City of Education

শিখন-শেখানো কৌশল (Teaching-learning strategies)

রেনেসাঁ-পরবর্তী আধুনিক যুগে শিল্প বিপ্লবের ফলে ইউরোপে শ্রমবাজারের চাহিদা পূরণ করার উদ্দেশ্যে যে গণশিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল তার আদলেই শিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তর ঘটেছিল বিশ্বজুড়ে।১০ এই শিক্ষা ব্যবস্থায় মুখস্থ-নির্ভর সাক্ষরতা অর্জনের যে ধারণার উদ্ভব ঘটে সেখানে শিক্ষার্থীর নিজস্বতার তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। সেই সময়ের প্রেক্ষিতেই আচরণবাদী (Behaviourism) শিখন শেখানো দৃষ্টিভঙ্গির উদ্ভব ঘটে। আচরণবাদী শিখন-শেখানো মতবাদের প্রবক্তা হিসেবে পাভলভ, থর্নডাইক, স্কিনারের নাম উল্লেখযোগ্য (Fosnot, 1996)। আচরণবাদী শিখন শেখানো দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শিক্ষার্থী কী শিখবে, কীভাবে শিখবে, কখন শিখবে, কোথায় শিখবে, কেন শিখবে তা আগে থেকে ঠিক করে দিতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর নিজস্ব চিন্তা, পছন্দ বা দৃষ্টিভঙ্গির তেমন কোন গুরুত্ব থাকেনা (Glasersfeld, 1995 eds. Steffe & Gale, 1995)। আচরণবাদ অনুযায়ী শিক্ষার্থীর কাঙ্ক্ষিত শিখন নিশ্চিত করার জন্য বলবর্ধক বা শাস্তি প্রদান করতে হয় (Fosnot, 1996)। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীর শিখন কখন, কীভাবে কিংবা কতবার আচরণ দিয়ে প্রকাশ পাবে এবং সেগুলো কীভাবে পরিমাপ করে শিক্ষার্থীর শিখনকে মূল্যায়ন করা হবে তাও আগে থেকে ঠিক করা থাকতে হবে। আচরণবাদপ্রসূত এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলেই মুখস্থনির্ভর, লিখিত পরীক্ষাভিত্তিক ও নম্বরভিত্তিক মূল্যায়ন, শিক্ষককেন্দ্রিক, একমুখী, তত্ত্বনির্ভর একটি শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ার প্রচলন ঘটে। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষকের মূল দায়িত্ব হল জ্ঞান বিতরণ করা এবং শিক্ষার্থীর প্রধান দায়িত্ব হল সেই জ্ঞান কোনরূপ পরিবর্তন ছাড়া মুখস্থ করে পুনরুৎপাদন করা। আচরণবাদনির্ভর এই কাঠামোবদ্ধ এবং অনমনীয় শিখন-শেখানো প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীর সৃষ্টিশীলতার পরিপন্থী এবং ব্যক্তির ব্যক্তিগত চাহিদা ও সম্ভাবনা পরিচর্যায় অপারগ। তবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পূর্বনির্ধারিত যান্ত্রিক আচরণিক প্রতিক্রিয়া লাভের জন্য আচরণবাদী শিখন শেখানো দৃষ্টিভঙ্গি বেশ কার্যকর, তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির গ্রহণযোগ্যতা পরবর্তীকালে হ্রাস পায়। তাছাড়া শিক্ষার্থীর বিকাশের বিভিন্ন স্তরে তার পারদর্শিতার মাত্রা নির্ধারণ করে শিখন- শেখানো প্রক্রিয়া নিরূপণ করা হত, যা পরিপক্বতাবাদ (Maturationism) হিসেবে পরিচিত (Fosnot, 1996)। শিখনপ্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের ধারণা শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ার মধ্যে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে। বিশেষ করে বর্তমানের দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য শুধু জ্ঞান অর্জন যথেষ্ট নয়। অর্জিত জ্ঞানকে পরিবেশ অনুযায়ী অভিযোজনের জন্য প্রয়োগ করার দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করাও জরুরি । কাজেই কোনো পূর্বনির্ধারিত আচরণ হুবহু অর্জন করা শিখনের উদ্দেশ্য নয়। বরং শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিবেশের অবিরাম মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে তার বৈশিষ্ট্য ও পারদর্শিতা এবং পরিবেশের উপাদান উভয়ের মধ্যেই পরিবর্তন ঘটে এবং এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থী পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ অর্জন করে। শিখন শেখানো প্রক্রিয়ার এই ধারণা গঠনবাদ/ জ্ঞানীয় বিকাশ তত্ত্ব (Constructivism/cognitivism) নামে পরিচিত, যার প্রবক্তা জ্যাঁ পিঁয়াজে ।

শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ায় গঠনবাদের ধারণা প্রাথমিক পর্যায়ে পরিপক্কতাবাদ দ্বারা প্রভাবিত ছিল, যার ফলে বিকাশের স্তর অনুযায়ী শিক্ষার্থীর শিখনের ধারা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরবর্তীকালে গবেষকগণ পর্যবেক্ষণ করেন যে, শিশুকে ভাব বিনিময় দক্ষতা এবং সৃষ্টিশীলতা, চিন্তাশীলতা, অভিজ্ঞতা, পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করার পরিবেশ দিতে পারলে সে শিখনের পরিপক্বতার ধারণাকেও অতিক্রম করে যেতে পারে । শিখনের এই উত্তরাধুনিক যুগের ধারণাই সামাজিক গঠনবাদ (Social Constructivism) হিসেবে পরিচিত। এর প্রধান প্রবক্তা হলেন রুশ দার্শনিক লেভ ভাইগটস্কি (Richardson, 1997; Fosnot, 1996)। এই মতবাদ অনুযায়ী শিশু জ্ঞান মুখস্থ করার বদলে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করবে। শিক্ষক এক্ষেত্রে জ্ঞান বিতরণকারীর ভূমিকায় না থেকে সহায়ক বা মেনটরের ভূমিকা পালন করবেন । এই শিখন শেখানো প্রক্রিয়ার ধারণা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা প্রকল্পভিত্তিক বা সমস্যাভিত্তিক শিখনের চর্চা করবে। আর নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা না করে সহযোগিতামূলক শিখনের চর্চা করবে। এর পাশাপাশি প্রতিটি শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত সক্ষমতা ও চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে শিক্ষার্থী কী শিখবে, কীভাবে শিখবে, কখন শিখবে, কোথায় শিখবে এবং কেন শিখবে তা তার নিজের পছন্দ ও পারদর্শিতা বিবেচনা করে নির্ধারিত হবে। যা ব্যক্তিগত ও স্ব-প্রণোদিত শিখনের সংমিশ্রণে পারস্পরিক যোগাযোগের ভিত্তিতে চর্চা করা হয়। কাজেই এই শিখন-শেখানো প্রক্রিয়া অনেক বেশি নমনীয় এবং এর মূল্যায়নও মুখস্থনির্ভর লিখিত পরীক্ষাভিত্তিক নয়; বরং পারদর্শিতা ও দৃষ্টিভঙ্গির বহুমুখী এবং বহু অংশীজনের অংশগ্রহণে একটি পরিপূর্ণ বিকাশের পোর্টফোলিও তৈরির মাধ্যমে করা হয়।

পরিবেশ ও প্রতিবেশের সঙ্গে মানুষের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে যে সহাবস্থান তার উপরে ভিত্তি করে মানুষের শিখন-প্রক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করে আরেকটি মতবাদ প্রবর্তিত হয়েছে, যা ব্রনফেনব্রেনারের Ecological System theory নামে পরিচিত। তাছাড়া বর্তমান যুগের প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল টেকনোলজির প্রয়োগ মানুষের শিখনের ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে পুরোপুরি। এর ফলে মানুষ এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে জ্ঞান বা তথ্য মুখস্থ করে ধারণ করেনা, বরং বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য যাচাই, সংশ্লেষণ ও বিশ্লেষণ করে নতুন জ্ঞান ও দক্ষতা সৃষ্টির মাধ্যমে জ্ঞানক্ষেত্রের সীমাবদ্ধতাগুলোকে পূরণ করে সমস্যা সমাধানের নতুন কৌশল বের করার চেষ্টা করে। এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানুষের শিখনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বাধীনতা (শিক্ষার্থীর প্রবণতা ও প্রেষণা অনুযায়ী শিখনের সময়, বিষয়বস্তু, শিখনের স্থান, উদ্দেশ্য, ও শিখনের প্রক্রিয়াতে বহুমাত্রিক নমনীয়তা নিশ্চিত করা) এবং শিক্ষার্থীর মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ স্থাপন করার ভিত্তিতে এক নতুন শিখন ধারণার উদ্ভব ঘটেছে, যা সংযোগবাদ (Connectivism) নামে পরিচিত (Siemens, 2004)। এই শিক্ষাক্রম রূপরেখায় সামাজিক গঠনবাদভিত্তিক শিখন শেখানো প্রক্রিয়া এবং সংযোগবাদকে প্রধান শিখন ধারণা ও প্রায়োগিক কৌশল হিসেবে অনুসরণ করা হয়েছে, যার মূল ভিত্তি হচ্ছে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন। অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনে যেসব প্রক্রিয়া ও কৌশল চর্চার সুযোগ রাখা হয়েছে সেগুলো হলো : আনন্দময় শিখন, পঞ্চ-ইন্দ্রিয়ের সমন্বিত ব্যবহারের মাধ্যমে ও কাজভিত্তিক বা হাতে কলমে শিখন, প্রজেক্টভিত্তিক, সমস্যাভিত্তিক এবং চ্যালেঞ্জভিত্তিক শিখন, সহযোগিতামূলক শিখন, অনুসন্ধানভিত্তিক শিখন, একক, জোড়া এবং দলীয় কাজসহ স্ব-প্রণোদিত শিখনের সংমিশ্রণ, বিষয়নির্ভর না হয়ে প্রক্রিয়া এবং প্রেক্ষাপট নির্ভর শিখন, অনলাইন শিখনের ব্যবহার ইত্যাদি।

অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনকে ফলপ্রসূ করতে শিক্ষকের ভূমিকাকেও স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়তামূলক, একীভূত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিখন পরিবেশ নিশ্চিত করবেন যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিখনের উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে নিজের শিখন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিজেই নিতে পারবে। শ্রেণিকক্ষের শিখন পরিবেশ হবে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক, গণতান্ত্রিক ও সহযোগিতামূলক। প্রতিটি শিক্ষার্থীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট, শিখন চাহিদা ও যোগ্যতা বিবেচনায় নিয়ে শিখনকার্যক্রম আবর্তিত হবে। শিক্ষার্থীরা বাস্তব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মাধ্যমে ভাসা ভাসা ধারণা ( Surface learning) থেকে গভীর শিখনের (Deep learning) দিকে ধাবিত হবে যা তাদের শিখনকে নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটের বাইরেও সাধারণীকরণ

করতে সাহায্য করবে। শিখনের এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রতিফলনমূলক শিখনে (Reflective learning) আগ্রহী করে তুলতে শিক্ষক সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করবেন। প্রচলিত ভূমিকার ঊর্ধ্বে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক হয়ে উঠবেন সহ-শিক্ষার্থী। প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিফলনমূলক শিখনের মধ্য দিয়ে তিনি নিজেও ঋদ্ধ হবেন।

অভিজ্ঞতামুলক শিখন পদ্ধতিতে শিক্ষক একজন সহায়তাকারী এবং শিক্ষার্থী সক্রিয় অংশগ্রহণকারীর ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষক শিক্ষার্থীর আগ্রহ, প্রবণতা, সবলতা বিবেচনা করে বিদ্যালয় ও বিদ্যালয়ের বাইরে অভিজ্ঞতামুলক শিখনে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন । এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী যেমন একা শিখতে পারে, তেমনি জোড়ায় ও দলীয়ভাবেও শিখতে পারে । শ্রেণিকাজে শিক্ষক ইচ্ছে করলে যেকোন একটি বা একাধিক কৌশলের সংমিশ্রণ করতে পারেন । এই শিখন প্রক্রিয়ায় বিষয়সংশ্লিষ্ট কোন বাস্তব জীবনধর্মী সমস্যা নির্ধারণ করে তা সমাধানের উপায় নির্ধারণ এবং তা প্রয়োগের অভিজ্ঞতা লাভের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিখন নিশ্চিত করা যায়। এছাড়া শিক্ষক প্রয়োজনে ডিজিটাল টেকনোলজির প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিখনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিনির্ভর স্বাধীনতা (শিক্ষার্থীর প্রবণতা ও প্রেষণা অনুযায়ী শিখনের সময়, বিষয়বস্তু, শিখনের স্থান, উদ্দেশ্য, ও শিখনের প্রক্রিয়াতে বহুমাত্রিক নমনীয়তা নিশ্চিত করা) এবং শিক্ষার্থীর মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ স্থাপন (ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ শিখন প্লাটফর্ম) করার ভিত্তিতেও শিখন সম্পন্ন করতে পারেন। শিক্ষক প্রয়োজনে বিষয়সংশ্লিষ্ট কোন

ইস্যু নির্ধারণ করে তা নির্দিষ্ট শর্ত ও সময়সীমা উল্লেখ করে সমাধানের চ্যালেঞ্জ দিতে পারেন। শিক্ষার্থী সেই শর্ত বিবেচনায় রেখে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপায় নির্ধারণ করে তা প্রয়োগের অভিজ্ঞতা লাভের মাধ্যমে শিখন নিশ্চিত করতে পারে। উল্লেখ্য যে, অভিজ্ঞতামুলক শিখনের প্রতিটি ধাপেই শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ চর্চা করা হয়। প্রয়োজন, প্রেক্ষাপট এবং বিষয় অনুযায়ী প্রচলিত এক বা একাধিক শিখন কৌশল সমন্বিতভাবে অনুসরণ করেও বিষয়ভিত্তিক এবং আন্তঃবিষয়ক যোগ্যতাসমূহ অর্জন করা যায় ।

শিক্ষা সমাজবিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় নয় । তাই অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের উপর এই শিক্ষাক্রমে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। ফলে শিক্ষকের দায়িত্ব শুধুমাত্র শ্রেণিকক্ষেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। শিক্ষার্থীর নিজস্ব প্রেক্ষাপটে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অর্জনের মধ্য দিয়ে যাতে শিখন অব্যাহত থাকে সেজন্য তার পরিবার, এমনকি সমাজকেও শিখন কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এই শিক্ষাক্রমে শিখন সময় নির্ধারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরের শিখন সময়কেও হিসেব করা হয়েছে। সে কারণে শিখন অভিজ্ঞতা পরিকল্পনায় শুধু শ্রেণিকক্ষের ভেতরেই নয়, বরং শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক পরিসরের সংশ্লিষ্টতাও বিবেচনা করা হয়েছে।

এই শিক্ষাক্রম রূপরেখা অনুযায়ী বিভিন্ন পর্যায় ও স্তরের শিখন-শেখানো কৌশল নির্ধারণ করা হবে শিক্ষার্থীর শিখন চাহিদা, বিকাশের পর্যায় ও আগ্রহের ওপর। প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত শিখন-শেখানো কৌশল প্রধানত হবে খেলা ও কাজভিত্তিক (Play and Activity based) এবং অনুসন্ধানমূলক। দলীয় শিক্ষণ এবং সময়াবদ্ধ শিক্ষণকে উৎসাহিত করা হবে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন খেলা ও কাজের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে শিখনে অংশগ্রহণ করবে এবং আনন্দের সঙ্গে জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি ও চেতনার উন্নয়ন ঘটাবে। শিখন- শেখানো পদ্ধতির অংশ হিসেবে প্রধানত শিখনকালীন মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিখন নিশ্চিত করা

হবে।

চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিখন-শেখানো কৌশলের পরিসর হবে আর একটু বৃহত্তর ও সমন্বিত। শিক্ষার্থীদের শিখনে খেলা ও হাতে-কলমে কাজের পাশাপাশি অনুসন্ধানমূলক শিখন ও সমস্যা সমাধানমূলক শিখনকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।

ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিখন-শেখানো কৌশল হবে আরো সংগঠিত। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের শিখন পরিচালিত হবে। সকল শ্রেণিতে বিভিন্ন শিখন-শেখানো কৌশল প্রয়োগের পাশাপাশি সুসংগঠিত অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন শেখানো কৌশলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উঁচু স্তরের চিন্তন দক্ষতা অনুশীলনের ব্যবস্থা থাকবে।

নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিখন-শেখানো কৌশল বাস্তবায়নে প্রতিটি বিষয়ের জন্য বিশেষায়িত শিক্ষকের ব্যবস্থা থাকবে। শিখন-শেখানো কৌশল হবে বিশেষত অভিজ্ঞতাভিত্তিক । শিখন-শেখানো কৌশল বিষয়বস্তুনির্ভর না হয়ে হবে প্রক্রিয়ানির্ভর। শিখন-শেখানো কৌশলে প্রয়োজন ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী হাতে কলমে শিখন, প্রজেক্ট এবং সমস্যাভিত্তিক শিখন, সহযোগিতামূলক শিখন, অনুসন্ধানভিত্তিক শিখন, স্ব-প্রণোদিত শিখনের সংমিশ্রণ ব্যবহার করা হবে, পাশাপাশি অনলাইন শিখনের ব্যবহারও উৎসাহিত করা হবে।

নির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে সকল শ্রেণিতে প্রয়োজন ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের শিখন কৌশল অনুসৃত হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে বিদ্যালয়েই তাদের শিখন সম্পন্ন করতে পারে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টিপাত করা হবে। প্রচলিত পদ্ধতির বাড়ির কাজ বা হোম-ওয়ার্ক না দিয়ে বিদ্যালয়েই শিখন সমাপ্ত করার প্রচেষ্টা নেওয়া হবে। তবে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের অংশ হিসেবে প্রকল্পভিত্তিক শিখন বা অ্যাসাইনমেন্ট জাতীয় কাজ প্রয়োজন অনুযায়ী বাড়িতে বা সামাজিক পরিসরে অনুশীলনের ব্যবস্থা থাকবে।

===000===

তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top