২.৪.১ শিক্ষার্থীর কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা নির্ধারণের প্রেরণা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
চেতনা হলো আবেগিক ও সামাজিক বুদ্ধিমত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপট, সময় ও পরিস্থিতিতে ব্যক্তিক মূল্যবোধ, আবেগ, দৃষ্টিভঙ্গি, প্রবণতা, গুণাবলি, বৈশিষ্ট্য প্রভৃতির সমন্বয়ে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সে অনুযায়ী আচরণ করতে প্রেরণা যোগায়। সেই আলোকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শিক্ষাক্রম রূপরেখার সকল ধারণা নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রমের মূলভিত্তি হলো মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত চেতনা ও স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি।
এই শিক্ষাক্রম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও তার মূল ভিত্তিসমূহকে নিম্নবর্ণিতভাবে ধারণ করেছে :
সাম্য : ভিন্নতা, বৈচিত্র্য ও শ্রেণিনির্বিশেষে সবাইকে সম্মান ও গ্রহণ করে ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রেক্ষিত বিবেচনায় সকলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা এবং তা বজায় রাখাই হচ্ছে সাম্য।
মানবিক মর্যাদা : মানবিক মর্যাদা হচ্ছে প্রতিটি মানুষের সম্মান এবং আত্মমর্যাদা যা স্থান, কাল, পরিস্থিতিভেদেও অক্ষুণ্ণ থাকে । মানবিক মর্যাদা মানবাধিকারের মূলভিত্তি যার প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব এবং যা কোনোভাবেই স্থগিত করা যায় না। প্রতিটি মানুষের ন্যূনতম সম্মান এবং মর্যাদা নিশ্চিত করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনালব্ধ অঙ্গীকার ।
সামাজিক ন্যায়বিচার : মানবিক মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে মানবাধিকার, সংবিধান, আইন, ধর্ম ও সংস্কৃতির আলোকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সামাজিক সহাবস্থান নিশ্চিত করাই সামাজিক ন্যায়বিচার। শ্রেণি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, লিঙ্গ, সামাজিক, রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সকলের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অঙ্গীকার।
বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে নিম্নবর্ণিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে;
৮ । [(১) জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা- এই নীতিসমূহ এবং তৎসহ এই নীতিসমূহ হইতে উদ্ভূত এই ভাগে বর্ণিত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে ।]
জাতীয়তাবাদ
[৯। ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালী জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি। ]
সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তি
[১০। মানুষের উপর মানুষের শোষণ হইতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজলাভ নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে।]
গণতন্ত্র ও মানবাধিকার
[১১। প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে ১২[* * *] ১৩ [এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে]।
ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা
[১২ । ধর্ম নিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য
(ক) সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা,
(খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান,
(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার,
(ঘ) কোন বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন, বিলোপ করা হইবে।] ভবিষ্যত প্রজন্মকে দেশপ্রেমিক ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিতে অনুপ্রাণিত উদ্যোগী ও উৎপাদনক্ষম জনগোষ্ঠীতে রূপান্তর করা প্রয়োজন। একইসাথে আত্মপরিচয় বহাল রেখে অভিযোজনে সক্ষম বিশ্বনাগরিক হিসেবে প্রস্তুত করার জন্যও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। শিক্ষাক্রম রূপরেখায় যোগ্যতার বিভিন্ন উপাদানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিন্যস্ত করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021