পটভূমি
অন্যান্য বিষয় শেখার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হবে একই সঙ্গে অন্যান্য বিষয় শিখনের মাধ্যমেও বাংলা ভাষার ভিত্তি দৃঢ় হবে।
বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতার বিবরণী
প্রমিত বাংলা ভাষায় ভাব আদান-প্রদানের (শোনা, বলা, পড়া, লেখা, দেখা ও অনুভব করার) মৌলিক দক্ষতা অর্জন করতে পারা; বাংলা ভাষার মৌলিক দক্ষতা ব্যবহার করে শিখনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জ্ঞান অন্বেষণে সমর্থ হওয়া । সাহিত্যপাঠে আনন্দ লাভ করতে পারা; বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে বিভিন্ন মাধ্যমে সৃজনশীল ও শৈল্পিকভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারা এবং পরমতসহিষ্ণুতার সঙ্গে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কার্যকর ও কল্যাণমুখী যোগাযোগে সমর্থ হওয়া।
বিষয়ের ধারণায়ন
ভাষা সকল ধরনের যোগাযোগের মাধ্যম, একই সঙ্গে জ্ঞান ও চিন্তার বাহন। শিক্ষাতাত্ত্বিক দিক থেকে ভাষা শিখন-প্রক্রিয়া ও শিখন-শেখানো কার্যক্রমের প্রধান ভিত্তি। শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১-এ বাংলা বিষয়কে প্রধানত ভাষা ও যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে, সেই সঙ্গে অন্যান্য বিষয় শিখনের মাধ্যম হিসেবেও বিবেচনা করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী পরিবেশ, পরিস্থিতি ও পরিপ্রেক্ষিত অনুযায়ী যোগাযোগে পারদর্শী হয়ে উঠবে। রূপরেখায় ভাষা ও যোগাযোগ দক্ষতা অর্জনে ভাব গ্রহণ ও প্রকাশে শোনা, বলা, পড়া ও লেখার পাশাপাশি দেখা ও অনুভবকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা হয়েছে।
রূপরেখায় শিক্ষার্থীর ভাষাবোধ ও ভাষাপ্রয়োগকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ভাষাবোধ গড়ে ওঠে প্রধানত ইন্দ্রিয় সংবেদনা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিপ্রেক্ষিত এবং ভাষা-সংগঠন বা ব্যাকরণ প্রভৃতির আন্তঃসম্পর্কসূত্রে। ভাষাবোধের দৃঢ় ভিত্তির ওপর নির্ভর করে ভাষার যথাযথ, শুদ্ধ ও পরিশীলিত প্রয়োগ অর্থাৎ ভাষা এক দিকে গ্রহণমূলক, অন্য দিকে প্রকাশমূলক । দেখা, শোনা, অনুভব, পড়া প্রভৃতির মাধ্যমে ভাষাভাষীর মধ্যে গড়ে ওঠে গ্রহণমূলক পারদর্শিতা। সেই সঙ্গে বলা, লেখা, ইশারা, স্পর্শ, সক্রিয় শ্রবণ প্রভৃতির মাধ্যমে গড়ে ওঠে ভাষার প্রকাশমূলক পারদর্শিতা। শিক্ষাক্রম রূপরেখায় বিকল্প গ্রহণ ও বিকল্প প্রকাশকেও বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা হয়েছে। কেননা সকল শিক্ষার্থীর বুদ্ধিমত্তা ও আবেগিক বুদ্ধিবৃত্তিতে (emotional intelligence) বৈচিত্র্য রয়েছে। শিক্ষার্থীরা অনুভব, স্পর্শ, ঘ্রাণ, পর্যবেক্ষণ প্রভৃতির মাধ্যমে বিচিত্রভাবে বাস্তব বিশ্বকে অনুভব ও অনুধাবন করে থাকে; এ কারণে তাদের প্রকাশও হয়ে থাকে ভিন্ন মাধ্যম ও প্রক্রিয়ায়।
ভাষা ও যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বাংলা ভাষার ৬টি প্রধান প্রয়োগ-ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়েছে :
১ . ভাষিক যোগাযোগ;
২. বাচনিক উৎকর্ষঃ
৩. শিখন-শেখানো কার্যক্রম:
৪. প্রায়োগিক ও পেশাগত যোগাযোগ;
৫. মানবিক চিন্তন
৬. সৃষ্টিশীল ও মননশীল প্রকাশ।
ভাষিক যোগাযোগ বলতে বুঝানো হয়েছে বাচনিক ও অ-বাচনিক বিভিন্ন প্রক্রিয়ার যোগাযোগ ও সংজ্ঞাপনকে । শিক্ষার্থীর বলার ধারাক্রমিক দক্ষতা বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করা হয়েছে বাচনিক উৎকর্ষ হিসেবে। প্রায়োগিক ও পেশাগত যোগাযোগ বলতে বোঝানো হয়েছে ব্যবহারিক ও পেশাগত জীবনে বাংলা ভাষার যথাযথ প্রয়োগকে; মূলত বিভিন্ন পরিসর এবং পেশাগত জীবনে বাংলা ভাষা প্রয়োগের প্রয়োজনীয় দক্ষতা তৈরি করে দেবে বাংলা বিষয়। বাংলা ভাষার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ-ক্ষেত্র হয়ে উঠবে শিখন-শেখানো কার্যক্রম; সকল বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জিত হবার প্রধান মাধ্যম বাংলা ভাষা। তাই বাংলা ভাষায় দক্ষতা বৃদ্ধি অন্যান্য বিষয়ের জ্ঞান-অর্জন দক্ষতাকে বৃদ্ধি করবে, শিখন-শেখানো কার্যক্রম হয়ে উঠবে সহজতর ও সহজবোধ্য। বর্তমান শিক্ষাক্রমে বাংলাকে বিবেচনা করা হয়েছে শিক্ষার্থীর মানবিক চিন্তন দক্ষতার প্রয়োগ ও বৃদ্ধির ভাষা হিসেবে। রূপরেখায় চিন্তাকে দেখা হয়েছে মানবিক, যৌক্তিক, সহনশীল ও ইতিবাচকভাবে। চিন্তন-দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ভাষাশৈলিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যেমন : বর্ণনামূলক, তথ্যমূলক, বিশ্লেষণাত্মক ইত্যাদি। সৃষ্টিশীল ও মননশীল প্রকাশ বলতে বোঝানো হয়েছে শিক্ষার্থীর সৃজন ও যুক্তিশীল কর্মকাণ্ডকে; এই প্রকাশ হতে পারে লিখন, বাচন, অংকন, সৃজন, সংজ্ঞাপননির্ভর। সামগ্রিকভাবে বাংলা বিষয় হয়ে উঠবে যোগাযোগ, সংজ্ঞাপন, শিখন-শেখানো কার্যক্রম, চিন্তন ও প্রকাশের প্রধান ভাষা মাধ্যম ।
===000===
তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021