বাংলাদেশের শিশুদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থায় অভিষেক ঘটে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তির মাধ্যমে। এখান থেকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য প্রস্তুত হয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা সম্পন্ন করে একজন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণ করে বা কর্মজীবনে প্রবেশ করে । বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলা প্রয়োজন । কী কী যোগ্যতা অর্জন করলে শিক্ষার্থীরা এ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠবে সেগুলোকে বিবেচনার কেন্দ্রে রেখে প্রাক-প্রাথমিক হতে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের যথাযথ উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষার একটি পরিপূর্ণ ধারণায়ন (conceptualisation) বা ধারণা তৈরি করা জরুরি। যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষার সংজ্ঞার্থ, বৈশিষ্ট্য, কৌশল ও গুরুত্ব সম্পর্কে জেনে এবং অনুধাবন করে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তার যথাযথ প্রতিফলন ঘটানোর জন্য এ সংক্রান্ত বৈশ্বিক সংজ্ঞার্থ এবং দেশীয় পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাকে নিম্নলিখিতভাবে ধারণায়ন করা হয়েছে।
যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধারণাকে যেভাবে দেখা হয়েছে :
শিখন পরিবেশ | যেখানে শিক্ষার্থী নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে শিখন অভিজ্ঞতা এবং উপায় অনুসন্ধানের মাধ্যমে যোগ্যতাসমূহ অর্জন করে এবং নিজের মতো তার প্রয়োগ ও প্রদর্শন করে প্রতিনিয়ত ক্ষমতায়িত হতে পারে। |
শিখন সহায়তা | যেখানে শিক্ষার্থী তার নিজস্ব শিখন চাহিদা অনুযায়ী সময়মত পৃথক বা সমন্বিত সহায়তা প্রাপ্তির মাধ্যমে কার্যকরী শিখন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যোগ্যতাসমূহ অর্জন করতে পারে। |
শিখন অংশগ্রহণ | যেখানে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থী বিভিন্ন পথে এবং ভিন্ন ভিন্ন গতিতে শিখতে পারে। |
শিখন অগ্রগতি | যেখানে শিক্ষার্থীর অগ্রগতির ভিত্তি তার পারদর্শিতার রেকর্ড, শিখন সময় বা অংশগ্রহণের ধরন নয়। |
শিখন মূল্যায়ন | যেখানে মূল্যায়ন শিক্ষার্থীর জন্য ইতিবাচক ও অর্থপূর্ণ শিখন অভিজ্ঞতা যা সময়মতো শিখন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমভিত্তিক পারদর্শিতার প্রমাণের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। |
শিখন সমতা | যেখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমতা নিশ্চিত করার বিষয়টি শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষাক্রম ও তার বাস্তবায়ন এবং মূল্যায়নের মধ্যে নিবিড়ভাবে বিদ্যমান থাকে । |
শিখন প্ৰত্যাশা | স্বচ্ছ, সুনির্দিষ্ট, পরিমাপ ও রূপান্তরযোগ্য। |
যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষার্থী যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়….
- প্রত্যাশিত যোগ্যতা অর্জনের জন্য শিক্ষার্থী প্রয়োজনীয় শিখন পরিবেশ ও সহায়তা পায় এবং অর্জিত যোগ্যতাসমূহ বাস্তব সমস্যা সমাধানে কাজে লাগানোর সুযোগ পায় ।
- নিরাপদ ও নিজস্ব শিখন পরিবেশে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সর্বোচ্চ চেষ্টার সুযোগ পায় ।
- এখানে সকলের সংস্কৃতি ও মতামতের মূল্য দেয়ার ফলে শিক্ষার্থীর শিখনে দায়বদ্ধতা তৈরি হয় ।
- এখানে সে এমন যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ ও সহায়তা পায় যা তাকে স্বাধীনভাবে শিখনে উদ্বুদ্ধ করে।
- এখানে সমন্বিতভাবে যোগ্যতাসমূহের পারদর্শিতা অর্জনের সুযোগ পায় ।
- শিক্ষার্থী তার প্রযোজন অনুযায়ী যেকোনো স্থানে এবং যেকোনো সময়ে শেখার সুযোগ পায়, পারদর্শিতা প্রদর্শন করতে পারে এবং নিজের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারে।
- শিক্ষার্থী তার অগ্রগতি নিয়ে সময়মতো নির্দেশনা, সহায়তা ও ফলাবর্তন পায়।
- শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে মনোসামাজিক সহায়তা পায় যা তাকে শেখার ব্যক্তিগত পথ তৈরিতে সহায়তা করে।
- শিক্ষার্থীর শিখনের মূল্যায়ন হয় শিখন যোগ্যতা ও পারদর্শিতার উপর ভিত্তি করে এবং এর উদ্দেশ্য হল শিখন যোগ্যতা অর্জন করতে শিক্ষার্থীকে কোথায় কীভাবে কাজ করতে হবে তা জানার জন্য।
- শিক্ষার্থী পারদর্শিতার প্রমাণ দিয়ে পরবর্তী ধাপের শিখনে অগ্রসর হতে পারে।
যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষার সফল বাস্তবায়নের অনুঘটকসমূহ :
- শিক্ষাব্যবস্থা, কাঠামো, শিক্ষাক্রম, শিখন-শেখানো কৌশল ও মূল্যায়ন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত তাই সমন্বিত পরিবর্তন ও বাস্তবায়ন করা যেন কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়।
- সমতা বজায় রেখে শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন যেন শিখন অভিজ্ঞতা এবং প্রয়োজনীয় সহায়তার মধ্য দিয়ে সকল শিক্ষার্থী পূর্ণ অংশগ্রহণের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষ ও শ্রেণিকক্ষের বাইরের পরিবেশে শিখতে পারে ।
- শিক্ষার সুনির্দিষ্ট প্রত্যাশা অনুযায়ী যেন সকল শিক্ষার্থী শিখতে পারে তা নিশ্চিত করা এবং বাধাপ্রাপ্ত হলেও আবার নিজের মত করে আত্মবিশ্বাস নিয়ে শিখন-যোগ্যতা অর্জন করতে পারে এরূপ ব্যবস্থা রাখা।
- শিখন-চাহিদা অনুযায়ী উদ্ভাবনী ও কার্যকরী শিখন-পরিবেশ তৈরি করা যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো বিভিন্ন উপায়, প্রক্রিয়া ও সময় ব্যবহার করে শিখতে পারে।
- শিক্ষার্থীদের অর্জিত শিখন-যোগ্যতা যেন বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রয়োগের সুযোগ পায় তার ব্যবস্থা রাখা।
- শিখন যেকোনো সময়ে যেকোনো স্থানে অর্জিত হতে পারে তা নিশ্চিত করা।
- শিখন সহযোগিতামূলক এবং সামাজিকভাবে গ্রথিত করা যেন তা অনেক বেশি গভীর হয়।
শিক্ষা থেকে প্রত্যাশা স্বচ্ছ, সুনির্দিষ্ট, পরিমাপযোগ্য করা যেন উন্নত-শিখন সংস্কৃতি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা
===000===
তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021