&&& অনলাইন জন্ম নিবন্ধন কি ও কেন &&&&
১. জন্ম নিবন্ধন কী? (এ সংক্রান্ত আইন/ নীতিমালা)
জন্মের পর সরকারি খাতায় প্রথম নাম লেখানোই জন্ম নিবন্ধন। একটি শিশুর জন্ম নিজ দেশকে, বিশ্বকে আইনগতভাবে জানান দেয়ার একমাত্র পথ জন্মের পর জন্মনিবন্ধন করা। নবজাতকের একটি নাম ও একটি জাতীয়তা নিশ্চিত করতে এটি হচ্ছে প্রথম আইনগত ধাপ। জন্ম নিবন্ধন প্রতিটি শিশুসহ বয়স্কদেরও একটি অধিকার। এটি নাগরিক অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। পৃথিবীতে একটি শিশু জন্মানোর পর রাষ্ট্র থেকে প্রথম যে স্বীকৃতি সে পায় সেটি হলো জন্ম নিবন্ধন। দেশের অন্যান্য নাগরিকের সাথে সে সমান অধিকারে এক কাতারে সামিল হয় এই জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে। প্রথম জন্ম নিবন্ধনের অধিকার জাতিসংঘের শিশু সনদে (Convention on the Rights of the Child – CRC) স্পষ্ট উল্লেখ আছে। জন্ম নিবন্ধনের মধ্যদিয়ে একটি শিশু একটি ‘নাম’ লাভ করে যা সারাজীবন তাকে একটি পরিচিতি দেয়। জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে একটি শিশু প্রথম নাগরিকত্বও লাভ করে।
জন্মসনদ অত্যাবশ্যকীয় করার লক্ষ্যে সরকার নতুন করে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন ২০০৪ প্রণয়ন করে। জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, শিশু অধিকার সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে আইনটি ৩ জুলাই. ২০০৬ থেকে কার্যকর করা হয়েছে।
জন্ম নিবন্ধন আইনে বলা হয়েছে, বয়স, জাতি-গোষ্ঠি, ধর্ম-কিংবা জাতীয়তা সকল নির্বিশেষে বাংলাদেশে জন্ম গ্রহণকারী প্রত্যেকটি মানুষের জন্য জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষে জন্মনিবন্ধন কর্তৃপক্ষ নিবন্ধনকারীকে একটি সার্টিফিকেট দেবেন। সরকার ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক জন্মনিবন্ধন কৌশল প্রণয়ন করেছে যা চলতি ২০১০ সালের শেষ নাগাদ চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
২. জন্মনিবন্ধনের গুরুত্ব কী? কেন জন্ম নিবন্ধন করতে হবে?
জন্মনিবন্ধনের গুরুত্বঃ
২০০৯ সাল থেকে ১৬টি মৌলিক সেবা পেতে জন্মসনদ প্রয়োজন হবে। বয়স প্রমানের জন্য নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রে জন্ম সনদ বা উহার সত্যায়িত ফটোকপি ব্যবহার করতে হবে।
এর মধ্যে আছে-
০১ পাসপোর্ট ইস্যু;
০২ বিবাহ নিবন্ধন;
০৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি;
০৪ সরকারী, বেসরকারী ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগদান;
০৫ ড্রাইভিং রাইসেন্স ইস্যু;
০৬ ভোটার তালিকা প্রণয়ন;
০৭ জমি রেজিষ্ট্রেশন;
০৮ ব্যাংক একাউন্ট খোলা;
০৯ আমদানী বা রপ্তানী বা উভয় লাইসেন্স প্রাপ্তি;
১০ গ্যাস, পানি, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তি;
১১ করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) প্রাপ্তি;
১২ ঠিকাদারী লাইসেন্স প্রাপ্তি;
১৩ বাড়ির নক্সা অনুমোদন;
১৪ গাড়ি রেজিষ্ট্রেশন;
১৫ ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি;
১৬ জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি;
জন্মসনদ থাকলে বাল্যবিবাহের সুযোগ থাকবে না। শিশুশ্রম বন্ধ হবে। ১ জানুয়ারি, ২০০৯ থেকে উল্লিখিত যে কোন সেবা পেতে জন্মসনদ দেখাতে হচ্ছে।
[বি: দ্র: এই আইনের বিধান বা তদধীন প্রণীত বিধি লংঘনকারী নিবন্ধক বা কোন ব্যক্তি অনধিক ৫০০.০০ (পাঁচশত) টাকা অর্থদন্ডে অথবা অনধিক দুইমাস বিনাশ্রম কারাদন্ডে অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন। – ধারা-২১, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪]
কেন জন্ম নিবন্ধন করতে হবেঃ
জন্ম নিবন্ধনের একটি তাৎপর্য আছে। জন্ম নিবন্ধন হলো একটা মানুষের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। রাষ্ট্র এইভাবে স্বীকার করছে যে, হ্যাঁ,তুমি শিশু রূপে এ রাষ্ট্রের একজন ভবিষ্যৎ নাগরিক হয়ে এসেছো। তোমাকে এ রাষ্ট্রের স্বীকৃত নাগরিকের মর্যাদা ও সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। তোমাকে স্বাগতম।
সুতরাং ভবিষ্যতে রাষ্ট্র থেকে যেকোনো সুযোগ-সুবিধা পেয়ে পূর্ণাঙ্গ ও প্রতিষ্ঠিত মানুষ হওয়ার প্রয়োজনে জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন রয়েছে। জন্ম নিবন্ধন না করালে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া যায় না। মর্যাদা পাওয়া যায় না। সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না। আইনগত সমস্যার সমাধান করা যায় না ইত্যাদি । এসব কারণে জন্ম নিবন্ধন করতে হবে।
৩. জন্ম নিবন্ধন করলে কী কী সুবিধা হয়? না করলে কী কী অসুবিধা হয়?
জন্ম নিবন্ধন করলে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে সুবিধা হয়ঃ
জন্ম নিবন্ধন করা থাকলে একজন শিশু বা একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ বহু ধরনে সুবিধা পেতে পারেন। চাহিদামতো প্রকৃত বয়স প্রমাণ করা যায় জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র দিয়ে। যেমন-
শিশুদের স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় প্রকৃত বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র জমা দিতে হয়। না হলে স্কুলে ভর্তি করানো যায় না।
বিদেশ ভ্রমন করতে হলে আমাদের পাসপোর্ট করতে হয়। পাসপোর্ট করতে গেলেও প্রকৃত বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র জমা দিতে হয়। না হলে পাসপোর্টই করা যায় না।
নতুন ভোটার হতে হলে বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হয়। এ বয়স প্রমাণের জন্যও জন্মনিবন্ধন সনদ প্রয়োজন।
সরকারী-বেসরকারী সব ধরনের চাকুরীর ক্ষেত্রে বয়স প্রমাণের জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ প্রয়োজন।
বিয়ে করতে গেলেও জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। কারণ ছেলের বয়স ২১ বছর ও মেয়ের ১৮ বছর পূর্ণ না হলে কাজী বিয়ে পড়ান না। সেটা আইনসঙ্গতও নয়। সুতরাং জন্ম নিবন্ধন সনদ না হলে বিয়েতেও বাধা আসে।
শিশুর প্রকৃত বয়স নির্ণয় করা যায় শুধুমাত্র তার জন্ম নিবন্ধন সনদ থেকে। তাই আদালতেও অনেক সময় শিশুদের বিরম্নদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ থেকে সহজে খালাস করা যায় একমাত্র জন্ম নিবন্ধন সনদের সাহায্যে।
মৌলিক জনসংখ্যা তথ্য জানা যায় জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রমের ফলাফল থেকে। তাই জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ও এগুলোর মনিটরিং এর ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ যথেষ্ট সহায়তা করে।
শিশুসহ সকল নাগরিকের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র থাকা একটি মর্যাদার বিষয়। এ সনদ একজন মানুষকে রাষ্ট্রের গর্বিত নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং পারস্পরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতেরও ব্যবস্থা করে।
জন্ম নিবন্ধনকৃত শিশুরা রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে বেড়ে উঠতে পারে এবং দারিদ্র্য মুক্তির পথ খুঁজে পায়। তারা অন্যায়ভাবে কোনো ব্যক্তিবিশেষ বা সমাজের কোনো গোষ্ঠি দ্বারা শোষণ, লাঞ্জনা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বা পাচার থেকে রেহাই পায়।
জমি-জমা ক্রয় ও বিক্রয়ের সময়ও জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়।
জটিল কোনো চিকিৎসা দেয়ার সময়ও (অপারেশন, থেরাপি), জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়।
সরকারী সুযোগ-সুবিধা যেমন শিশু খাদ্য, ফ্রি চিকিৎসা, বয়স্ক ভাতা, খাসজমি ও জলমহল বরাদ্দ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন।
ব্যবসা বাণিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও একজন ব্যবসায়ীর জন্ম সনদ প্রয়োজন হয়।
জন্ম নিবন্ধন না করলে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে সমস্যা বা অসুবিধা হয়
জন্ম নিবন্ধন না করালে আধুনিক রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে যেসব সমস্যা হয় তা নিম্নরুপঃ-
শিশু হিসেবে শিশুদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয়। যেমন- মেধাবী হওয়া সত্বেও ভালো একটা স্কুলে ভর্তি হওয়া যায় না। সঠিক সময়ে সঠিক ও উন্নতমানের চিকিৎসা পাওয়া যায় না।
নিরাপত্তাসেবা থেকে বঞ্চিত হতে হয় শিশুদের। আদালতে মিথ্যা অভিযোগ প্রমাণের জন্যও প্রকৃত বয়স প্রমাণ করতে না পারার কারণে অনেক শিশুকে বছরের পর বছর জেল বা হাজতে থাকতে হয়।
পাসপোর্ট করা যায় না। তখন প্রয়োজন সত্বেও বিদেশে যাওয়া যায় না।
ভোটার হওয়া যায় না। তখন রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি নির্বাচনে নিজের পছন্দ/ অপছন্দ প্রয়োগ করা যায় না।
যোগ্যতা সত্বেও ভালো চাকুরীতে যোগদান করা যায় না।
বিয়ের মতো সামাজিক কাজেও বাধা আসে।
রাষ্ট্র জনগণের জন্য প্রয়োজনমত সেবা দিতে পারে না।
জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকায় শিশুরা লেখাপড়া থেকে দূরে ছিটকে পড়ে বিপদগামী হয়। পরে সমাজের বোঝা হয়ে পড়ে।
জটিল চিকিৎসা নেয়া যায় না। তখন অনেক সময় জীবনহানিও ঘটে।
জমি-জমা ক্রয়-বিক্রয় করা যায় না।
সরকারী-বেসরকারী সেবা ও সম্পদের বরাদ্দ পাওয়া যায় না।
ব্যবসা-বাণিজ্য ভালোভাবে করা যায় না।
৪. কখন জন্ম নিবন্ধন করতে হয়?
আইন অনুসারে সদ্যজাত শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক। শিশু জন্মের ২ বছরের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন না করালে বাবা-মায়ের জন্য জরিমানা আছে। বয়স্ক ও শিশু উভয়ের বেলায় জন্ম নিবন্ধন এর জন্য মানুষকে উৎসাহিত করতে বিনা ফিতে সারাদেশে সরকার জন্ম নিবন্ধন কাজ করেছে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কোনরকম ফি ছাড়া জন্ম নিবন্ধন করার সুযোগ দেয়া হয়। ব্যাপক সংখ্যক মানুষ ঐ সময় জন্ম নিবন্ধন করেছে। কিন্তু তার পরেও ১৮ বছর এর নিচে এমন বহু শিশুকে জন্ম নিবন্ধন করানো সম্ভব হয়নি ঐ সময়ের মধ্যে। ঐ কারণে এ সময় বাড়ানো হয়েছিল ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে দেশের অধিকাংশ শিশু জন্ম নিবন্ধনের আওতায় এসেছে। জুনের পর জন্মনিবন্ধনের জন্য সরকার একটি ফি ধার্য করেছে। তবে ২ বছর পর্যন্ত শিশুদের জন্মনিবন্ধন যেকোন সময় বিনা ফিতে করানো যাবে। শুধু ২ বছরের বেশি সময় পার হলে এই ধার্যকৃত ফি দিতে হবে।
জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ১৮ বছরের উর্ধব ব্যক্তিদের জন্য ৫০ টাকা ফি দিতে হয়। জন্ম তারিখ থেকে ২ বছর পর জন্ম নিবন্ধন করতে ইউনিয়ন পরিষদদ ও পৌরসভা এলাকায় প্রতি বছরের জন্য ৫ টাকা এবং সিটি কর্পোরেশন ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় প্রতি বছরের জন্য ১০ টাকা ফি দিতে হয়। জন্ম সনদের ইংরেজী কপির জন্য ইউনিয়ন পরিষদদ ও পৌরসভা এলাকায় ৫০ টাকা এবং সিটি কর্পোরেশন ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় ১০০ টাকা ফি লাগে। জন্ম সনদের বাংলা কপির জন্য ইউনিয়ন পরিষদদ ও পৌরসভা এলাকায় ২০ টাকা এবং সিটি কর্পোরেশন ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় ৪০ টাকা ফি লাগে। তথ্য সংশোধনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা এলাকায় ১০ টাকা এবং সিটি কর্পোরেশন ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় ২০ টাকা ফি লাগে।
৫. জন্ম নিবন্ধনের জন্য কোথায়, কিভাবে আবেদন করতে হয়? জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি কাগজপত্র ও কত টাকা ফি লাগে?
কোথায় জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে হয়
জন্ম নিবন্ধনের জন্য আমরা যেসব জায়গায় যাবো তা নিম্নরুপঃ
১। ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়
২। পৌরসভা
৩। সিটি কর্পোরেশন অফিস
৪। সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ওয়ার্ড কমিশনারের অফিস
জন্ম নিবন্ধনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তঃ
জন্ম নিবন্ধন এর কাজ করার জন্য সরকার, ইউনিসেফ এর সহযোগিতায় জাতীয়ভাবে সরকারি -বেসরকারী প্রতিষ্ঠান নিয়ে একটি নেটওয়ার্ক (মোর্চা) তৈরি করেছিল ২০০৪ সালে। এর মধ্যে তাদের দায়িত্ব পালন প্রায় শেষ পর্যায়ে। তাই জন্ম নিবন্ধনের জন্য এখন আপনাকে যেতে হবে নিম্নরুপ ব্যক্তিবর্গের কাছে –
১। ইউনিয়ন পরিষদ এর মেম্বার
২। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান
৩। পৌরসভার কমিশনার
৪। পৌরসভার চেয়ারম্যান
৫। সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার
৬। সিটি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান
জন্ম নিবন্ধন কিভাবে করতে হবে? (নীতিমালা)
ব্যাক্তি যে এলাকায় বসবাস করেন যেমন- শিশুসহ বয়স্ক নাগরিক যারা এর আগে জন্ম নিবন্ধন করেনি তারা প্রথমে জন্ম নিবন্ধনের একটি ফরম সংগ্রহ করবেন। আপনি যদি গ্রামে বাস করেন তাহলে ফরম পাবেন ইউনিয়ন পরিষদ অফিসের সেক্রেটারীর কাছে। আর শহরে বাস করলে পৌরসভার কমিশনার ও চেয়ারম্যান এর কাছে। সিটি কর্পোরেশন হলে বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিশনারের কাছে এবং সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত অফিস বা জন্মনিবন্ধন শাখায়ও ফরম পাওয়া যাবে।
ফরমটি ভালো করে পড়ে বুঝে তা পূরণ করতে হবে। প্রয়োজনে বুঝতে ও পূরন করতে অসুবিধা হলে যে অফিস থেকে ফরম নিচ্ছেন সে অফিসের কারো সহযোগিতা নিন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
জন্ম যদি কোন হাসপাতাল/ক্লিনিকে হয় তাহলে হাসপাতাল/ক্লিনিকের সার্টিফিকেট/ছাড়পত্র/এস.এস.সি সনদ এর ফটোকপি/ পাসপোর্টের ফটোকপি/আইডি কার্ডের ফটোকপি এবং এলাকার জনপ্রতিনিধী যেমন-ওয়ার্ড কমিশনার/ ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভার চেয়ারম্যান কর্তৃক নাগরিকত্ব সনদ এর ফটোকপি।
জমা দেয়ার সময় জন্ম সনদ পত্র কবে তারা দেবে এরকম একটি সম্ভাব্য তারিখ লিখিত কূপন দেবে আপনাকে। কুপনটি সংগ্রহে রাখতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে বার্থ রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট নিয়ে আসবেন। বার্থ রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট একটি শক্ত কাগজ (আর্ট পেপার) যেটার উপরে আপনার নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান, পিতা-মাতার নাম সহ যাবতীয় তথ্য ছাপানো আছে। নিচে সংশিষ্ট অফিসারদের স্বাক্ষর আছে। এটি একটি সরকারী দলিল। এটি যত্নসহকারে ট্রাংক, বাক্স বা আলমারীর মধ্যে সংগ্রহ করবেন। নবজাত শিশুর জন্ম নিবন্ধন এর ক্ষেত্রে আপনি শিশু জন্মের পর একজন বা দুজন স্বাক্ষীসহ ৭ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন যেসকল অফিসে করায় সেখানে খবর দেবেন। তারা শিশুর নাম, পিতা-মাতার নাম, বয়স, লিঙ্গ, (ছেলে না মেয়ে) জন্মস্থান সবকিছু লিখে রাখবে। এরপর আপনার দায়িত্ব শেষ। কবে তারা আপনার শিশুটির বার্থ সার্টিফিকেট দেবে তা লিখে একটি কুপন দেবে আপনাকে। এবার কূপনটি সংগ্রহ করুন। এবং নির্দিষ্ট তারিখে গিয়ে বার্থ সার্টিফিকেট নিয়ে আসুন। আপনার শিশুর যদি কোনো ক্লিনিক হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জন্ম্ হয় তাহলে যেখানে জন্ম হয়েছে তাদের কাছ থেকে একটি জন্ম সনদ বা বার্থ সার্টিফিকেট নিন। এবং এটি শিশু জন্মের খবর যেখানে দিচ্ছেন সেখানে এর ফটোকপি জমা দিন। এ ধরনের সার্টিফিকেট দিলে আর স্বাক্ষী হিসেবে দ্বিতীয় বা তৃতীয় কাউকে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। ফরম পূরণ করে নির্ধারিত ফি সহ জমা দিতে হবে ঐ অফিসেই । ৩ ডিসেম্বর ২০০৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত ১৮ বছরের নীচে শিশু-কিশোরদের জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য কোন ফি লাগেনি। ১৮ বছরের উর্ধ্বের সকল ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য সরকার ৫০ টাকা হারে ফি ধার্য করেছে।
এ ব্যাপারে দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তি/ প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পালন না করলে করণীয় (অভিযোগ দায়ের/ তথ্য না দেয়া/ না পেলে করণীয় )
জন্ম নিবন্ধনের কাজে দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন না করলে বা দায়িত্ব পালনে অবজ্ঞা বা অবহেলা করলে আমরা তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারি। এক্ষেত্রে দেশে তথ্য অধিকার আইনও হয়েছে। এ আইন অনুযায়ী যেকোন বিষয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান যদি তথ্য না দেয় বা তথ্য সংক্রান্ত সহযোগিতা না করে তবে সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উপরের প্রতিষ্ঠানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া যাবে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার এর কাছে জন্ম নিবন্ধনের ফরম পাওয়া না গেলে বা তিনি দিতে গড়িমসি করলে চেয়ারম্যানকে জানাতে হবে। চেয়ারম্যান না দিতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে জানাতে হবে। তিনি ব্যর্থ হলে এলাকার এমপিকে জানাতে হবে। একইভাবে শহর এলাকায় ওয়ার্ড কমিশনার না পারলে পৌরসভা রা সিটি কর্পোরেশন চেয়ারম্যান কে জানাতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ
১। জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত বাংলাদেশ গেজেট
২। অগ্রগতি প্রতিবেদনঃ জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম, ইউনিসেফ
৩। দি স্টেট অব ওয়ার্ল্ড চিল্ড্রেন,ইউনিসেফ (বিশেষ সংখ্যা)
৪। বার্ষিক প্রতিবেদন, প্যান বাংলাদেশ, ২০০৪, ২০০৫, ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯
এই কনটেন্টটির মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন এর প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা যাবে।