City of Education

শিখন-শেখানো সামগ্রী  (Teaching-learning materials)

শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের মূল বাহন হলো শিখন-শেখানো সামগ্রী। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য প্রণীত শিখন শেখানো সামগ্রী যথাযথ ব্যবহার ও প্রয়োগের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিক্ষাক্রমে উল্লিখিত যোগ্যতাসমূহ শিক্ষার্থীরা অর্জন করে । শিক্ষাক্রম রূপরেখায় শিখন-শেখানো সামগ্রী বলতে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রণীত রিসোর্সবুক, পাঠ্যপুস্তক, সহায়ক বই, সম্পূরক পঠন-সামগ্রী, গল্প ও ছড়ার বই, চার্ট, কার্ড, মডেল, ডিজিটাল সামগ্রী এবং শিক্ষকের জন্য প্রণীত শিক্ষক সহায়িকাকে বোঝানো হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন উপকরণ, চারপাশের পরিবেশের উপাদান ইত্যাদিও শিখন-শেখানো সামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত হবে। শিক্ষার্থীদের মাঝে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে প্রতি শ্রেণির জন্য বাছাই করা বয়সোপযোগী বইয়ের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হবে যেগুলো ওই শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীরা সারা বছর জুড়ে পড়বে। বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে এই বইগুলো রাখা যেতে পারে যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বই নিয়ে পড়ে আবার ফেরত দিতে পারে।

প্রাক-প্রাথমিক : প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের জন্য মূল শিখন-শেখানো সামগ্রী হলো শিক্ষক সহায়িকা। এ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যেহেতু পড়তে বা লিখতে পারে না তাই প্রাক-প্রাথমিকের সকল যোগ্যতা অর্জনের জন্য বিস্তারিত নির্দেশনা প্রদান করা হবে শিক্ষক সহায়িকাতে। শিক্ষক সহায়িকাতে উল্লিখিত নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন খেলা ও কাজের মাধ্যমে শিখন অভিজ্ঞতা নিয়ে শিক্ষার্থীরা মূলত এই পর্যায়ের জন্য নির্ধারিত যোগ্যতাসমূহ অর্জন করবে। শিক্ষক সহায়িকার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়ার্কবুক, গল্প ও ছড়ার বই, চার্ট, কার্ড, মডেল উন্নয়নসহ খেলনা ও বিভিন্ন উপকরণ, অডিও-ভিজ্যুয়াল ব্যবহার করা হবে।

প্রাথমিক (১ম থেকে ৩য়) : এ স্তরের একটি মূল উদ্দেশ্য হলো শিশুদের পড়তে, লিখতে ও অনুসন্ধান করতে শেখাকে নিশ্চিত করা । শিশুরা যেহেতু এই স্তরেও ঠিকমতো নিজে নিজে পড়ার দক্ষতা অর্জন করেনা তাই এই স্তরের মূল শিখন-শেখানো সামগ্রী হলো শিক্ষক সহায়িকা। শিক্ষক সহায়িকাতে উল্লিখিত নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন খেলা, কাজ ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিখন যোগ্যতাসমূহ অর্জন করবে। বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক সহায়িকার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী ওয়ার্কবুক, পাঠ্যপুস্তক, সম্পূরক পঠন-সামগ্ৰী, চার্ট ও কার্ডের উন্নয়নসহ খেলনা সামগ্রী, অডিও-ভিজুয়াল ও বিভিন্ন উপকরণ প্রচলন করা হবে। পারিবারিক ও সামাজিক পরিসর ও প্রেক্ষাপটও শিক্ষার্থীর শিখন অভিজ্ঞতা অর্জনের অন্যতম উপাদান হিসেবে বিবেচিত হবে।

প্রাথমিক (৪র্থ থেকে ৫ম) : এই স্তরের শিক্ষার্থীরা নিজে নিজে পড়তে ও লিখতে পারে তাই শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যপুস্তক ও সম্পূরক পঠনসামগ্রী থাকবে। তবে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষায় শিখন অভিজ্ঞতাই যেহেতু শিখনের মূল উপায় সেহেতু শিক্ষক সহায়িকা এক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। পাঠ্যপুস্তক সহায়ক হলেও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশের জন্য তাদের নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা ও হাতে কলমে কাজের মাধ্যমে যেতে হবে পাশাপাশি বিভিন্ন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের শিখন চাহিদা ও আগ্রহ বিবেচনায় প্রাসঙ্গিক শিখন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে পরিচালিত করার জন্য শিক্ষকদের জন্য থাকবে শিক্ষক সহায়িকা ।

শিক্ষার্থীর আশেপাশের পরিবেশই হবে তার শিখন অভিজ্ঞতা অর্জনের মূল উপাদান। এছাড়াও প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়ক বই, সম্পূরক পঠন-সামগ্রী, চার্ট ও কার্ডের উন্নয়নসহ স্থানীয় উপকরণ, অডিও-ভিজুয়াল, পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ শিখন উপকরণ/সামগ্রী/উপাদান হিসেবে প্রচলন করা হবে।

মাধ্যমিক : মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্যও পাঠ্যপুস্তক এবং বিভিন্ন পঠন-সামগ্রী থাকবে। এছাড়াও শিক্ষাক্রম রূপরেখার কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা, মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের শিখন চাহিদা ও আগ্রহ বিবেচনায় প্রাসঙ্গিক শিখন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের পরিচালিত করার জন্য শিক্ষকদের জন্য থাকবে শিক্ষক সহায়িকা। অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী শিখবে বিধায় তার নিজের স্থানীয় পরিবেশের উপাদানসমূহই এইক্ষেত্রে প্রধান শিখন সামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এর বাইরে প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়ক বই, সম্পূরক পঠন-সামগ্রী, চার্ট, কার্ড ও অডিও-ভিজ্যুয়াল সামগ্রীর উন্নয়ন ও প্রচলন করা হবে। এক্ষেত্রে পরিবার, বিদ্যালয়, সামাজিক পরিবেশ শিক্ষার্থীর শিখন অভিজ্ঞতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।

===000===

তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top