City of Education

বিষয়ের ধারণায়নঃইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (History and Social Sciences)

বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতার বিবরণী

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিশ্বে নিজের অবস্থান, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়, প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান ও কাঠামো পর্যালোচনা করে পরিবর্তনশীলতায় ইতিবাচক ভূমিকা এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা অনুশীলন করে একটি উন্নত, নিরাপদ ও টেকসই বাংলাদেশ ও বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশ্বনাগরিক হিসাবে ভূমিকা রাখতে পারা।

বিষয়ের ধারণায়

ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একবিংশ শতাব্দীর একজন বিশ্বনাগরিক হিসেবে ভূমিকা রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক যোগ্যতা সৃষ্টি হবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে। প্রকৃতিতে ও সমাজে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা পরিবর্তনের কার্যকারণ ও প্রভাব অনুসন্ধান করতে পারবে। যৌক্তিক অনুসন্ধান পদ্ধতির প্রাথমিক ধারণা কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামোর আন্তঃসম্পর্ক বিষয়ে অনুসন্ধানের যোগ্যতা অর্জন করবে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জেনে সচেতন নাগরিক হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের মূলনীতির আলোকে সামাজিক ন্যায়বিচার নীতি ধারণ করে সম্পদের টেকসই ব্যবহার ও পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখতে পারবে। ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়টি ক্রস-কাটিং ইস্যু হিসেবে রূপরেখায় নির্ধারিত দশটি মূল শিখনক্ষেত্রের সবগুলোরই নির্ধারিত যোগ্যতা অর্জনে ভূমিকা রাখলেও, এতে মূলত সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু এবং জীবন ও জীবিকা শিখন-ক্ষেত্রগুলো অধিক গুরুত্ব পেয়েছে। বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রেও এসকল শিখন-ক্ষেত্রের যোগ্যতাসমূহ ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে।

সামাজিক বিজ্ঞানের বৃহত্তর পরিসরে যে সকল বিষয় যেমন- ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, মনোবিজ্ঞান, আইন ইত্যাদি অধ্যয়ন করা হয়, সেগুলোর মূল বিষয়বস্তুসমূহ বিশ্লেষণ করে আত্মপরিচয়, প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামো, পরিবর্তনশীলতায় ভূমিকা এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা – এই চারটি মূল ডাইমেশন নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এই চারটি ডাইমেনশনকে ভিত্তি করেই বিষয়ের ধারণায়ন করা হয়েছে।

ধারণায়ন অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী সামাজিক বিজ্ঞান অধ্যয়নের মাধ্যমে প্রকৃতি ও সমাজের বিভিন্ন দৃশ্যমান ও বিমূর্ত কাঠামো এবং এসব কাঠামোর কাজ ও মিথস্ক্রিয়া বিষয়ে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করবে। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামোর মিথষ্ক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে নিজস্ব ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃ তিক, ভৌগলিক ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সে তার আত্মপরিচয় অনুসন্ধান করতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি সে অনুধাবন করবে যে চারপাশের সকল প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামো এবং তাদের ভূমিকা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। এ পরিবর্তনশীলতার ফলে নিয়তই কিছু সম্ভাবনা এবং ঝুঁকি তৈরি হয়, যা প্রকৃতি ও সমাজকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। একজন শিক্ষার্থী এসব ঝুঁকি মোকাবিলা করে সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে প্রকৃতি ও সমাজের পরিবর্তনশীলতায় ইতিবাচক ভূমিকা পালনের যোগ্যতা অর্জন করবে। মানবসভ্যতার বিকাশে সম্পদ একটি অপরিহার্য উপাদান। কাজেই টেকসই উন্নয়নের জন্য পৃথিবীর সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা জরুরি। তাই সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে সম্পদ ব্যবস্থাপনা একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। আলোচ্য চারটি ডাইমেনশনের আলোকে একজন শিক্ষার্থী যে যোগ্যতাসমূহ অর্জন করবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে তা সভ্যতা ও সংস্কৃতি, সামাজিক সম্পর্ক, পরিবেশ ও প্রতিবেশ, টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্য এসকল ক্ষেত্রে চর্চা করার মাধ্যমে সহযোগিতা, সহনশীলতা, সহমর্মিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, দায়িত্বশীলতা, সংবেদনশীলতা প্রভৃতি মূল্যবোধ ও নৈতিকতা অর্জন করতে পারবে। আর এই সবকিছুর মধ্য দিয়ে যে যোগ্যতা অর্জিত হবে তার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী হয়ে উঠবে জাতীয়তাবোধসম্পন্ন বিশ্বনাগরিক।

ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের যোগ্যতাসমূহ নির্ধারণ করার জন্য যে চারটি ডাইমেনশন বিবেচনায় নেয়া হয়েছে তাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে উল্লেখ করা হয়েছে :

আত্মপরিচয়

ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে নিজের পরিচয় নির্মাণ করা ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের একটি মূল প্রতিপাদ্য হওয়ায় সকল বিষয়কে সমন্বিতভাবে আয়ত্ত করার জন্য একে একটি ডাইমেনশন হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামো

প্রাকৃতিক সামাজিক বিজ্ঞানের সকল বিষয়েরই কেন্দ্রীয় একটি বিষয় হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কাঠামোর বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান করা। প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের যোগ্যতা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তাই কাঠামোকে একটি ডাইমেনশন হিসেবে ধরা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, প্রাকৃতিক কাঠামো বলতে সাধারণত প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান ও ব্যবস্থা যেমন : নদী, সাগর, মহাসাগর, পর্বতমালা, মহাদেশ প্রভৃতিকে বোঝানো হয়ে থাকে। অন্য দিকে, সামাজিক কাঠামো বলতে সাধারণত পরিবার, ধর্ম, রীতিনীতি, সংস্কৃতি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান প্রভৃতিকে বোঝানো হয় ।

পরিবর্তনে ইতিবাচক ভূমিকা

প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামো পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার ভিত্তিতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল । এই পরিবর্তনশীলতার বস্তুনিষ্ঠ প্যাটার্ন অনুসন্ধান করা সামাজিক বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপাদ্য বিষয়। যে কোন পরিবর্তনের ফলেই কিছু সম্ভাবনা ও ঝুঁকি তৈরি হয়। এই ঝুঁকি ও সম্ভাবনা বিবেচনা করে যথাযথ ইতিবাচক ভূমিকা নির্ধারণের যোগ্যতা অর্জন সামাজিক বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। এ বিবেচনায় পরিবর্তনে ইতিবাচক ভূমিকা নির্ধারণকে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের যোগ্যতা নির্ধারণের একটি ডাইমেনশন হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ

উন্নয়নের জন্য সম্পদ একটি অপরিহার্য বিষয়। প্রকৃতির সম্পদ সীমিত। প্রকৃতিকে ব্যবহার করে সম্পদের উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ ও সংরক্ষণ অর্থাৎ সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণকে তাই ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের একটি ডাইমেনশন হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

===000===

তথ্যসূত্র : শিক্ষাক্রম রুপরেখা-2021

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top