নির্ধারিত দশটি শিখন-ক্ষেত্রের যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে নির্দিষ্ট সংখ্যক বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। যেহেতু প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় হলো শিশুদের পরবর্তী শিখনের জন্য প্রস্তুতিমূলক একটি পর্যায়, এই পর্যায়ে শিশুরা কোনো একটি বিশেষ বিষয়ে আলাদাভাবে শিখনের পরিবর্তে সমন্বিতভাবে একাধিক বিষয় একসঙ্গে শিখনের জন্য অনুশীলন করবে। তবে প্রাথমিক (প্রথম থেকে পঞ্চম এবং মাধ্যমিক (ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি) স্তরে সুনির্দিষ্টভাবে যথাক্রমে আটটি ও দশটি বিষয় পাঠ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন পরিকল্পনার ফলে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বিষয়ের বিন্যাসে সামঞ্জস্য বিধান সম্ভব হয়েছে, এবং শিক্ষার্থীর ধাপে ধাপে উত্তরণ যাতে স্বচ্ছন্দ এবং চাপমুক্ত হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের এই বিষয়সমূহ নির্বাচনের সময় অনেকগুলো দিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীর বয়স, আগ্রহ এবং বিকাশের চাহিদা অনুযায়ী বিষয়ের সংখ্যা ও ধরন ঠিক করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে শিক্ষাক্রমের নির্ধারিত মূল যোগ্যতাসমূহ এবং তার ধারাবাহিকতায় শিখন-ক্ষেত্রসমূহের যোগ্যতাসমূহ অর্জনে সমর্থ হয়, কিন্তু একই সঙ্গে বিষয়বস্তুর চাপ যাতে বেড়ে না যায় সেজন্য থিমভিত্তিক ও ইন্টারডিসিপ্লিনারি অ্যাপ্রোচ গ্রহণ করা হয়েছে। শিখনকে কার্যকর ও আনন্দময় করতে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের উপর জোর দেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে একই শিখন-কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে একাধিক বিষয়ের যোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব।
নিচে ছকের মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিষয়সমূহের বিন্যাস দেখানো হয়েছে। যদিও অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট শিখনক্ষেত্রের সঙ্গে নির্দিষ্ট বিষয়ের সম্পর্ক স্পষ্টত লক্ষণীয়, বস্তুত সকল বিষয়ই সকল শিখন-ক্ষেত্রের যোগ্যতা অর্জনে ভূমিকা রাখবে। কেননা শিখন-ক্ষেত্র ও বিষয়ের মধ্যকার সম্পর্কটি একমুখী নয়।
২.১০.১ প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় ও প্রাথমিক স্তরের নির্বাচিত বিষয়সমূহ
শিখন-ক্ষেত্র | প্রাক-প্রাথমিক | প্রাথমিক |
ভাষা ও যোগাযোগ | সমন্বিত বিষয় | বাংলা ইংরেজি গণিত বিজ্ঞান ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান স্বাস্থ্য সুরক্ষা ধর্মশিক্ষা শিল্প ও সংস্কৃতি |
গণিত ও যুক্তি | ||
জীবন ও জীবিকা | ||
সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব | ||
পরিবেশ ও জলবায়ু | ||
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ||
ডিজিটাল প্রযুক্তি | ||
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা | ||
ধর্ম, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা | ||
শিল্প ও সংস্কৃতি |
বিশেষ দ্রষ্টব্য : মাধ্যমিক স্তরে ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং জীবন ও জীবিকা আলাদা বিষয় হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরে এই দুইটি আলাদা বিষয় হিসেবে না থাকলেও এই বিষয়দ্বয়ের অন্তর্গত শিখনযোগ্যতা অন্যান্য বিষয়সমূহের মধ্য দিয়ে সমন্বিতভাবে অর্জিত হবে।
মাধ্যমিক স্তরের (ষষ্ঠ থেকে দশম) নির্বাচিত বিষয়সমূহ
শিখন-ক্ষেত্র | মাধ্যমিক (৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণি) |
ভাষা ও যোগাযোগ | বাংলাইংরেজিগণিতবিজ্ঞানইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানডিজিটাল প্রযুক্তিজীবন ও জীবিকাস্বাস্থ্য সুরক্ষা ধর্মশিক্ষাশিল্প ও সংস্কৃতি |
গণিত ও যুক্তি | |
জীবন ও জীবিকা | |
সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব | |
পরিবেশ ও জলবায়ু | |
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | |
ডিজিটাল প্রযুক্তি | |
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা | |
ধর্ম, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা | |
শিল্প ও সংস্কৃতি |
শিখন-ক্ষেত্র থেকে বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিবেচ্য দিক
সাম্প্রতিক সময়ে থিমভিত্তিক ও আন্তঃবিষয়ক কৌশলের (ইন্টারডিসিপ্লিনারি অ্যাপ্রোচ) ইতিবাচক ফলাফলকে নজরে এনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রমে এই কৌশল বা অ্যাপ্রোচ গ্রহণ করা হয়েছে। এই বাস্তবতা সামনে রেখে, এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে এই রূপরেখায় মাধ্যমিক পর্যায়ে মূল বিষয়ের পাশাপাশি থিমভিত্তিক বিষয়ও রাখা হয়েছে। শিক্ষাক্রমে নমনীয়তা নীতি গ্রহণ করার ফলে ভবিষ্যতেও এই বিষয় বিন্যাসকে চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী সাজানোর সুযোগ রয়েছে। থিমভিত্তিক বিষয়গুলো ছাড়াও অন্যান্য বিষয়েও একাধিক আলোচনার ক্ষেত্রের সমন্বয় ঘটেছে, যেমন ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানকে একটি বিষয় হিসেবে ধরা হলেও, ইতিহাস, অর্থনীতি, পৌরনীতি, ভূগোল এসকল বিষয়ের সমন্বয় ঘটেছে এখানে। একইভাবে, বিজ্ঞান বিষয়ে ভৌতবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ভূ-বিজ্ঞান এসকল ক্ষেত্রের শিখনযোগ্যতার সমন্বয় থাকছে। ভাষা শিক্ষায় শোনা, বলা, পড়া, লেখার মত মৌলিক দক্ষতা শুধু নয়, বিকল্প যোগাযোগ দক্ষতাও বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
যেহেতু প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর জন্য শিখন-ক্ষেত্রসমূহ অভিন্ন থাকছে, কাজেই শিক্ষার্থীরা যাতে সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করতে পারে সেজন্য স্তরভিত্তিক উদ্দেশ্য সামনে রেখে স্তরভেদে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আপেক্ষিক গুরুত্ব বেশি বা কম দেয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ে যেহেতু ভিত্তিমূলক দক্ষতা অর্জনকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, কাজেই মাতৃভাষা, যোগাযোগ ও গাণিতিক দক্ষতা অর্জনকে এই স্তরে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। একইভাবে, মাধ্যমিক (ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি) স্তরের সকল শিক্ষার্থী যাতে প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে পারে এবং সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রের যোগ্যতাসমূহ অর্জন করে জাতীয়তাবোধসম্পন্ন বিশ্বনাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে পারে সেজন্য এই স্তরে বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয় অধিকতর গুরুত্ব পেয়েছে।
একাদশ দ্বাদশ শ্রেণিতে মোট ভরের (weightage) তিন চতুর্থাংশ বিশেষায়িত বিষয়সমূহের জন্য এবং এক চতুর্থাংশ ভর আবশ্যিক বিষয়সমূহের জন্য বরাদ্দ থাকবে এবং এই বিষয়গুলোতে বিভিন্ন শিখনক্ষেত্রের যোগ্যতাসমূহের সমন্বয় থাকবে। এই সমন্বিত বিষয়সমূহে প্রায় সকল শিখনক্ষেত্রের বিভিন্ন মাত্রায় প্রতিফলন থাকতে পারে।
===000===
তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021