আবৃত্তি, অভিনয়, সাহিত্য, ইত্যাদি) ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করে আনন্দ উপলব্ধি করতে পারা এবং সেসবের চর্চায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারা; সংবেদনশীলতা ও নান্দনিকতার বিকাশ সাধন করতে পারা; নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধারণ ও লালন এবং অন্য সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে পারা, শিল্পকলাকে উপজীব্য করে উচ্চতর শিক্ষা বা আত্মনির্ভরশীল হতে শিল্পকলার যেকোনো ধারাকে বিবেচনা করতে পারা।

বিষয়ের ধারণায়ন

নিজস্ব জাতিসত্তার ঐতিহ্যবাহী রূপকে নান্দনিকভাবে বিশ্বজনীন করে তোলার জন্য শিল্প ও সংস্কৃতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্বায়নের এই যুগে পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক জাতি শিল্প ও সংস্কৃতি নির্ভর শিক্ষার মধ্য দিয়ে নিজেদের ঐতিহ্য ও কৃষ্টিকে পৃথিবীব্যাপী তুলে ধরেছে। এবং সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিজেদের শিল্পবোধ ও নান্দনিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নান্দনিক বোধসম্পন্ন আত্মনির্ভরশীল নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিল্প ও সংস্কৃতি যথাযথভাবে অনুধাবন ও উপলব্ধি করার গুরুত্ব অপরিসীম। শিল্পের ভাষা পৃথিবীর প্রাচীনতম ভাষা। গুহাযুগ থেকে পৃথিবীর সকল সভ্যতার পথ ধরে বর্তমান সময় পর্যন্ত শিল্প ও সংস্কৃতি মানুষের জীবনের তাৎপর্যপূর্ণ অংশ। রেনেসাঁর সময় শিল্প ও সংস্কৃতিনির্ভর জীবনদর্শন ইউরোপকে দিয়েছিল এক অনন্য উঁচুমাত্রা। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দেশীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহারে নান্দনিকবোধসম্পন্ন আত্মনির্ভরশীল নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতেও শিল্প ও সংস্কৃতির গুরুত্ব অপরিসীম। যে জাতি নিজের সংস্কৃতিকে ভালোবাসে সে অন্যের সংস্কৃতিকেও সম্মান করে। শিল্প ও সংস্কৃতি শিক্ষার মধ্য দিয়ে সংবেদনশীল, মানবিক গুণাবলি ও পরমতসহিষ্ণু নতুন প্রজন্ম তৈরির সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে সৃজনীগুণসম্পন্ন আত্মনির্ভরশীল রূপে গড়ে তোলাকে শিক্ষাক্রম রূপরেখায় প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাকে শিক্ষার্থীদের কাছে আনন্দময় করার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার মাধ্যমে তাদের নান্দনিক ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন করে গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো শিল্প ও সংস্কৃতি। শিল্প ও সংস্কৃতির চর্চার মাধ্যমে শিশুদের সৃজনশীল চিন্তার সঠিক বিকাশও মূল্যায়ন করা যায় । এই শিক্ষাক্রম রূপরেখায় শিল্প ও সংস্কৃতিকে শিখন-ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করার উদ্দেশ্য হলো শিল্পকে উপজীব্য করে শিশুদের সঠিক মনোবিকাশে সহায়তা করা । শিল্প ও সংস্কৃতি শিখন-ক্ষেত্রটিকে এমন একটি সমন্বিত বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেখানে শিল্প ও সংস্কৃতির বিভিন্ন সৃজনশীল ধারা (চারু ও কারুকলা, নৃত্য, সংগীত, যন্ত্রসংগীত, আবৃত্তি, অভিনয় ও সাহিত্য) চর্চার সুযোগ রয়েছে । এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী একজন নান্দনিক, রুচিশীল ও শিল্পবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে এবং জীবন যাপন করতে পারবে। শিক্ষার্থীর ইচ্ছা ও প্রয়োজনবোধে সৃজনশীল সক্ষমতাকে উচ্চতর শিক্ষা, কর্মজগৎ বা আত্মনির্ভরশীল হতে বিবেচনা করারও সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানের বিভিন্ন শ্রেণি এবং জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরিতে শিল্প ও সংস্কৃতিকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সূত্রে তাদের অভিভাবকদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরিতেও শিল্পবোধকে কাজে লাগানোর চিন্তা করা হয়েছে।

এজন্য শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়টিতে প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা পর্যন্ত সৃজনশীলতার ধারাবাহিকতাকে বজায় রাখা হয়েছে যেখানে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরকেই শিল্প ও সংস্কৃতির মূলভিত্তি হিসেবে গণ্য করা

হয়েছে।

এই শিক্ষাক্রম রূপরেখায় শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রকে নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে আবদ্ধ না করে প্রকৃতি, পরিবেশ, সমাজ ও সংস্কৃতি-নির্ভর করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে লোকজ, প্রাকৃতিক উপাদান ও উপকরণ ব্যবহার করে শিশুদের শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। শিশুদের কল্পনাপ্রবণ, অনুসন্ধিৎসু মনোজগতকে প্রাধান্য দিয়ে প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চার ধারাবাহিকতাকে অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে উদার, সংবেদনশীল, নান্দনিকবোধ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রকৃতি পাঠ, শিল্প ও সংস্কৃতি-নির্ভর শিক্ষাপদ্ধতি এবং তার সঙ্গে সমসাময়িক বিশ্বের সৃজনশীল শিক্ষার মধ্য দিয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াকে সামনে রেখেই এই শিল্প ও সংস্কৃতি এর সমন্বিত শিখন বিষয়টি পরিকল্পনা করা হয়েছে। যার পদ্ধতিটি হবে নিম্নরূপ :

প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য অবলোকন, অনুভব ও প্রতিলিপি বা প্রতিরূপ তৈরি

প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকে অবলোকন ও যাপিত অনুভব করে (দেখে, শুনে, স্পর্শ ও অনুধাবন করে জীবনে শিল্পের উপাদান হিসেবে আকার, আকৃতি, রং, সুর, তাল, লয়, ছন্দ ইত্যাদি অনুসন্ধান ও উপলব্ধি করা এবং তার প্রতিলিপি ও প্রতিরূপ তৈরি।

রূপান্তর

প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র অবলোকন ও অনুভব করে শিল্পের উপাদানসমূহের নান্দনিক ও সৃজনশীল রূপান্তরের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ ।

নান্দনিকতার বহুমাত্রিক প্রকাশ

নান্দনিক ও সৃজনশীল রূপান্তরের ধারণা ও যোগ্যতার দৈনন্দিন কাজ ও বিশেষত্ব তৈরিতে বহুমাত্রিকভাবে প্রয়োগ ।

যাপিত জীবনে নান্দনিকতা

যাপিত জীবনে নান্দনিকতার মাধ্যমে মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও গুণাবলির বিকাশ (জাতীয়তা, বিশ্ব-নাগরিকত্ব, পরিবেশ সংরক্ষণ, মানবিকতা, বৈচিত্র্যকে সম্মান, সৃষ্টিশীলতা ইত্যাদি)।

===000===

তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top