City of Education

শিখন সময় ও শিখন সময়ের বিষয়ভিত্তিক বণ্টন (Learning time and its subjectwise distribution)

যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমে শিখন-শেখানো কার্যক্রমের মূল কৌশল হচ্ছে অভিজ্ঞতাভিত্তিক সক্ৰিয় শিখন – যা শুধু শ্রেণিকক্ষে পাঠদান প্রক্রিয়া বা সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় । শিক্ষার্থী বিভিন্ন কৌশলে শ্রেণিকক্ষে, বিদ্যালয়ে, বাড়িতে, নিকট পরিবেশে বিভিন্ন কার্যক্রম ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিখন সম্পন্ন করে নির্ধারিত যোগ্যতাসমূহ অর্জন করে। এরূপ নানাবিধ শিখন-শেখানো কার্যক্রম সুচারুরূপে পরিচালনা করতে হলে পর্যাপ্ত শিখন সময় থাকা প্রয়োজন তবে তা শুধু শ্রেণিকক্ষভিত্তিক নয়। বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রমে শিখন সময়কে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। ইউনেস্কোর শিক্ষাক্রম পরিভাষায় শিখন সময়ের বিভিন্ন পরিভাষা ও তার ব্যাখ্যা প্ৰদান করেছে। যেমন : কনট্যাক্ট পিরিয়ড (Contact period) বলতে শ্রেণিকক্ষ ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সক্রিয় শিখন-শেখানো সময়কে ধরা হয়েছে। ইন্সট্রাকশনাল টাইম (Instructional time ) বলতে সেই নির্দিষ্ট সময়কে বোঝানো হয়েছে যেখানে শ্রেণিকক্ষে বা ভার্চুয়াল পরিবেশে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কাছ থেকে সরাসরি শিখনের জন্য সহায়তা পেয়ে থাকে। আবার শিখন সময় (Learning time) বলতে সেই নির্দিষ্ট সময়কে বিবেচনা করা হয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে কোনো শিখন-সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত থাকে অথবা কার্যকর শিখনে নিবিষ্ট থাকে । যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমে যোগ্যতা অর্জনের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে যেহেতু বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে এবং এই অভিজ্ঞতা সব সময় বিদ্যালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে বিধায় শিক্ষাক্রম রূপরেখায় শিখন সময়কে শ্রেণিকক্ষ ও শ্রেণিকক্ষের বাহিরে সক্রিয় শিখনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সময়কে বিবেচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ, শিক্ষার্থী একক বা পারস্পরিকভাবে সব মিলিয়ে শিখন কার্যক্রমে যে

সময়টুকু ব্যয় করবে তার পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নে বাস্তব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে শিখন সময়ের একটি পরিকল্পনা দেয়া হলো ।

মোট ছুটি = ৭৬ দিন + ১০৪ দিন (শুক্রবার ও শনিবার) = ১৮০ দিন সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন ধরে মোট কর্মদিবস ৩৬৫ দিন – ১৮০ দিন সাপ্তাহিক ছুটি ২দিন (শুক্রবার ও শনিবার) ধরে শিখন সময় প্রাক্কলন

শ্রেণিমোট শিখন ঘণ্টা
প্রাক-প্রাথমিক500
১ম – ৩য়630
৪র্থ – – ৫ম840
৬ষ্ঠ – ৮ম1030
৯ম – ১০ম1100
১১শ-১২শ1150

উল্লেখ্য যে, OECD ও এর সহযোগী দেশের ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত গড় শিখন ঘণ্টা ৭৯৯ এবং ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত গড় শিখন ঘন্টা ৯১৯ ঘন্টা। উপরিউক্ত হিসেব অনুযায়ী বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সপ্তাহে দুইদিন ছুটি বিবেচনায় নিয়েও যথাযথ শিখন সময় বরাদ্দ করা সম্ভব। প্রচলিত ছুটির হিসেবকে বিবেচনায় রেখে মোট কর্মদিবস ১৮৫ দিন প্রাক্কলন করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শুক্রবার ও শনিবার দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে। এছাড়া শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন, স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, জাতীয় শোক দিবস এবং বিজয় দিবস এই ৫টি জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপনের জন্য এই দিনগুলো কর্মদিবস হিসেবে ধরা হয়েছে।

ওইসিডি (OECD) ও এর সহযোগী দেশসমূহের বাৎসরিক গড় স্কুল দিবস হলো ১৮৫ দিন এবং ইউরোপের ২৩টি দেশের বাৎসরিক গড় স্কুল দিবস হলো ১৮১ দিন। প্রতিবেশি দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে স্কুল কর্মদিবস বিভিন্ন, যেমন মেঘালয়ে ১৯২ দিন আবার মহারাষ্ট্রে ২০০ দিন। এই প্রেক্ষিতে সপ্তাহে দুইদিন ছুটি হিসেব করে প্রস্তাবিত মোট কর্মদিবস ও শিখন সময় আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ ।

(বছরে শুক্রবার ও শনিবার মোট ১০৪ দিন এবং মোট বার্ষিক ছুটি ৭৬ দিন ধরে কর্মদিবস হিসেব করা হয়েছে।)

শিখন সময়ের বিষয়ভিত্তিক বণ্টন

ওইসিডি (OECD) ও এর সহযোগী দেশসমূহের ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ার প্রায় ৪৬টি দেশের মোট শিখন সময়ের বিষয়ভিত্তিক বণ্টনের শতকরা হার নিম্নের গ্রাফে দেখানো হয়েছে।

উপরিউক্ত গ্রাফ অনুযায়ী ওইসিডি (OECD) ও এর সহযোগী দেশসমূহে গড়ে প্রাথমিক স্তরে মাতৃভাষা, গণিত ও শিল্পকলা বিষয়ে মোট শিখন সময়ের ৫২% সময় বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু, মাধ্যমিক স্তরে মাতৃভাষা, বিদেশি ভাষা ও গণিত বিষয়ের জন্য মোট শিখন সময়ের ৪২% সময় বরাদ্দ থাকে। বিভিন্ন দেশের শ্রেণি অনুযায়ী

বিষয়ভিত্তিক সময়বণ্টন পর্যালোচনা, বাংলাদেশের বিষয়ভিত্তিক সময়বণ্টনের প্রেক্ষিত বিবেচনা করে, সেই সঙ্গে প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম রূপরেখার চাহিদার প্রেক্ষিতে বিষয়ভিত্তিক সময়বণ্টনের কাঠামো নিম্নরূপ :

বিষয়ভিত্তিক শিখন সময়ের শতকরা হার

* প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ের প্রত্যাশিত যোগ্যতাসমূহ গণিত ও বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ের মাধ্যমে এবং জীবন ও জীবিকা বিষয়ের প্রত্যাশিত যোগ্যতাসমূহ ইতিহাস ও সামজিক বিজ্ঞান, এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ অন্যান্য বিষয়ের মাধ্যমে অর্জিত হবে। সুতরাং ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং জীবন ও জীবিকা বিষয়ের জন্য নির্ধারিত শিখন সময় আলাদা করে দেখানো হয়নি।

বিদ্যালয়ের প্রারম্ভিক সময়ে মাতৃভাষা, গণিত, এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে শিশুদের অধিক সময় বরাদ্দ করা হয়েছে যা প্রাক-প্রাথমিকে মোট স্কুল শিখন সময়ের প্রায় ৬০% এবং প্রাথমিক স্তরে বাংলা, গণিত, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে প্রায় ৫৬% শিখন সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পক্ষান্তরে, মাধ্যমিক পর্যায়ে ৯ম-১০ম শ্রেণিতে মোট শিখন সময়ের প্রায় ৪৫% সময় বরাদ্দ করা হয়েছে ইংরেজি, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, এবং বিজ্ঞান বিষয়ের জন্য ।

মোট শিখন ঘণ্টার বিষয়ভিত্তিক বণ্টন নিম্নরূপ

* প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ের প্রত্যাশিত যোগ্যতাসমূহ গণিত ও বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ের মাধ্যমে এবং জীবন ও জীবিকা বিষয়ের প্রত্যাশিত যোগ্যতাসমূহ ইতিহাস ও সামজিক বিজ্ঞান, এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ অন্যান্য বিষয়ের মাধ্যমে অর্জিত হবে। সুতরাং ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং জীবন ও জীবিকা বিষয়ের জন্য নির্ধারিত শিখন সময় আলাদা করে দেখানো হয়নি।

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আবশ্যিক বিষয়সমূহের জন্য মোট শিখন সময়ের ২৫% সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নৈর্বাচনিক ৩টি বিশেষায়িত বিষয়মূহের জন্য মোট শিখন সময়ের ৭৫% সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া একটি ঐচ্ছিক প্রায়োগিক বিষয়ের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আলাদা করে সময় বরাদ্দ করবে।

প্রতিটি স্তরের জন্য মোট শিখন সময়কে সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে । এই শিখন সময়কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার প্রয়োজন মতো ব্যবহার করতে পারবে। আবার যেসব বিষয় ও শিখন-ক্ষেত্রে স্কুল সময়ের বাহিরের পরিবেশে যোগ্যতা অর্জনের প্রাধান্য রয়েছে সেসব ক্ষেত্রেও এই শিখন সময়কে ব্যবহার করা হবে।

===000===

তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top